গল্পের নাম: "আলোর পথে ফারহান"
ফারহান তখন মাত্র ১০ বছর বয়সী একটি ছেলে। বাবাকে কখনো সে চোখে দেখেনি। মা দিনমজুরের কাজ করে কোনোমতে দুবেলা খাবার জোগাড় করতেন। কখনো ভাত, কখনো শুধু লবণ-ভাতে দিন কাটত। স্কুলের কথা ভাবার সময় বা সুযোগ কোনোদিন আসে না ওর জীবনে। ঢাকার এক বস্তিতে গলির মধ্যে অন্য বাচ্চাদের স্কুল ড্রেস পরে যেতে দেখে ফারহান মাঝে মাঝে থমকে দাঁড়াত, কিন্তু পরে আবার ফিরে যেত একটা ছেঁড়া বল বা পুরনো টিনে বানানো গাড়ির দিকে।
একদিন বৃষ্টির পরে ফারহান রাস্তায় খেলা করছিল। হঠাৎ একদল মানুষ এল ওদের এলাকায়। তারা কথা বলল স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে, কিছু শিশুর সঙ্গে খেলাও করল। এক মহিলা এসে ফারহানের মায়ের সঙ্গে কথা বললেন। তাঁর চোখে ছিল মমতা, মুখে ছিল আশ্বাস—"আপনার ছেলে যদি চান, আমরা তাকে নিয়ে যাব এক আশ্রয়স্থলে। ওখানে থাকবে, খাবে, পড়বে, খেলবে, বড় হবে।"
ফারহান কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না। তার মা অশ্রুভেজা চোখে ছেলের মাথায় হাত রেখে বললেন, "তুই আলোর পথ খুঁজে নিবি বাবা…"
এভাবেই ফারহানের যাত্রা শুরু হয় ডিআইএসএস—Daffodil Institute of Social Sciences-এর সাথে।
সেখানকার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, নিয়মিত পড়ালেখা, নামাজ, খেলাধুলা আর বন্ধুত্বপূর্ণ কেয়ারগিভারদের ভালোবাসায় ফারহান যেন ধীরে ধীরে নতুন জীবন পায়। প্রথমদিকে খুব কেঁদে ফেলত, মা-মায়ের কথা মনে পড়ত, কিন্তু সহপাঠীদের হাসি, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আদর ও গল্পে সে যেন নিজের নতুন পরিবার খুঁজে পেল।
ডিআইএসএস-এ সে শুধু বই পড়েনি, শিখেছে কীভাবে মানুষের মতো মানুষ হতে হয়।
হাত ধোয়া শেখা থেকে শুরু করে, পবিত্রতা, ইসলামিক নৈতিকতা, বাংলা কবিতা, ইংরেজি গল্প, আইটি ক্লাস, সৃজনশীলতা, গার্ডেনিং এমনকি রান্নার কাজেও সে অংশ নিতে শুরু করে।
আর সবচেয়ে আনন্দের কথা? ডিআইএসএস তাকে শুধু সাহায্য করেনি, আত্মবিশ্বাসী ও স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলেছে।
বর্তমানে ফারহান ক্লাস সেভেনে পড়ে, দোয়া করে একদিন ডাক্তার হবে। নিজের মত আরেকজন শিশু যেন অভুক্ত না থাকে, যেন বস্তিতে নয়, তারা বেড়ে ওঠে ভালোবাসার আশ্রয়ে—ডিআইএসএস-এর মতো আশার আলোয়।
শেষ কথা
ডিআইএসএস কোনো সাধারণ প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি জীবনের গল্প গড়ার কারখানা।
যেখানে পথহারা শিশুদের থেকে তৈরি হয় পথ দেখানো মানুষ।
আর এমন একটি ফারহান—তোমার, আমার, আমাদের মধ্যেই হয়তো জন্ম নিচ্ছে।