সফল মানুষ বলতে শুধু আর্থিক বা পেশাগত দিক থেকে সফল কোন ব্যক্তিকে বোঝায় না। একজন মানুষ তখনই প্রকৃতভাবে সফল হতে পারে যখন শিক্ষায়, ধ্যানে, জ্ঞানে এবং সমাজের বিপন্ন মানুষের বিপদে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেবার মহত্ব অর্জন করতে পারে। এমন একজন সফল মানুষ হলেন আমাদের ড্যাফোডিল ফ্যামিলির সম্মানিত চেয়ারম্যান জনাব মোঃ সবুর খান। এর আগেও স্যারের সফলতা নিয়ে সংবাদ মাধ্যম সহ অন্যান্য মাধ্যমগুলোতে লেখালেখি হয়েছে। কোথাও উনি একজন সফল উদ্যোক্তা, কোথাও ব্যবসায়ী, কখনো শিক্ষাভাজন হিসেবে সম্মানিত হয়েছেন তিনি।
আজ সে বিষয়ে যাচ্ছি না। আজ বলবো অন্যরকম স্যারের গল্প। যিনি শুধু পেশাগতই নন, পারিবারিক এবং সামজিক জীবনেও অত্যন্ত সফল একজন মানুষ। অনেক সফল মানুষই যেখানে সর্বক্ষেত্রে সফল হতে পারেন না এমনকি পেশাগত সাফল্যের পেছনে দৌড়ে কখনো কখনো পরিবার থেকেও বিচ্ছিন্ন সময় কাটান, আমাদের স্যার সেখানে সমানতালে নিজের পরিবারের দিকেও যত্নবান। উনি একজন ভালো বাবা, একজন ভালো অভিভাবক, একজন ভালো নেতৃত্বদানকারী, সর্বোপরি একজন সজ্জন ব্যক্তি। না বললে কখনোই যা জানা হবে না অথচ সেটা জানা আমাদের জন্য, সমাজে একজন ভালো মানুষ হবার জন্য অসম্ভব জরুরি। হয়তো আরো অনেকেরই দর্শন এইবিষয়গুলোতে একই, কিন্তু আজ এ নিয়ে লিখতেই হচ্ছে। এতো অসম্ভব ব্যস্ততার মাঝেও উনি ভুলে যান না যে উনি একজন বাবা। লেখকের লেখার মত পৃথিবীর অন্যসকল ভালো বাবাদের মত উনিও সন্তানদের কাছে শ্রেষ্ঠ একজন বাবা।
(https://scontent.fdac5-1.fna.fbcdn.net/v/t1.0-9/37223028_10215682062942501_900326669678542848_n.jpg?_nc_cat=104&_nc_ht=scontent.fdac5-1.fna&oh=72cc19aee1e4624923e812dc377e28e0&oe=5C778166)
এ প্রতিষ্ঠানে কাজে যোগদেবার পর প্রথম একটি রাউন্ডটেবিল ডিস্কাশনে যেদিন অংশ নিয়েছিলাম, সেই মিটিং এর বিষয়বস্তু ছিলো " এক্সপার্ট রিটায়ার্ড পিপল এসোসিয়েশন " সেখানে নিজের বাবার কথা শ্রদ্ধা ভরে বলতে গিয়ে এই মানুষটি কেঁদে ফেলেছিলেন। সবার মত আমার চোখ এড়ায়নি সেই বিষয়। মা-বাবার প্রতি ঠিক কতখানি শ্রদ্ধাশীল হলে কারো চোখে সর্বসমক্ষে কান্না চলে আসে তা আমার জানা নেই। তবে উনার মত একজন মানুষ যখন তার বাবার কথা বলতে গিয়ে ছোট্ট শিশুর মত কেঁদে ফেলেন, তখন এই মানুষটির আত্মার মহত্ব বিচার করার ক্ষমতা আমাদের মত সাধারনের সাধ্যে থাকে না।
এই কিছুদিন আগে উনি হঠাৎ করে উনি উনার অফিসের সবাইকে ডাকলেন, কোন কারনে উনার মন বিক্ষিপ্ত ছিলো। সবাই যখন উনার রুমে উপস্থিত হলো উনি তখন গম্ভীর। চলে যেতে বললেন সবাইকে। কারো সাথেই কথা বলেন নি।
শুধু বলেছিলেন, "যাও সবাই! কারো সাথে কথা বলতে চাচ্ছিনা এখন”। সবাই যার যার মত চলে আসলো রুমে। খানিক পরেই আবার যখন ডেকে নিলেন, তখন তিনি চুপচাপ, শান্ত। স্বভাবসুলভ বলতে শুরু করলেন। "তোমরা তো জানো আমাকে কত রকম কাজের দায়িত্ব নিতে হয়" তোমাদের সাথে রাগ হয়ে কথা বললে তো মন খারাপ হয় তোমাদের। কিন্তু তোমরা নিশ্চয়ই বোঝ, যাই বলি না কেন সেটা তোমাদের ভালোর জন্যই বলা" অর্থাৎ একটু আগের রাগের জন্য কনফেশন। উনি বকা দেবেন, সামান্য রাগও হবেন, শাসন করবেন সেটাই স্বাভাবিক কারন সেটা উনার অধিকার। কিন্তু উনার এম্পলয়িদের উপর কোন কারনে সামান্য রাগ হলে উনি নিজেই বেশি দুঃখ পান সেটা আমাদের অজানা নয়। 'আত্মা' কত বড় মাপের হলে এমন হয় জানা নেই স্যার। আমার দুর্ভাগ্য যে আমি সেদিন ছিলাম না। আমার প্রজেক্ট এর কাজে আমি সদরঘাট গিয়েছিলাম। ফিরে এসে যখন শুনলাম তখন নিজেকে শাসন এবং স্নেহ বঞ্চিত লেগেছে। মনে হচ্ছিলো, আহা কেন যে ছিলাম না তখন। কেন যে বকা খেলাম না। আর শেষে স্নেহের কথা, অভিব্যক্তি শুনতে পেলাম না।
(https://scontent.fdac5-1.fna.fbcdn.net/v/t1.0-9/45661011_1999054910184890_9009824768249036800_n.jpg?_nc_cat=102&_nc_ht=scontent.fdac5-1.fna&oh=30afb786a16018d3a9b61a0b6fa2ffdf&oe=5C6A324D)
আমি কখনো দেখিনি। কেউ উনার কাছে কিছু চেয়ে শূন্য হাতে ফিরে গেছেন। অত্যন্ত সংগত কারনেই আমরা অনেক সময় অনেক কিছু বুঝি। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করার সুবাদে অনেক রকম লোকের সাথেই কথা বলতে হয়। কখনো কখনো এমন কিছু বিষয় আসে, যেটা বুঝতে পারি হয়তো ভালো হবে না। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। কিন্তু স্যার পজিটিভ। উনি খুব সুন্দর করে বলেন, “সব বিষয়েই পজিটিভ কিছু আছে। ফারহানা দেখো তো বিষয় টা” কিংবা বলে দেন, ফারহানা আপনাকে এ ব্যপারে সহযোগিতা করবে। স্যার এই যে আপনি আমাদের উপর এতোটা ভরসা করেন, সেটার মূল্য দিতে আমাদের বিন্দু মাত্র কার্পন্য করা উচিত নয়।
কখনো কখনো সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে প্রোগ্রাম করতে হয়। তখন যে সাপোর্ট টা দরকার তার পুরোপুরি স্যারের কাছ থেকে পাই। স্যার এ বিষয়গুলোতে অত্যন্ত আন্তরিক। সেক্ষেত্রে অন্য সকল সহকর্মীদের আন্তরিক সহযোগীতায় বাচ্চাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারি। অল্প সময়ের জন্য হলেও তাদের গা থেকে “সুবিধাবঞ্চিত” শব্দটি মুছে দিতে পারি। (https://scontent.fdac5-1.fna.fbcdn.net/v/t1.0-9/46039341_1841518855957059_6018127360774111232_n.jpg?_nc_cat=106&_nc_ht=scontent.fdac5-1.fna&oh=6a728f9a99f4bb821ab8a47754da3550&oe=5C7BC83C)
অতিসম্প্রতি ভারতের ”কালিঙ্গা ইন্সটিটিউট অব ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল টেকনোলোজি” ইউনিভার্সিটি উনাকে সম্মানসূচক ডিলিট উপাধিতে ভূষিত করেছেন যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। সেখানে ২৭০০০ ট্রাইবাল শিশু নিয়ে যে প্রতিষ্ঠান, সেটি সপরিবারে ভিজিট করে এসছেন। উনাকে নিয়ে লিখতে গেলে সম্ভবত বই লিখা যাবে। কিন্তু, যে বিষয়টির জন্য লিখতে শুরু করেছিলাম, কিংবা যে মেসেজটি দিতে চাচ্ছি, সেটা হলো, জীবনে সফল হতে হলে আগে প্রতিটা মানুষকে একজন ভালো মানুষ হতে হবে। পিতামাতাকে সর্বোচ্চ সম্মান কিংবা শ্রদ্ধা করতে হবে। তাদের প্রার্থনাতেই আমাদের মঙ্গল। বিচক্ষনতার পরিচয় দিতে হবে সঠিক কাজের জন্য নিজের বুদ্ধিমত্তায়। মানুষের ভালোগুনসমূহ আয়ত্ত্ব করার জন্য অর্থব্যয় করে সুনির্দিষ্ট কোন কোর্সের যতখানি প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন স্যারের মত মহৎপ্রাণকে অনুসরণ করা। মানুষ দেখেই শেখে। আমরা যেহেতু ড্যফোডিল পরিবারের সদস্য বলে নিজেদের দাবী করি, সেহেতু এই পরিবারের প্রধান ব্যক্তিটির আদর্শের দিকে আমদের তাকানো উচিত। সবার আগে আমরা যেন একজন ভালো মানুষ হতে পারি।