Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - ashraful.diss

Pages: [1] 2 3 ... 18
1
স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, নিরাপদ পানি ও শিশু শিক্ষা: টেকসই উন্নয়নের মূল স্তম্ভ

একটি সুস্থ, সচেতন ও উন্নত সমাজ গঠনের জন্য যে চারটি বিষয়কে ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়, সেগুলো হলো—স্বাস্থ্যসেবা, স্যানিটেশন বা স্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা এবং প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা। এই চারটি উপাদান একটি সমাজের দীর্ঘমেয়াদি অগ্রগতির রূপরেখা নির্ধারণ করে।

১. স্বাস্থ্যসেবা: সুস্থ জীবনের প্রথম শর্ত

প্রয়োজনমাফিক চিকিৎসা, পুষ্টিকর খাদ্য এবং মা-শিশু স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত না হলে শিশুমৃত্যু, অপুষ্টি ও রোগব্যাধি বৃদ্ধি পায়।
গ্রামীণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োজন।
প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা (যেমন: টিকা, সচেতনতা) দীর্ঘমেয়াদে খরচ হ্রাস করে।

২. স্যানিটেশন: রোগ প্রতিরোধের প্রাথমিক ধাপ

সঠিক টয়লেট ব্যবহার ও হাত ধোয়ার অভ্যাস শিখলে ডায়রিয়া, হেপাটাইটিস, কৃমিসহ বহু রোগের ঝুঁকি কমে যায়।
নারীদের মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও স্কুলে স্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন ব্যবস্থাও জরুরি।
স্যানিটেশন শুধুই ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা নয়—এটি একটি সামাজিক নিরাপত্তা।

৩. নিরাপদ পানি: বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার

পানিবাহিত রোগ (যেমন: টাইফয়েড, কলেরা, আমাশয়) আজও বহু মৃত্যুর কারণ।
আর্সেনিক, আয়রন ও দূষণের বিরুদ্ধে নিরাপদ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
টিউবওয়েল, রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং বা কমিউনিটি পানির প্রকল্প কার্যকর সমাধান হতে পারে।

৪. শিশু শিক্ষা: ভবিষ্যতের ভিত্তি নির্মাণ

শিক্ষাবঞ্চিত শিশু মানে ভবিষ্যতের অসচেতন ও ঝুঁকিপূর্ণ নাগরিক।
প্রাথমিক শিক্ষা মানে কেবল বই পড়ানো নয়; শিশুদের মূল্যবোধ, স্বাস্থ্যজ্ঞান ও পরিবেশ সচেতনতা শেখানোও এর অন্তর্ভুক্ত।
দরিদ্র পরিবারের শিশুদের জন্য উপবৃত্তি, স্কুলে খাবার, বই-পোশাক সরবরাহ শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তির হার বাড়ায়।

উপসংহার

স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, নিরাপদ পানি ও শিশু শিক্ষা—এই চারটি বিষয় একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একটির অভাব অন্যটিকে ব্যাহত করে। তাই উন্নয়ন পরিকল্পনায় এই চারটি খাতকে সমন্বিতভাবে গুরুত্ব দিলে সমাজে টেকসই পরিবর্তন সম্ভব। এটি কেবল একটি উন্নয়নমূলক কৌশল নয়, বরং একটি মানবিক কর্তব্য।


2
যাকাতভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থার মাধ্যমে দুর্বল ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাবলম্বিতা

সমাজে এমন একটি বড় অংশ রয়েছে, যারা শারীরিক, মানসিক, আর্থিক বা সামাজিক কারণে স্বাভাবিক কর্মজীবনে অংশগ্রহণ করতে পারে না। এরা অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী—যাদের মধ্যে রয়েছেন বিধবা নারী, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, অসুস্থ, কর্মহীন ও দুর্গম অঞ্চলের বাসিন্দারা। এই জনগোষ্ঠীর জন্য শুধু দান বা খয়রাত নয়, বরং সম্মানজনক ও টেকসই সহায়তা প্রয়োজন।

যারা কাজ করতে পারে না, তাদের জন্য সহায়তা কেন জরুরি?

তারা জীবিকা নির্বাহে সম্পূর্ণরূপে অন্যের উপর নির্ভরশীল।
প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার অভাবে জীবনধারণে চরম কষ্ট ও সামাজিক অবহেলার শিকার হন।
অভাব, অনাহার, ঋণের দায়, শিশুশ্রম ও মানব পাচারের মতো ঝুঁকিতে পড়েন।

যাকাতভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থা: একটি কার্যকর সমাধান

ইসলাম সমাজের অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে যাকাতকে একটি বাধ্যতামূলক ও দায়িত্বশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজকে দারিদ্র্যমুক্ত ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনের পথে এগিয়ে নিতে যাকাত একটি সুসংগঠিত ও আল্লাহভীতিপূর্ণ পদ্ধতি।

এই ব্যবস্থার মাধ্যমে কীভাবে টেকসই কর্মসংস্থান তৈরি হয়?

প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারকে প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়।
ক্ষুদ্র ব্যবসা, গবাদিপশু পালন, সেলাই-কাটিং, কৃষি কিংবা হস্তশিল্পে সহায়তা প্রদান করে।
সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে কর্মক্ষম ব্যক্তিদের স্বনির্ভর হতে উৎসাহিত করা হয়।
আয়বর্ধক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করে তারা ধীরে ধীরে আত্মিক ও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে।

ফলাফল ও ইতিবাচক পরিবর্তন

দানগ্রহীতা থেকে দানদাতা হয়ে ওঠেন অনেকে।
পরিবারে স্থিতিশীলতা আসে; শিশুরা শিক্ষার সুযোগ পায়।
সামাজিক মর্যাদা ও আত্মমর্যাদাবোধ পুনরুদ্ধার হয়।
সামগ্রিকভাবে দারিদ্র্য হ্রাস পায় এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে ওঠে।

উপসংহার

সমাজে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য যাকাতভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থার প্রয়োগ কেবল অস্থায়ী সহায়তা নয়, বরং এটি একটি টেকসই ও সম্মানজনক পুনর্বাসন প্রক্রিয়া। এই ব্যবস্থার সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা এমন একটি সমাজ গড়ে তুলতে পারি, যেখানে কেউ ক্ষুধার্ত থাকবে না, কেউ নিজেকে অবহেলিত ভাববে না, বরং সকলে একে অপরের সহায়তায় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে থাকবে।


3
যারা কাজ করতে পারে না—তাদের আর্থিক ও সামাজিক সহায়তা একটি নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব

সমাজে এমন অনেক মানুষ রয়েছেন যারা শারীরিক, মানসিক কিংবা বার্ধক্যজনিত কারণে কাজ করে নিজের জীবিকা নির্বাহ করতে অক্ষম। এই জনগোষ্ঠী সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু অবহেলিত অংশ, যাদের আর্থিক ও সামাজিক সহায়তা নিশ্চিত করা শুধু মানবিক নয়, বরং এটি একটি রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক দায়িত্ব।

অসহায়দের মুখোমুখি বাস্তবতা

অনেকেই দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতা বা প্রতিবন্ধকতার কারণে রোজগার করতে পারেন না।
বয়স্ক নাগরিকরা কর্মক্ষমতা হারিয়ে নিঃসঙ্গ ও অবহেলিত জীবন যাপন করেন।
যুদ্ধাহত, বিধবা, অথবা দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জীবনেও দেখা দেয় চরম দারিদ্র্য।
মানসিক অসুস্থতা বা নির্যাতনের শিকার অনেকেই কর্মক্ষেত্র থেকে ছিটকে পড়েন।

প্রয়োজনীয় সহায়তার ধরণ

আর্থিক সহায়তা: নিয়মিত ভাতা, চিকিৎসা খরচ, বাসস্থান ও খাদ্য সহায়তা।
সামাজিক পুনর্বাসন: সহানুভূতিশীল সেবা, পরিবারভিত্তিক পুনঃসংযোগ ও সমাজে পুনঃঅন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ।
সক্ষমতা উন্নয়ন: প্রয়োজন অনুসারে প্রশিক্ষণ ও পুনরুদ্ধারমূলক সেবা।
মানসিক সহায়তা ও কাউন্সেলিং: মানসিক শক্তি জোগাতে পেশাদার কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা।
আইনি সহায়তা: নির্যাতনের শিকার ও সুবিধা বঞ্চিতদের জন্য আইনগত সহায়তা।

রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব

একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের মূল দায়িত্ব হলো তার সকল নাগরিকের নিরাপত্তা ও সম্মানজনক জীবন নিশ্চিত করা। সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো গেলে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও মানবিক সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।

উপসংহার

যারা কাজ করতে পারেন না, তারা সমাজের বোঝা নয়; বরং সঠিক সহায়তা পেলে তারাও একটি সুরক্ষিত ও সম্মানজনক জীবন যাপন করতে পারেন। সমাজের সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের সকলের উচিত এই শ্রেণির মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা।


4
সমাজে অপেক্ষাকৃত দুর্বল, হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী: এক অদৃশ্য সংগ্রাম

আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা জীবনের কোলাহলে, আমরা প্রায়শই সমাজের এক বৃহৎ অংশের কথা ভুলে যাই – যারা অপেক্ষাকৃত দুর্বল, হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী। এরা সেই মানুষগুলো যারা দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত, যাদের জীবন কাটে মৌলিক চাহিদা পূরণের নিরন্তর সংগ্রামে। ক্ষুধা, অপুষ্টি, রোগ, অশিক্ষা আর অনিশ্চয়তা যাদের নিত্যসঙ্গী। এরা আমাদেরই সমাজের অংশ, অথচ তাদের জীবন যেন এক অদৃশ্য সংগ্রামে আবদ্ধ।

এই জনগোষ্ঠী কারা? তারা হতে পারে প্রান্তিক কৃষক যারা এক চিলতে জমিতে জীবন ধারণের চেষ্টা করে, বা দিনমজুর যারা শহরে বা গ্রামে শ্রম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। তারা হতে পারে বিধবা নারী, স্বামী পরিত্যক্তা বা কর্মহীন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। বস্তিবাসী, ভাসমান মানুষ, নদীভাঙনের শিকার বাস্তুহারা পরিবার – এই প্রতিটি মুখই আমাদের সমাজের সবচেয়ে দুর্বল ও হতদরিদ্র অংশের প্রতিচ্ছবি।

তাদের জীবন সংগ্রাম:

খাদ্য সংকট: দুবেলা দুমুঠো ভাত জোগাড় করাই এদের প্রধান দুশ্চিন্তা। পুষ্টিকর খাবারের অভাবে শিশুরা অপুষ্টিতে ভোগে, প্রাপ্তবয়স্কদের কর্মক্ষমতা কমে যায়।

স্বাস্থ্যহীনতা: সুচিকিৎসা তাদের জন্য এক বিলাসিতা। সামান্য সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে গুরুতর ব্যাধিও তাদের জন্য মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়ায়, কারণ চিকিৎসার খরচ মেটানোর সামর্থ্য তাদের নেই।

শিক্ষাবঞ্চিত: অভাবের তাড়নায় শিশুরা স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়, অথবা কখনোই স্কুলের মুখ দেখে না। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হওয়ায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রেই আটকা পড়ে।

গৃহহীনতা ও আশ্রয়হীনতা: যাদের নিজস্ব জমি নেই, মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, তারা বস্তির ঝুপড়ি বা রাস্তার ধারে দিন কাটায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ তাদের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তোলে।

কর্মসংস্থানহীনতা ও অনিশ্চয়তা: দক্ষতার অভাব, শারীরিক দুর্বলতা এবং সুযোগের অভাবে তারা প্রায়শই বেকার থাকে। যখন কাজ মেলে, তখনো তা খুবই স্বল্প আয়ের এবং অনিশ্চিত।

সামাজিক বঞ্চনা ও অবহেলা: দারিদ্র্যের কারণে সমাজে তারা প্রায়শই অবহেলিত ও নিগৃহীত হয়। তাদের কণ্ঠস্বর শোনা যায় না, তাদের অধিকার প্রায়শই লঙ্ঘিত হয়।

কেন এই দুর্বলতা?

এই দুর্বলতা কেবল ব্যক্তিগত অযোগ্যতা নয়, এর পেছনে কাজ করে বহু কাঠামোগত কারণ:

সম্পদের অসম বন্টন: ভূমি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগের অসম বন্টন।
দুর্বল সামাজিক নিরাপত্তা জাল: দরিদ্রদের জন্য পর্যাপ্ত ও কার্যকর সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অভাব।
নীতিমালার দুর্বলতা: দরিদ্রবান্ধব নীতিমালার অভাব অথবা বিদ্যমান নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়া।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ: বন্যা, খরা, নদীভাঙন—প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো দরিদ্রদের আরও প্রান্তিক করে তোলে।
শিক্ষা ও দক্ষতার অভাব: শিক্ষার অভাবে ভালো কাজের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়া।

আমাদের করণীয়:

এই হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি। ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত সকলের ভূমিকা রয়েছে:

দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি: কার্যকর দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি গ্রহণ এবং এর যথাযথ বাস্তবায়ন।

শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ: দরিদ্র পরিবারের শিশুদের জন্য শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা এবং বেকারদের জন্য কর্মমুখী প্রশিক্ষণ প্রদান।

স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করা: গ্রামীণ ও বস্তি এলাকায় উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া এবং বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ঔষধের ব্যবস্থা করা।

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী: বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা—এই ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো এবং তা প্রকৃত হতদরিদ্রদের কাছে পৌঁছে দেওয়া।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ: ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করার জন্য সহজ শর্তে ঋণ ও পরামর্শ প্রদান।

সচেতনতা বৃদ্ধি: সমাজে তাদের প্রতি সহমর্মিতা ও সংবেদনশীলতা বাড়ানো এবং তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা।

সমাজের এই দুর্বলতম অংশকে বাদ দিয়ে একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, তাদের অধিকার নিশ্চিত করা এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করাই একটি মানবিক ও প্রগতিশীল সমাজের অন্যতম লক্ষ্য হওয়া উচিত। আসুন, আমরা সকলে মিলে এই অদৃশ্য সংগ্রামরত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াই, তাদের জীবনে আশার আলো জ্বালাই এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি।


5
সঠিক পরিকল্পনা ও যাকাত তহবিলের ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব দূরীকরণ

দারিদ্র্য ও বেকারত্ব যেকোনো সমাজের জন্য এক ভয়াবহ অভিশাপ, যা শুধু ব্যক্তিগত জীবনকেই নয়, একটি জাতির সামগ্রিক অর্থনীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতাকেও প্রভাবিত করে। ইসলামে যাকাত নামক যে আর্থিক বিধান রয়েছে, তা এই সমস্যাগুলো সমাধানে এক শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারে, যদি এর তহবিল সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়।

যাকাত কেবল একটি বাধ্যতামূলক দান নয়, এটি একটি সুসংগঠিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, যার মূল লক্ষ্য হলো সম্পদশালীদের উদ্বৃত্ত সম্পদ থেকে দরিদ্রদের অধিকার নিশ্চিত করা এবং সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা। যাকাত তহবিলের সঠিক ব্যবস্থাপনা ও সুচিন্তিত পরিকল্পনা দারিদ্র্য ও বেকারত্ব দূরীকরণে নিম্নলিখিত উপায়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে:

১. সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও লক্ষ্য নির্ধারণ:

যাকাত তহবিল ব্যবস্থাপনার প্রথম ধাপ হলো একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করা এবং সুস্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা। শুধু তাৎক্ষণিক ত্রাণ বিতরণের বাইরে গিয়ে দীর্ঘমেয়াদী দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। যেমন:

লক্ষ্য: আগামী ৫ বছরে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের কত শতাংশ পরিবারকে দারিদ্র্যমুক্ত করা হবে এবং কতজন বেকারকে কর্মসংস্থানের আওতায় আনা হবে।

অগ্রাধিকার: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা তৈরি – কোন খাতে কী পরিমাণ বিনিয়োগ করা হবে, তার অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি করা।

২. যাকাত গ্রহীতাদের শ্রেণিবিন্যাস ও প্রয়োজন নিরূপণ:

যাকাতের অর্থ বিতরণের পূর্বে যাকাত গ্রহীতাদের অবস্থা ও প্রয়োজন সম্পর্কে বিস্তারিত গবেষণা করা আবশ্যক। কুরআন শরীফে যাকাত বণ্টনের আটটি খাত নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে:

দারিদ্র্যের প্রকারভেদ: যারা একেবারেই মৌলিক চাহিদা পূরণে অক্ষম (মিসকীন), যারা প্রয়োজনের তুলনায় কম আয় করে (ফকির)।

বেকারত্বের কারণ: শিক্ষাগত যোগ্যতা, দক্ষতার অভাব, পুঁজির অভাব, বাজারের চাহিদা সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব ইত্যাদি।

ব্যক্তিগত প্রয়োজন: কোন পরিবার বা ব্যক্তির কী ধরনের সহায়তা প্রয়োজন (যেমন: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা শুরুর মূলধন, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ)।

৩. দক্ষতা উন্নয়ন ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ:

বেকারত্ব দূরীকরণে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো দক্ষতা বৃদ্ধি। যাকাত তহবিল ব্যবহার করে:

প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন: স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা, যেমন - কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, মোবাইল সার্ভিসিং, ইলেকট্রনিক্স, পোশাক তৈরি, হস্তশিল্প, কৃষিভিত্তিক আধুনিক কৌশল।

বৃত্তি প্রদান: দরিদ্র ও বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণের খরচ বহনের জন্য বৃত্তি প্রদান করা।

চাহিদাভিত্তিক প্রশিক্ষণ: বাজারের চাহিদা এবং স্থানীয় শিল্পের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রশিক্ষণ কোর্স তৈরি করা, যাতে প্রশিক্ষণ শেষে সহজেই কাজ পাওয়া যায়।

৪. ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা তৈরি (SME Development):

দারিদ্র্য বিমোচনের একটি কার্যকর কৌশল হলো উদ্যোক্তা তৈরি। যাকাত তহবিল ব্যবহার করে:

প্রারম্ভিক মূলধন (Seed Capital): যাদের উদ্যোগ গ্রহণের আগ্রহ আছে কিন্তু পুঁজির অভাব, তাদের জন্য সুদমুক্ত ঋণ বা অনুদান হিসেবে প্রারম্ভিক মূলধন প্রদান করা।

ব্যবসায়িক পরামর্শ: নতুন উদ্যোক্তাদের ব্যবসা পরিকল্পনা তৈরি, বাজার বিশ্লেষণ, উৎপাদন ও বিপণন কৌশল সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান।

সহযোগিতা ও নেটওয়ার্কিং: ছোট উদ্যোক্তাদের একে অপরের সাথে এবং বৃহত্তর বাজারের সাথে সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করা।

৫. শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ:

মানব সম্পদের উন্নয়নে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য অপরিহার্য। যাকাত তহবিল ব্যবহার করে:

শিক্ষাবৃত্তি: দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন স্তরে (প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা) শিক্ষাবৃত্তি প্রদান।

শিক্ষা উপকরণ: দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বই, খাতা, পোশাক ইত্যাদি শিক্ষা উপকরণ প্রদান।

স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ: দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা, ঔষধ সরবরাহ এবং স্বাস্থ্য বীমার ব্যবস্থা করা।

স্বাস্থ্য সচেতনতা: পুষ্টি, স্বাস্থ্যবিধি এবং রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা।

৬. যাকাত তহবিলের স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থাপনা:

যাকাত তহবিলের কার্যকারিতার জন্য স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা অপরিহার্য:

স্বাধীন কমিটি: যাকাত সংগ্রহ ও বিতরণের জন্য একটি নিরপেক্ষ ও অভিজ্ঞ কমিটি গঠন করা।

নিয়মিত নিরীক্ষা (Audit): তহবিলের আয়-ব্যয়ের নিয়মিত নিরীক্ষা এবং রিপোর্ট প্রকাশ করা।

তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার: যাকাত সংগ্রহ, বিতরণ এবং উপকারভোগীদের তথ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা।

গণসচেতনতা: যাকাত গ্রহীতা ও দাতাদের মধ্যে যাকাত ব্যবস্থাপনার বিষয়ে স্বচ্ছতা ও আস্থার সম্পর্ক তৈরি করা।

৭. অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা:

এককভাবে কোনো সংস্থার পক্ষে এত বড় কাজ করা সম্ভব নয়। তাই:

স্থানীয় সরকারের সাথে সমন্বয়: স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করা।

অন্যান্য এনজিও ও দাতব্য সংস্থার সাথে সহযোগিতা: একই লক্ষ্য অর্জনে কাজ করা অন্যান্য সংস্থার সাথে অভিজ্ঞতা বিনিময় ও যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করা।

স্বেচ্ছাসেবক তৈরি: যাকাত কার্যক্রম পরিচালনায় স্বেচ্ছাসেবকদের সম্পৃক্ত করা।

যাকাত একটি ঐশ্বরিক বিধান যা সমাজ থেকে দারিদ্র্য ও বেকারত্বের অভিশাপ দূর করার এক অপার সম্ভাবনা বহন করে। সঠিক পরিকল্পনা, দূরদর্শী নেতৃত্ব, স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে যাকাত তহবিল মানব সম্পদের উন্নয়নে এক যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারে, যা একটি সমৃদ্ধ, ন্যায়ভিত্তিক এবং কর্মসংস্থানপূর্ণ সমাজ গঠনে সহায়ক হবে। এই রূপকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সমাজের সর্বস্তরের সচেতনতা এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ।


6
"জীবিকা" চাঁদপুর: একটি অনুসরণযোগ্য উন্নয়ন মডেল

ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশন পরিচালিত “জীবিকা” চাঁদপুর প্রকল্পটি কেবল একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের উন্নয়নেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি একটি কার্যকর এবং অনুসরণযোগ্য উন্নয়ন মডেল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। এর কর্মপদ্ধতি, লক্ষ্য এবং অর্জিত সাফল্য অন্যান্য ব্যক্তি, সংস্থা এবং অঞ্চলের জন্য একটি মূল্যবান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

“জীবিকা” চাঁদপুর এমন একটি সমন্বিত উন্নয়ন কৌশল অনুসরণ করে যা দারিদ্র্য বিমোচন, দক্ষতা উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং স্থানীয় সম্পদ ও সেবার সুষ্ঠু ব্যবহারের উপর জোর দেয়। এই বহুমুখী approaches যেকোনো অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

"জীবিকা" মডেলের অনুসরণযোগ্য দিকসমূহ:

অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি (Participatory Approach): “জীবিকা” স্থানীয় জনগণের চাহিদা ও প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেয় এবং তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে। যেকোনো উন্নয়ন উদ্যোগের সাফল্যের জন্য এই অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য সংস্থাও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে সরাসরি আলোচনা করে এবং তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে কার্যক্রম পরিকল্পনা করতে পারে।

দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি: প্রকল্পটি বাজারের চাহিদা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ প্রদান করে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে। এই মডেল অনুসরণ করে অন্যান্য অঞ্চলও তাদের স্থানীয় অর্থনীতির চাহিদা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করতে পারে, যা বেকারত্ব কমাতে সহায়ক হবে।

নারীর ক্ষমতায়নের উপর জোর: “জীবিকা” নারীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়নের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়। অন্যান্য উন্নয়ন উদ্যোগেও নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য প্রশিক্ষণ, ক্ষুদ্র ঋণ এবং নেতৃত্ব বিকাশের মতো কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য: “জীবিকা” পরিবেশ সচেতনতা এবং স্থানীয় সম্পদের টেকসই ব্যবহারের উপর জোর দেয়। অন্যান্য অঞ্চলও পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন কৌশল অনুসরণ করে দীর্ঘমেয়াদী সুফল অর্জন করতে পারে।

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা: “জীবিকা” তার কার্যক্রম পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রাখে। যেকোনো উন্নয়ন মডেলের সাফল্যের জন্য এই দুটি নীতি অপরিহার্য।

স্থানীয় অংশীদারিত্ব: প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার, বেসরকারি সংস্থা এবং অন্যান্য stakeholders-দের সাথে সহযোগিতা করে কাজ করে। এই সমন্বিত উদ্যোগ অন্যান্য অঞ্চলের উন্নয়নেও অনুকরণীয় হতে পারে।

ফলাফল-ভিত্তিক পদ্ধতি (Result-Oriented Approach): “জীবিকা” তার কার্যক্রমের প্রভাব নিয়মিত মূল্যায়ন করে এবং প্রয়োজনে পরিবর্তন আনে। এই ফলাফল-ভিত্তিক পদ্ধতি অন্যান্য উদ্যোগকেও তাদের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে।

রোল মডেল সৃষ্টি: “জীবিকা” এমন ব্যক্তিদের উত্থানে সহায়তা করে যারা তাদের সাফল্যের মাধ্যমে অন্যদের অনুপ্রাণিত করে। অন্যান্য উন্নয়ন উদ্যোগেও সফল ব্যক্তিদের উদাহরণ তুলে ধরে অন্যদের উৎসাহিত করা যেতে পারে।

কেন "জীবিকা" একটি অনুসরণযোগ্য মডেল:

প্রমাণিত সাফল্য: “জীবিকা” চাঁদপুর অঞ্চলে দারিদ্র্য হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। এর বাস্তব প্রমাণ অন্যান্যদের এই মডেলের কার্যকারিতা সম্পর্কে আশ্বস্ত করতে পারে।

নমনীয়তা: “জীবিকা”র মূলনীতি এবং কৌশলগুলো নমনীয়, যা বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় প্রেক্ষাপট ও চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে প্রয়োগ করা যেতে পারে।

সাশ্রয়ী ও কার্যকর: “জীবিকা” সীমিত সম্পদের মধ্যেও কার্যকরভাবে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। এটি অন্যান্য সংস্থাকেও কম খরচে টেকসই উন্নয়নের পথ দেখাতে পারে।

পরিশেষে বলা যায়, “জীবিকা” চাঁদপুর একটি অনুসরণযোগ্য উন্নয়ন মডেল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। এর কর্মপদ্ধতি, অর্জিত সাফল্য এবং স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণের উপর গুরুত্ব প্রদান অন্যান্য ব্যক্তি, সংস্থা এবং অঞ্চলের জন্য একটি মূল্যবান দিকনির্দেশনা হতে পারে। এই মডেল অনুসরণ করে অন্যান্য পিছিয়ে পড়া অঞ্চলও তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে এবং একটি উন্নত ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে সক্ষম হবে। প্রয়োজন শুধু আন্তরিক প্রচেষ্টা, সঠিক পরিকল্পনা এবং “জীবিকা”র মতো একটি কার্যকর মডেলের অনুসরণ।


7
## "জীবিকা" চাঁদপুর: রোল মডেল তৈরির কারিগর

ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশন পরিচালিত “জীবিকা” চাঁদপুর প্রকল্পের একটি সুদূরপ্রসারী এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়নকারী রোল মডেল তৈরি করা। এই প্রকল্পটি শুধু তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এমন ব্যক্তিত্বদের উত্থানে সহায়তা করে যারা তাদের জীবন সংগ্রামের মাধ্যমে অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে ওঠেন।

একটি সমাজে রোল মডেলের গুরুত্ব অপরিসীম। তারা অন্যদের স্বপ্ন দেখতে, সাহস যোগাতে এবং প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে সফল হওয়ার পথ দেখাতে সাহায্য করে। “জীবিকা” চাঁদপুর এমন ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে এবং তাদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সমাজে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।

*কিভাবে "জীবিকা" রোল মডেল তৈরি করে:*

* *সক্ষমতার বিকাশ:* “জীবিকা” দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ প্রদান করে। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা নতুন জীবিকা অর্জনের সুযোগ পায় এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়। তাদের এই সাফল্য অন্যদের অনুপ্রাণিত করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করতে।

* *আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি:* আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং অর্জিত দক্ষতা নারীদের ও যুবকদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে। তারা সমাজে নিজেদের একটি সম্মানজনক স্থান তৈরি করতে সক্ষম হয় এবং অন্যদের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস পায়। এই আত্মবিশ্বাসী মানুষগুলো অন্যদের জন্য রোল মডেল হিসেবে কাজ করে।

* *নেতৃত্ব বিকাশ:* “জীবিকা” স্থানীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব বিকাশে সহায়তা করে। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ এবং সচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে নারীরা ও যুবকরা নেতৃত্বদানের গুণাবলী অর্জন করে। এই নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিরা তাদের সম্প্রদায়ের জন্য রোল মডেল হিসেবে কাজ করে এবং অন্যদের অধিকার আদায়ে উৎসাহিত করে।

* *সফল উদ্যোক্তা তৈরি:* “জীবিকা” ক্ষুদ্র ঋণ ও ব্যবসায়িক পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে অনেক দরিদ্র মানুষকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলে। তাদের এই ব্যবসায়িক সাফল্য অন্যদের অনুপ্রাণিত করে নিজস্ব উদ্যোগে কিছু করার এবং স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে।

* *সামাজিক পরিবর্তন আনয়ন:* “জীবিকা”র উদ্যোগে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, নারী নির্যাতন বন্ধ এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির মতো সামাজিক পরিবর্তনমূলক কাজগুলোতে যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, তারা সমাজের অন্যদের জন্য রোল মডেল হিসেবে কাজ করেন। তাদের সাহসী পদক্ষেপ অন্যদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে উৎসাহিত করে।

*রোল মডেলদের প্রভাব:*

“জীবিকা” চাঁদপুর প্রকল্পের মাধ্যমে তৈরি হওয়া এই রোল মডেলদের প্রভাব সুদূরপ্রসারী:

* *অনুপ্রেরণা:* তাদের জীবন সংগ্রাম এবং সাফল্য অন্যদের কঠিন পরিস্থিতিতেও আশা না ছাড়তে অনুপ্রাণিত করে।
* *দিকনির্দেশনা:* তারা তাদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের মাধ্যমে অন্যদের সঠিক পথে চলতে এবং সফল হতে সাহায্য করে।
* *আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি:* রোল মডেলদের দেখে সমাজের অন্যরাও নিজেদের সম্ভাবনা সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী হয় এবং নতুন কিছু করার সাহস পায়।
* *সামাজিক ঐক্য:* রোল মডেলরা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে অন্যদের একত্রিত করতে এবং একটি শক্তিশালী সামাজিক বন্ধন গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
* *প্রজন্মের অনুপ্রেরণা:* তারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, যা তাদের উন্নত জীবন গঠনে উৎসাহিত করে।

পরিশেষে বলা যায়, “জীবিকা” চাঁদপুর কেবল একটি উন্নয়ন প্রকল্প নয়, এটি একটি রোল মডেল তৈরির কারখানা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে উঠে আসা সফল ব্যক্তিরা তাদের জীবন দিয়ে প্রমাণ করেন যে ইচ্ছাশক্তি, সঠিক প্রশিক্ষণ এবং সুযোগ পেলে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষও নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে এবং অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে। একটি সমাজে যত বেশি ইতিবাচক রোল মডেল তৈরি হবে, সেই সমাজ তত দ্রুত উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে। “জীবিকা” চাঁদপুর সেই লক্ষ্যেই কাজ করে চলেছে, দেশ ও জাতির জন্য আলোকিত ভবিষ্যৎ নির্মাণে।


8
"জীবিকা" চাঁদপুর: দেশ ও জাতির সেবায় নিবেদিত এক আলোকবর্তিকা

ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশন পরিচালিত “জীবিকা” চাঁদপুর প্রকল্পটি কেবল চাঁদপুর জেলার গুটিকয়েক মানুষের জীবন পরিবর্তনের লক্ষ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর একটি সুদূরপ্রসারী উদ্দেশ্য রয়েছে – দেশ ও জাতির সামগ্রিক উন্নয়নে অবদান রাখা। একটি শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে এই প্রকল্পের প্রতিটি পদক্ষেপ নিবেদিত।

“জীবিকা” চাঁদপুর বিশ্বাস করে যে একটি দেশের প্রকৃত উন্নতি নিহিত থাকে তার জনগণের সক্ষমতায়। যখন একটি জনগোষ্ঠীর একটি অংশ পিছিয়ে থাকে, তখন সামগ্রিকভাবে দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হয়। এই উপলব্ধি থেকেই প্রকল্পটি এমন কার্যক্রম পরিচালনা করে, যা প্রান্তিক মানুষের জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি জাতীয় উন্নয়নেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

*দারিদ্র্য বিমোচন ও জাতীয় অর্থনীতি:*

“জীবিকা”র মাধ্যমে যখন একটি দরিদ্র পরিবার স্বাবলম্বী হয়, তখন কেবল তাদের ব্যক্তিগত অবস্থারই উন্নতি হয় না, জাতীয় অর্থনীতিতেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। তারা আর রাষ্ট্রের বোঝা থাকে না, বরং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। ক্ষুদ্র ব্যবসার মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্য বা তাদের অর্জিত দক্ষতা জাতীয় উৎপাদনে যোগ হয়। তাদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় অভ্যন্তরীণ বাজারও চাঙ্গা হয়।

*দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টি:*

প্রশিক্ষণের মাধ্যমে “জীবিকা” বেকার যুবক ও নারীদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করে। এই দক্ষ কর্মীরা কেবল নিজেদের জীবিকা নির্বাহের সুযোগই পায় না, বিভিন্ন শিল্প ও সেবা খাতে তাদের অবদান জাতীয় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে। কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতা সমৃদ্ধ একটি জাতি দ্রুত উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারে।

*সুস্থ ও শিক্ষিত জাতি গঠন:*

“জীবিকা”র স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা সহায়তামূলক কার্যক্রম একটি সুস্থ ও শিক্ষিত জাতি গঠনে সহায়ক। যখন একটি জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং শিক্ষার আলো তাদের মধ্যে জ্ঞানের উন্মোচন ঘটায়, তখন তারা আরও উৎপাদনশীল এবং সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে। একটি সুস্থ ও শিক্ষিত জাতি দেশের সম্পদ, যা জাতীয় অগ্রগতিকে তরান্বিত করে।

*সামাজিক স্থিতিশীলতা ও আইনের শাসন:*

দারিদ্র্য ও বৈষম্য সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। “জীবিকা”র মতো প্রকল্প যখন অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে মূল স্রোতের সাথে যুক্ত করে, তখন সমাজে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। নারীর ক্ষমতায়ন এবং অধিকার সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সমাজ গঠনেও এই প্রকল্প পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখে।

*অনুপ্রেরণা ও অনুকরণ:*

“জীবিকা” চাঁদপুর প্রকল্পের সাফল্য অন্যান্য অঞ্চলে একই ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করতে অনুপ্রেরণা যোগাতে পারে। একটি সফল মডেল অন্যদের উৎসাহিত করে এবং জাতীয় পর্যায়ে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করে।

পরিশেষে বলা যায়, “জীবিকা” চাঁদপুর কেবল একটি স্থানীয় উন্নয়ন প্রকল্প নয়, এটি দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে নিবেদিত একটি উদ্যোগ। দারিদ্র্য বিমোচন, দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টি, সুস্থ ও শিক্ষিত জাতি গঠন এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই প্রকল্পটি জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। আসুন, আমরা সকলে এই মহৎ প্রচেষ্টার গুরুত্ব উপলব্ধি করি এবং এর সাফল্যের জন্য সহযোগিতা করি, যাতে “জীবিকা”র আলো ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে এবং একটি সমৃদ্ধ জাতি গঠনে সহায়ক হয়।


9
যাকাত ভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থার মাধ্যমে মানব সম্পদের উন্নয়ন

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো যাকাত। এটি কেবল একটি আর্থিক ইবাদতই নয়, বরং একটি শক্তিশালী সামাজিক ও অর্থনৈতিক হাতিয়ার, যার মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জীবনমান উন্নয়ন এবং মানব সম্পদের কার্যকর বিকাশ সম্ভব। যাকাত ভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে এটি একটি সমাজের অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করতে, দারিদ্র্য নির্মূল করতে এবং মানব পুঁজিকে সমৃদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

যাকাতের মূল ধারণা হলো সম্পদশালীদের উদ্বৃত্ত সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ (সাধারণত ২.৫%) দরিদ্র ও অভাবী মানুষের কল্যাণে ব্যয় করা। এই বাধ্যতামূলক দান একদিকে যেমন সম্পদশালীদের পরিশুদ্ধ করে, তেমনি অন্যদিকে দরিদ্রদের মৌলিক চাহিদা পূরণে সহায়ক হয়। যাকাতের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দক্ষতা উন্নয়ন এবং দুর্যোগকালীন সহায়তার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করা যেতে পারে, যা প্রত্যক্ষভাবে মানব সম্পদের উন্নয়নে অবদান রাখে।

*শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন:*

যাকাতের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ করা যেতে পারে। শিক্ষা মানুষের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করে, যা তাদের উন্নত কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে এবং ব্যক্তিগত ও সামাজিক উন্নয়নে সহায়ক হয়। কারিগরি শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বেকার যুবকদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করা সম্ভব, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও অবদান রাখে। যাকাতের অর্থায়নে দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের জন্য স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় পড়ালেখার সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে।

*স্বাস্থ্যসেবা:*

সুস্থ ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী একটি দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ। যাকাতের তহবিল থেকে দরিদ্র ও অসহায় মানুষের স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বিনামূল্যে চিকিৎসা, ঔষধ সরবরাহ এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি সুস্থ জাতি গঠন করা সম্ভব। মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা অপরিহার্য, কারণ সুস্থ মা ও শিশুই একটি সুস্থ ভবিষ্যতের ভিত্তি স্থাপন করে।

*কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচন:*

যাকাতের অর্থ দরিদ্র ও বেকারদের ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করার জন্য মূলধন হিসেবে প্রদান করা যেতে পারে। হাঁস-মুরগি পালন, কুটিরশিল্প, ছোট দোকান বা অন্য কোনো আয়-উৎপাদনমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা স্বাবলম্বী হতে পারবে এবং অন্যের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে পারবে। যাকাতের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দরিদ্র পরিবারদের খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের মতো মৌলিক চাহিদা পূরণেও সহায়তা করা যেতে পারে, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়ক।

*দুর্যোগকালীন সহায়তা:*

প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা আকস্মিক সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো যাকাত ভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। যাকাতের তহবিল থেকে দুর্যোগ কবলিত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ, পুনর্বাসন এবং জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে অসহায় মানুষ দ্রুত তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ পায়।

*মানব সম্পদ উন্নয়নে যাকাতের প্রভাব:*

যাকাত ভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থার সঠিক বাস্তবায়ন একটি দেশের মানব সম্পদের উন্নয়নে বহুমুখী প্রভাব ফেলতে পারে:

* *দরিদ্র্য হ্রাস:* যাকাতের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটে এবং দারিদ্র্যের হার কমে আসে।
* *শিক্ষার প্রসার:* দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি পায়, যা একটি শিক্ষিত ও দক্ষ জাতি গঠনে সহায়ক।
* *স্বাস্থ্য সুরক্ষা:* দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়, যা একটি সুস্থ ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী তৈরি করে।
* *কর্মসংস্থান বৃদ্ধি:* ক্ষুদ্র ব্যবসা ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে বেকারত্ব হ্রাস পায় এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আসে।
* *সামাজিক ন্যায়বিচার:* যাকাত সম্পদশালীদের দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি করে এবং সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য কমিয়ে আনে।

পরিশেষে বলা যায়, যাকাত কেবল একটি ধর্মীয় কর্তব্য পালনই নয়, বরং মানব সম্পদের উন্নয়নের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। যাকাত ভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সঠিক বিনিয়োগের মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ, ন্যায়ভিত্তিক ও উন্নত সমাজ গঠন করা সম্ভব। প্রয়োজন শুধু যাকাত আদায় ও বিতরণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং এর সুফল সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া।


10
স্থানীয় সম্পদ ও সেবায় প্রবেশাধিকার: একটি টেকসই উন্নয়নের চাবিকাঠি

একটি জনগোষ্ঠীর টেকসই উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির জন্য স্থানীয় সম্পদ ও সেবায় সহজ ও ন্যায্য প্রবেশাধিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পানীয় জল, পয়ঃনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ, বাজার, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং প্রাকৃতিক সম্পদের মতো মৌলিক পরিষেবা ও সম্পদের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা একটি সুস্থ ও উৎপাদনশীল সমাজ গঠনের পূর্বশর্ত।

ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশন পরিচালিত “জীবিকা” চাঁদপুর প্রকল্প এই স্থানীয় সম্পদ ও সেবায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো চাঁদপুর জেলার দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা এবং তাদের স্বনির্ভরতা অর্জনে সহায়তা করা। এই লক্ষ্যে “জীবিকা” স্থানীয় সম্পদ ও সেবার সুষ্ঠু ব্যবহার এবং সকলের জন্য এর সুবিধা নিশ্চিত করার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে।

শিক্ষা:

শিক্ষা একটি মৌলিক অধিকার এবং উন্নয়নের মূল ভিত্তি। “জীবিকা” চাঁদপুর দরিদ্র পরিবারের শিশুদের শিক্ষাগ্রহণে উৎসাহিত করে এবং তাদের বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করে। শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ এবং ক্ষেত্রবিশেষে আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগকে সকলের জন্য উন্মুক্ত করার চেষ্টা করা হয়। বয়স্কদের সাক্ষরতা কার্যক্রমও পরিচালনা করা হয়, যাতে জ্ঞানার্জনের সুযোগ সমাজের সকল স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছায়।

স্বাস্থ্যসেবা:

সুস্থ জীবনযাপন একটি অপরিহার্য চাহিদা। “জীবিকা” নিয়মিত স্বাস্থ্য ক্যাম্প আয়োজনের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়। স্বাস্থ্যবিধি ও পুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিনামূল্যে ঔষধ সরবরাহ করা হয়। স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর সাথে সমন্বয় করে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তিতেও সহায়তা করা হয়।

পানীয় জল ও পয়ঃনিষ্কাশন:

নিরাপদ পানীয় জল ও স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশন জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “জীবিকা” প্রকল্প নিরাপদ জলের উৎস তৈরি এবং স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহারের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় করে এই পরিষেবাগুলোর সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়।

বাজার ও যোগাযোগ ব্যবস্থা:

স্থানীয় উৎপাদক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য বাজারের সুযোগ তৈরি করা এবং পণ্যাদি পরিবহনের জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করা অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি। “জীবিকা” স্থানীয় বাজারগুলোর উন্নয়নে সহায়তা করে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য advocacy কার্যক্রম পরিচালনা করে। এর ফলে প্রান্তিক মানুষ তাদের উৎপাদিত পণ্য সহজে বিক্রি করতে পারে এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করতে সক্ষম হয়।

প্রাকৃতিক সম্পদ:

স্থানীয় প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার এবং এর উপর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করা “জীবিকা” প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। পরিবেশবান্ধব জীবিকা নির্বাহের পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় এবং প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার উপর জোর দেওয়া হয়।

“জীবিকা”র প্রভাব:

“জীবিকা” চাঁদপুর প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় সম্পদ ও সেবায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রবেশাধিকার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ পাওয়ায় তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। বাজারের সাথে সংযোগ স্থাপিত হওয়ায় তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রসারিত হয়েছে। নিরাপদ পানীয় জল ও উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমিয়েছে।

স্থানীয় সম্পদ ও সেবায় সকলের সমান প্রবেশাধিকার একটি ন্যায়সঙ্গত ও উন্নত সমাজ গঠনের জন্য অপরিহার্য। ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশনের “জীবিকা” চাঁদপুর প্রকল্প এই লক্ষ্য অর্জনে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। এই ধরনের উদ্যোগকে আরও সম্প্রসারিত করা এবং সমাজের সকল স্তরের মানুষের সহযোগিতা প্রদান করা প্রয়োজন, যাতে চাঁদপুর জেলার প্রতিটি মানুষ স্থানীয় সম্পদ ও সেবার সুবিধা ভোগ করে একটি উন্নত জীবন যাপন করতে পারে।


11
নারীর ক্ষমতায়ন: একটি উন্নত সমাজের ভিত্তি

নারী ও পুরুষ একটি সমাজের দুটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। একটি পাখির যেমন দুটি ডানা সমানভাবে কাজ না করলে উড়তে পারে না, তেমনি একটি সমাজও নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া পূর্ণাঙ্গরূপে বিকশিত হতে পারে না। নারীর ক্ষমতায়ন কেবল নারীর অধিকারের প্রশ্ন নয়, এটি একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার অপরিহার্য শর্ত।

ইসলামের আগমন মানব ইতিহাসে নারীর মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার এক বিপ্লবী পদক্ষেপ ছিল। জাহেলিয়াতের যুগে নারী ছিল অবহেলিত, ভোগ্যপণ্য ও উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত। ইসলাম নারীকে দিয়েছে সম্মান, মর্যাদা এবং সমাজের প্রতিটি স্তরে পুরুষের সমান অধিকারের স্বীকৃতি।

ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর ক্ষমতায়নের মূল ভিত্তি হলো আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি হিসেবে নারী ও পুরুষের সমমর্যাদা। কুরআন মাজীদে আল্লাহ বলেন:

يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَىٰ وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا ۚ إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ

"হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হও। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অধিক সম্মানিত যে অধিক মুত্তাকী। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।" (সূরা হুজুরাত, ৪৯:১৩)

এই আয়াত স্পষ্ট করে যে নারী ও পুরুষ উভয়ই একই উৎস থেকে সৃষ্ট এবং আল্লাহর কাছে মর্যাদার মাপকাঠি লিঙ্গ নয়, বরং তাকওয়া বা আল্লাহভীতি।

ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশন পরিচালিত “জীবিকা” চাঁদপুর প্রকল্প নারীর ক্ষমতায়নের গুরুত্ব গভীরভাবে উপলব্ধি করে এবং এই লক্ষ্যে বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো চাঁদপুর জেলার প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করে তোলা, যাতে তারা আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাসের সাথে জীবন যাপন করতে পারে এবং সমাজের উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে।

অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন:

“জীবিকা” চাঁদপুর প্রকল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের উপর জোর দেওয়া। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নারীকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দেয় এবং অন্যের উপর নির্ভরশীলতা কমায়। এই লক্ষ্যে প্রকল্পটি নারীদের বিভিন্ন ধরনের আয়-উৎপাদনমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করে। ক্ষুদ্র ঋণ ও অনুদান প্রদানের মাধ্যমে নারীদের ছোট ব্যবসা শুরু করতে উৎসাহিত করা হয়। হস্তশিল্প, সেলাই, পোল্ট্রি পালন, সবজি চাষের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা হয়, যাতে তারা নিজেরাই উপার্জন করতে সক্ষম হন।

সামাজিক ক্ষমতায়ন:

অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি নারীর সামাজিক ক্ষমতায়নও অত্যন্ত জরুরি। “জীবিকা” প্রকল্প নারীদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে। নারী ও শিশু অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মশালা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। বাল্যবিবাহ, নারী নির্যাতন ও যৌতুকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য নারীদের সংগঠিত করা হয় এবং আইনি সহায়তা প্রদান করা হয়। এর মাধ্যমে নারীরা তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হন এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস পান।

“জীবিকা”র প্রভাব:

“জীবিকা” চাঁদপুর প্রকল্পের মাধ্যমে ইতোমধ্যে বহু নারী তাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়েছেন। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে তারা সংসারে নিজেদের মতামত প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে তারা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে আরও বেশি সোচ্চার হয়েছেন এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস অর্জন করেছেন।

নারীর ক্ষমতায়ন একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া এবং এর জন্য সমাজের সকল স্তরের মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশন পরিচালিত “জীবিকা” চাঁদপুর প্রকল্পের মতো উদ্যোগগুলো নারীর ক্ষমতায়নের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আসুন, আমরা সকলে মিলে এই মহৎ উদ্দেশ্যে হাত বাড়াই এবং একটি এমন সমাজ গড়ে তুলি যেখানে নারী ও পুরুষ সমান সুযোগ ও মর্যাদা নিয়ে জীবন যাপন করতে পারে। কারণ নারীর ক্ষমতায়নের মধ্যেই নিহিত রয়েছে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।


12
বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তির দিশা

রহিম সাহেব, বছর তিরিশের যুবক। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েও গত দুই বছর ধরে তিনি হন্যে হয়ে কাজ খুঁজে চলেছেন। চাঁদপুর জেলার এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান রহিম। বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল ছেলে ভালো চাকরি করে সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু বাস্তবতা বড়ই কঠিন। একের পর এক ইন্টারভিউ দিয়েছেন, কিন্তু কোথাও মেলেনি সুযোগ। বন্ধুদের ভালো চাকরি দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন, রাতের ঘুম হারাম হয়েছে বেকারত্বের চিন্তায়।

রহিমের মতো অসংখ্য শিক্ষিত যুবক আজ বাংলাদেশে বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত। তাদের স্বপ্ন, তাদের সম্ভাবনা যেন অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। একটি স্থিতিশীল জীবনের আকাঙ্ক্ষা, পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর তাড়না – সবকিছুই বেকারত্বের কঠিন বেড়াজালে বন্দি।

ঠিক এই পরিস্থিতিতে, ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশন পরিচালিত “জীবিকা” চাঁদপুর প্রকল্প বেকার যুবকদের জন্য এক নতুন আশার আলো নিয়ে এসেছে। এই প্রকল্পটি শুধু আর্থিক সহায়তা প্রদানই করে না, বরং বেকারত্বের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে তাদের দক্ষতা উন্নয়নে এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

“জীবিকা” প্রকল্পের অধীনে বেকার যুবকদের বিভিন্ন ধরনের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এই প্রশিক্ষণগুলো বাজারের চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করা হয়, যাতে প্রশিক্ষণ শেষে সহজেই কাজের সুযোগ পাওয়া যায়। কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, মোবাইল সার্ভিসিং, ইলেকট্রনিক্স, পোশাক তৈরি, গ্রাফিক্স ডিজাইন – এমন বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ নিয়ে বহু যুবক আজ স্বাবলম্বী হয়েছে।

শুধু প্রশিক্ষণই নয়, “জীবিকা” প্রকল্প তরুণ উদ্যোক্তাদেরও উৎসাহিত করে। যাদের নিজস্ব ব্যবসা শুরু করার আগ্রহ আছে, তাদের জন্য স্বল্প ঋণের ব্যবস্থা করা হয় এবং ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করা হয়। এর ফলে অনেক যুবক আজ সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে, শুধু নিজেদের ভাগ্যই পরিবর্তন করেনি, অন্যদের জন্যও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

রহিম সাহেবও “জীবিকা” প্রকল্পের সন্ধান পান এক বন্ধুর মাধ্যমে। প্রথমে দ্বিধা থাকলেও, কর্মশালার কর্মীদের আন্তরিকতা দেখে তিনি আশ্বস্ত হন এবং গ্রাফিক্স ডিজাইনের কোর্সে ভর্তি হন। প্রশিক্ষকরা ছিলেন দক্ষ এবং বন্ধুভাবাপন্ন। রহিম মনোযোগ দিয়ে কাজ শেখেন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই ভালো দক্ষতা অর্জন করেন।

প্রশিক্ষণ শেষে “জীবিকা” প্রকল্প থেকেই রহিমের একটি ডিজাইন ফার্মে ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে কাজের সুযোগ পেয়ে রহিম নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেন এবং কিছুদিনের মধ্যেই স্থায়ী চাকরি লাভ করেন। আজ রহিম শুধু নিজের পরিবারের আর্থিক সংকটই দূর করেননি, বরং তার ছোট ভাইবোনদের লেখাপড়ার খরচও বহন করছেন। তার বাবা-মায়ের মুখে আজ গর্বের হাসি।

রহিমের মতো আরও অনেক বেকার যুবক “জীবিকা” প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন জীবনের সন্ধান পেয়েছে। এই প্রকল্পটি বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে একটি কার্যকরী পদক্ষেপ। শুধুমাত্র আর্থিক সাহায্য নয়, সঠিক প্রশিক্ষণ, দিকনির্দেশনা এবং আত্মবিশ্বাস যোগানোর মাধ্যমে “জীবিকা” বেকার যুবকদের কর্মজীবনে সফল হতে সাহায্য করে।

বেকারত্ব একটি জাতীয় সমস্যা এবং এর সমাধানে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশনের “জীবিকা” চাঁদপুর প্রকল্পের মতো উদ্যোগগুলো বেকারত্বের হার কমাতে এবং একটি সমৃদ্ধ ও আত্মনির্ভরশীল জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রয়োজন শুধু এই ধরনের উদ্যোগকে আরও সম্প্রসারিত করা এবং সমাজের সকল স্তরের মানুষের সহযোগিতা প্রদান করা। তবেই বেকারত্বের অন্ধকার থেকে মুক্তি পেয়ে আমাদের যুবসমাজ তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা বিকাশের সুযোগ পাবে এবং দেশের উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।


13
আলোর পথে যাত্রা শামীমার

শামীমা আক্তার, চল্লিশ পেরোনো এক নারী। চাঁদপুর জেলার এক ছোট্ট গ্রামে তার সংসার। স্বামী দিনমজুর, রোজগার অনিশ্চিত। তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে অভাবের সংসার যেন পিছু ছাড়তে চায় না। ভাঙা কুঁড়েঘর, দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগাড় করাই ছিল তার নিত্যদিনের সংগ্রাম। সন্তানদের স্কুলে পাঠানো দূরের কথা, তাদের মুখের দিকে তাকালেই শামীমার বুকটা হু হু করে উঠত।

একদিন গ্রামে এলেন ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশনের কর্মীরা। তারা “জীবিকা” প্রকল্পের অধীনে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করলেন। শামীমা প্রথমে তেমন আগ্রহ দেখাননি, বহুবার এমন আশ্বাস শুনেছেন কিন্তু বাস্তবে কিছুই বদলায়নি। তবে এবার কর্মীদের আন্তরিকতা আর তাদের প্রস্তাবিত প্রশিক্ষণ ও সহায়তার কথা শুনে তার মনে ক্ষীণ আশা জাগল।

শামীমা সাহস করে নিজের নাম নথিভুক্ত করলেন। তাকে হাঁস-মুরগি পালন এবং প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলো। প্রশিক্ষণ শেষে “জীবিকা” প্রকল্প থেকে তাকে কিছু হাঁস-মুরগি ও তাদের খাবার কেনার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হলো।

প্রথমদিকে শামীমার একটু ভয় লাগছিল। কখনো তিনি হাঁস-মুরগি পালন করেননি। তবে প্রশিক্ষণে শেখা কৌশল আর কর্মীদের নিয়মিত পরামর্শে তিনি ধীরে ধীরে কাজটা রপ্ত করে ফেললেন। অল্প দিনেই তার হাঁস-মুরগি ডিম দিতে শুরু করলো। সেই ডিম বিক্রি করে তার কিছু আয় হতে লাগলো।

এরপর শামীমা আর পিছন ফিরে তাকাননি। ডিম বিক্রির টাকা দিয়ে তিনি আরও কিছু হাঁস-মুরগি কিনলেন। পাশাপাশি, গ্রামের মানুষের ছোটখাটো অসুস্থতায় প্রাথমিক চিকিৎসার জ্ঞান কাজে লাগিয়েও তিনি কিছু রোজগার করতে শুরু করলেন। ধীরে ধীরে তার আর্থিক অবস্থার উন্নতি হতে লাগলো।

তাদের ভাঙা কুঁড়েঘরের চাল মেরামত হলো, ছেলেমেয়েদের জন্য নতুন জামাকাপড় কেনা হলো। সবচেয়ে বড় কথা, শামীমা তার বড় ছেলেকে গ্রামের স্কুলে ভর্তি করতে সক্ষম হলেন। ছেলেটা রোজ আগ্রহ নিয়ে স্কুলে যায়, নতুন নতুন জিনিস শেখে। মায়ের চোখে এখন আর হতাশার ছায়া নেই, সেখানে স্বপ্ন আর আত্মবিশ্বাসের আলো ঝলমল করে।

শুধু শামীমা একা নন, “জীবিকা” প্রকল্পের মাধ্যমে তার গ্রামের আরও অনেক দরিদ্র পরিবার তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পেরেছে। কেউ সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে, কেউবা কুটিরশিল্পের মাধ্যমে নতুন জীবন খুঁজে পেয়েছে।

শামীমা এখন অন্য নারীদেরও উৎসাহিত করেন। তিনি বলেন, “প্রথম দিকে ভয় পেয়েছিলাম, মনে হয়েছিল কিছুই বদলাবে না। কিন্তু ‘জীবিকা’ আমাদের দেখিয়েছে যে চেষ্টা করলে, সঠিক পথে চললে দারিদ্র্যের অন্ধকার ভেদ করে আলোয় আসা যায়।”

শামীমার এই গল্প শুধু একটি পরিবারের উন্নতির কাহিনী নয়, এটি একটি সমাজের পরিবর্তনের চিত্র। ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশনের “জীবিকা” প্রকল্প চাঁদপুর জেলার বহু শামীমার জীবনে এনেছে নতুন আশা, জুগিয়েছে আত্মবিশ্বাস আর দেখিয়েছে এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথ। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে কীভাবে একটি পিছিয়ে পড়া জনপদের জীবন বদলে দেওয়া যায়, শামীমার গল্প তারই এক জলন্ত উদাহরণ।


14
দারিদ্র্য বিমোচনে "জীবিকা" চাঁদপুর: একটি আশার আলো

আজ আমি আপনাদের সাথে ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশন পরিচালিত চাঁদপুর জেলার একটি অলাভজনক সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প “জীবিকা” নিয়ে আলোচনা করতে এসেছি। এই প্রকল্পের মূল ভিত্তি হলো একটি মহৎ উদ্দেশ্য – দারিদ্র্য বিমোচন। আসুন, আমরা জেনে নিই কীভাবে “জীবিকা” চাঁদপুর এই গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জীবনে আশার আলো দেখাচ্ছে।

দারিদ্র্য একটি জটিল সমস্যা যা কেবল একটি পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থাকেই নয়, বরং তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আত্মমর্যাদা এবং সামগ্রিক জীবনযাত্রার মানকেও প্রভাবিত করে। চাঁদপুর জেলার বহু মানুষ এই কঠিন বাস্তবতার শিকার। ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশন এই অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে “জীবিকা” চাঁদপুর প্রকল্পের মাধ্যমে।

“জীবিকা” শুধুমাত্র ত্রাণ বিতরণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর মূল দর্শন হলো দরিদ্র পরিবারগুলোকে দীর্ঘমেয়াদী স্বনির্ভরতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রকল্পটি বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে:

অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন: “জীবিকা” দরিদ্র পরিবারগুলোকে ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করার জন্য সহজ শর্তে ঋণ এবং ক্ষেত্রবিশেষে অনুদান প্রদান করে। এই আর্থিক সহায়তা তাদের নিজস্ব উদ্যোগে আয় রোজগারের সুযোগ তৈরি করে, যা দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র ভাঙতে সহায়ক।

দক্ষতা উন্নয়ন: কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি এবং আয় উপার্জনের নতুন পথ উন্মোচনের জন্য “জীবিকা” স্থানীয় যুবসমাজ ও নারীদের বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করে। সেলাই, হস্তশিল্প, কৃষিভিত্তিক আধুনিক কৌশল, কম্পিউটার জ্ঞান – এমন বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা দক্ষ workforce হিসেবে গড়ে ওঠে এবং নিজেদের জীবিকা নির্বাহের সক্ষমতা অর্জন করে।

স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সহায়তা: দারিদ্র্যের কারণে অনেক পরিবার মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। “জীবিকা” নিয়মিত স্বাস্থ্য ক্যাম্প আয়োজনের মাধ্যমে দরিদ্রদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি, দরিদ্র পরিবারের শিশুদের শিক্ষাগ্রহণে উৎসাহিত করা হয় এবং তাদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। শিক্ষা দারিদ্র্যের শেকল ভাঙার অন্যতম শক্তিশালী হাতিয়ার – এই বিশ্বাস নিয়ে “জীবিকা” কাজ করে।

সচেতনতা বৃদ্ধি: দারিদ্র্যের মূল কারণ এবং এর প্রভাব সম্পর্কে স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করাও “জীবিকা”র একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বাল্যবিবাহ, নারী নির্যাতন এবং অন্যান্য সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে একটি সুস্থ ও প্রগতিশীল সমাজ গঠনে প্রকল্পটি ভূমিকা রাখে।

“জীবিকা” চাঁদপুর প্রকল্পের প্রতিটি কার্যক্রম দরিদ্র মানুষের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে এবং তাদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। যখন একটি পরিবার অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়, তখন তাদের সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখার সাহস জন্মায়। যখন একজন নারী দক্ষতা অর্জন করে নিজের পায়ে দাঁড়ায়, তখন সমাজে তার অবস্থান আরও দৃঢ় হয়। “জীবিকা” ঠিক এই পরিবর্তনগুলোই চাঁদপুর জেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনে নিয়ে আসছে।

আমরা যারা তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে আছি, তাদের সকলেরই উচিত “জীবিকা”র মতো মহতী উদ্যোগের পাশে দাঁড়ানো। আপনার সামান্য সহযোগিতা একটি দরিদ্র পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে এবং তাদের দারিদ্র্যের অন্ধকার থেকে আলোর পথে আনতে সহায়ক হতে পারে।

আসুন, আমরা সকলে মিলে “জীবিকা” চাঁদপুর প্রকল্পের সাফল্য কামনা করি এবং দারিদ্র্যমুক্ত একটি সমাজ গঠনে যার যার স্থান থেকে অবদান রাখি।

15
ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশন পরিচালিত “জীবিকা” চাঁদপুর: একটি অলাভজনক সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প

ভূমিকা:

ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশন একটি সুপরিচিত অলাভজনক সংস্থা যা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিভিন্নমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এই কার্যক্রমের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যোগ হলো “জীবিকা” চাঁদপুর প্রকল্প। চাঁদপুর জেলার সুবিধাবঞ্চিত ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে এই প্রকল্পটি পরিচালিত হচ্ছে। “জীবিকা” শুধুমাত্র একটি ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম নয়, বরং এটি একটি সমন্বিত সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প যার মাধ্যমে স্থানীয় মানুষের দীর্ঘমেয়াদী স্বনির্ভরতা অর্জনের উপর জোর দেওয়া হয়।

প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:

“জীবিকা” চাঁদপুর প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য হলো চাঁদপুর জেলার দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য বিমোচন এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রকল্পটি নিম্নলিখিত উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়নের চেষ্টা করে:

১। দরিদ্র পরিবারগুলোকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য সহায়তা প্রদান।

২। স্থানীয় জনগণের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আয় বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করা।

৩। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণে সহায়তা করা।

৪। নারী ও শিশুদের অধিকার রক্ষা এবং তাদের ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করা।

৫। স্থানীয় সম্প্রদায়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক সচেতনতা তৈরি করা।

প্রকল্পের কার্যক্রম:

“জীবিকা” চাঁদপুর প্রকল্পটি বহুমুখী কার্যক্রমের মাধ্যমে তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা করে। এর কিছু উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম হলো:

ক্ষুদ্রঋণ ও অনুদান: দরিদ্র পরিবারগুলোকে ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করার জন্য সহজ শর্তে ঋণ এবং ক্ষেত্রবিশেষে অনুদান প্রদান করা হয়। এর মাধ্যমে তারা বিভিন্ন আয়-উৎপাদনমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারে।

দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ: স্থানীয় যুবসমাজ ও নারীদের বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। যেমন - সেলাই, হস্তশিল্প, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, কৃষিভিত্তিক প্রশিক্ষণ ইত্যাদি। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে বা নিজেদের ব্যবসা শুরু করতে সক্ষম হয়।

স্বাস্থ্যসেবা ও সচেতনতা: প্রকল্পের আওতায় নিয়মিত স্বাস্থ্য ক্যাম্প আয়োজন করা হয় এবং স্থানীয়দের স্বাস্থ্যবিধি ও পুষ্টি সম্পর্কে সচেতন করা হয়। দরিদ্রদের মাঝে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও ঔষধ সরবরাহ করা হয়।

শিক্ষা সহায়তা: দরিদ্র পরিবারের শিশুদের শিক্ষাগ্রহণে উৎসাহিত করা হয় এবং তাদের শিক্ষা উপকরণ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। বয়স্কদের জন্য সাক্ষরতা কার্যক্রমও পরিচালনা করা হয়।

পরিবেশ সচেতনতা: পরিবেশ সুরক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে স্থানীয়দের সচেতন করা হয় এবং পরিবেশবান্ধব জীবিকা নির্বাহের পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

নারী ও শিশু অধিকার: নারী ও শিশুদের অধিকার রক্ষা এবং বাল্যবিবাহ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

প্রকল্পের প্রভাব ও সাফল্য:

“জীবিকা” চাঁদপুর প্রকল্প ইতোমধ্যে চাঁদপুর জেলার বহু দরিদ্র পরিবারের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত পরিবারগুলো অর্থনৈতিকভাবে আগের চেয়ে স্থিতিশীল হয়েছে, তাদের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করে অনেকেই নতুন কাজের সুযোগ পেয়েছে অথবা সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা সহায়তার মাধ্যমে স্থানীয়দের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।

টেকসই উন্নয়নে অবদান:

“জীবিকা” চাঁদপুর প্রকল্পটি শুধুমাত্র তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি দীর্ঘমেয়াদী টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে। স্থানীয় জনগণের সক্ষমতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং মৌলিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে প্রকল্পটি একটি স্বনির্ভর ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

সারকথা:

ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশন পরিচালিত “জীবিকা” চাঁদপুর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প। চাঁদপুর জেলার দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জীবনমান উন্নয়নে এই প্রকল্পের অবদান অনস্বীকার্য। সমাজের সকল স্তরের মানুষের সমর্থন ও সহযোগিতার মাধ্যমে এই প্রকল্পটি আরও বৃহত্তর পরিসরে তার কার্যক্রম পরিচালনা করে চাঁদপুর জেলার উন্নয়নে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে।


Pages: [1] 2 3 ... 18