« on: August 25, 2025, 11:01:28 PM »
ডিআইএসএস চাইল্ড হোমের শিশুদের শাসন: সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়, তবে ভুল ধারণার অবকাশ নেই
ডিআইএসএস চাইল্ড হোম – একটি আশ্রয়, একটি পরিবার বঞ্চিত শিশুদের জন্য। এখানে যারা পরিচর্যা করেন, তারা শুধু কর্মী নন, তারা যেন এই শিশুদের বাবা-মা, বন্ধু, পথপ্রদর্শক। স্বাভাবিকভাবেই, একটি পরিবারের মতো এখানেও নিয়মকানুন থাকে, আর সেই নিয়ম ভাঙলে শাসনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু প্রায়শই, এই শাসনের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, সমালোচনা হয়। আজ আমি সেই বিষয়টির গভীরে যেতে চাই, কোনো সমালোচনা নয়, বরং একটি বাস্তবসম্মত দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করতে চাই।
আমাদের সমাজে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে যে, শিশুদের শাসন করা মানেই তাদের প্রতি অবিচার করা, তাদের মানসিক বিকাশে বাধা দেওয়া। বিশেষ করে যখন কোনো প্রতিষ্ঠানে শিশুদের শাসনের প্রসঙ্গ আসে, তখন অনেকেই নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন। কিন্তু ডিআইএসএস চাইল্ড হোমের প্রেক্ষাপটটি একটু ভিন্নভাবে বোঝা দরকার।
প্রথমত, এখানে যারা শিশুদের লালন-পালন করেন, তারা কোনো ব্যক্তিগত বিদ্বেষ থেকে তাদের শাসন করেন না। তাদের কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই এই শিশুদের উপর রাগ দেখানোর। তাদের একমাত্র লক্ষ্য হলো এই অসহায় শিশুদের একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা। একটি সুস্থ, সুশৃঙ্খল জীবন দেওয়ার জন্য কিছু নিয়মকানুন মেনে চলা অপরিহার্য। আর সেই নিয়ম ভাঙলে, তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য শাসনের প্রয়োজন হয়।
দ্বিতীয়ত, এই শিশুরা অনেকেই কঠিন জীবন পার করে এখানে এসেছে। হয়তো তারা দেখেছে অবহেলা, বঞ্চনা, এমনকি সহিংসতাও। তাদের মধ্যে অনেকেরই হয়তো নিয়ম মানার অভ্যাস গড়ে ওঠেনি। এমন পরিস্থিতিতে, ভালোবাসা এবং ধৈর্যের পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে শাসনের প্রয়োজন হতে পারে। তবে সেই শাসন যেন অবশ্যই হয় গঠনমূলক। এমন শাসন যা তাদের ভুল বুঝতে সাহায্য করে এবং ভবিষ্যতে সেই ভুল আর না করার শিক্ষা দেয়। শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন কখনোই কাম্য নয় এবং আমি বিশ্বাস করি ডিআইএসএস চাইল্ড হোমের কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন।
তৃতীয়ত, আমাদের মনে রাখতে হবে, শিশুরা শেখে তাদের চারপাশের পরিবেশ থেকে। যদি তারা দেখে যে কোনো ভুল কাজের জন্য কোনো রকম অনুশোচনা বা শাস্তির ভয় নেই, তাহলে তারা হয়তো সেই ভুল কাজ বারবার করতে উৎসাহিত হবে। একটি সঠিক শাসনের পদ্ধতি শিশুদের মধ্যে দায়িত্ববোধ এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের মতো গুণাবলী বিকাশে সাহায্য করে। তারা বুঝতে শেখে যে তাদের আচরণের একটি ফলাফল আছে।
কর্তৃপক্ষের কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা এই বিষয়টিকে সংবেদনশীলতার সাথে বিবেচনা করুন। যখন কোনো অভিভাবক বা শুভানুধ্যায়ী শিশুদের শাসনের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তখন তাদের ভুল ধারণা ভাঙানো প্রয়োজন। তাদের বোঝানো প্রয়োজন যে, এখানে যারা শিশুদের লালন-পালন করেন, তারা তাদের সর্বোচ্চ ভালো চান। তাদের শাসন হয়তো কখনো কখনো কঠোর মনে হতে পারে, কিন্তু তার পেছনে রয়েছে তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের সুরক্ষা এবং উন্নতি কামনার আন্তরিক প্রচেষ্টা।
তবে একইসাথে, কর্তৃপক্ষেরও একটি দায়িত্ব রয়েছে। শাসনের পদ্ধতি যেন সবসময় শিশুবান্ধব হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো প্রকার শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন যেন কোনোভাবেই প্রশ্রয় না পায়। প্রতিটি শিশুর মানসিক এবং আবেগিক চাহিদা বিবেচনা করে শাসনের পদ্ধতি নির্ধারণ করা উচিত। প্রয়োজনে প্রশিক্ষিত মনোবিদের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
পরিশেষে আমি এটাই বলতে চাই, ডিআইএসএস চাইল্ড হোমের শিশুদের শাসনকে একপেশেভাবে সমালোচনা করা উচিত নয়। বরং এর পেছনের উদ্দেশ্য এবং প্রেক্ষাপট বোঝার চেষ্টা করা উচিত। শিক্ষকের বা পরিচর্যাকারীর ব্যক্তিগত স্বার্থ এখানে মুখ্য নয়, মুখ্য হলো শিশুদের কল্যাণ। আসুন, আমরা সকলে মিলে এই শিশুদের একটি সুন্দর এবং সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য সহানুভূতিশীল হই এবং সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করি।

Logged
জ্ঞান অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলমানের (নারী ও পুরুষ) উপর ফরজ । জ্ঞানের শহর হলেন হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) আর সেই শহরের দরজা হলেন হজরত আলী (রাঃ) । জ্ঞান ব্যতীত কর্ম অর্থহীন আবার কর্ম ব্যতীত জ্ঞান অর্থহীন। জ্ঞানী হও তবে অহংকারী হইও না, ইবাদত কর তবে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে করোনা ।