Author Topic: আত্মহত্যা সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?  (Read 5783 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

ashraful.diss

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 387
  • জ্ঞানী হও তবে অহংকারী হইও না
    • View Profile
    • Email

আত্মহত্যা সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?

আত্মহত্যা বর্তমান সমাজে সংঘটিত জঘন্যতম পাপকাজগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। এ কারণেই ইসলামে আত্মহত্যা করা কবিরা গোনাহ। নিজেই নিজের জীবনকে চিরতরে ধ্বংস করে দেওয়ার নাম আত্মহত্যা। Suicide হচ্ছে আত্মহত্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ। লাতিন ভাষা Sui Sediur থেকে মূলত Suicide শব্দের উৎপত্তি। ইসলামে আত্মহত্যা যেমন মারাত্মক অপরাধ তেমনি এর শাস্তিও ভয়াবহ। এ সম্পর্কে ইসলামের বিধানই বা কী?

মানুষের জীবনের মালিক আল্লাহ; তিনি মানুষকে মৃত্যু দান করেন। কুরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-

‘জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী; অতঃপর তোমরা আমারই কাছে ফিরে আসবে।’ (সুরা আনকাবুত : আয়াত ৫৭)

এক্ষেত্রে আত্মহত্যা হচ্ছে এমন মৃত্যু; যা বান্দা কর্তৃক আল্লাহর পক্ষ থেকে স্বাভাবিক মৃত্যু উপেক্ষা করে নিজেই নিজের জীবনকে শেষ করে দেওয়া, যা ইসলামে মারাত্মক অপরাধ ও হারাম কাজ। আর পরকালে এর পরিণামও ভয়াবহ।

ইসলাম কখনও আত্মহত্যার মতো কোনো অপরাধকেই সমর্থন করে না। এহেন কর্ম থেকে বিরত থাকার গুরুত্ব প্রদান করে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনুল কারিমের একাধিক আয়াতে ঘোষণা করেন-


১. ‘তোমরা নিজেদের হত্যা করোনা; নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল।’ (সুরা নিসা : আয়াত ২৯)

২. ‘তোমরা নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৯৬)

যেসব কাজে বাড়ে আত্মহত্যার প্রবণতা

বর্তমান সময়ে সমাজে নানা শ্রেণির নানা পেশার মানুষের মাঝে আত্মহত্যার ব্যাপক প্রবণতা লক্ষণীয়। সম্প্রতি গবেষকরা আত্মহত্যার পেছনে কিছু মুখ্য কারণ উদ্ঘাটন করেছেন। তাহলো-

১. পারিবারিক কলহ

২. জীবন সংগ্রামে বিভিন্ন কাজে ব্যর্থতা ও হতাশা

৩. স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে মনোমালিন্য

৪. মানসিক অবসাদ ও যন্ত্রণা উল্লেখযোগ্য।

বিশেষ করে

আত্মহত্যার এ প্রবণতা খুব বেশি পরিলক্ষিত হয় উঠতি বয়সী তরুণ ও তরুণীদের মাঝে। এদের অনেকেই যেসব কারণে এ অপরাধে জড়িত হয়; তাহলো-

১. পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া কিংবা ভালো ফলাফল অর্জনে ব্যর্থতা হওয়া।

২. প্রেম-ভালোবাসায় ব্যর্থতা বা প্রেমিক-প্রেমিকার মাঝে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি থেকে অনেকেই নিজেদের প্রতি আত্মঘাতী হয়ে আত্মহত্যা করছে। অথচ ইসলামি শরিয়তে একজন তরুণ ও তরুণীর মাঝে বিবাহপূর্বক প্রেম কিংবা ভালোবাসা স্থাপন সম্পূর্ণরূপে হারাম তথা নিষিদ্ধ।

কিন্তু বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় যথাযথভাবে ইসলামি শিক্ষা পদ্ধতি চালু না থাকায় অসংখ্য ব্যক্তি ইসলামের এই সত্য বিধানকে অন্তর দিয়ে উপলদ্ধি করতে পারে না। ফলে দিন দিন আত্মহত্যার মাধ্যমে সমাজে মেধা শূন্যের সংখ্যা বেড়েই চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন স্কুল বা কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অসংখ্য মেধাবী শিক্ষর্থীরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।

আত্মহত্যার মতো মারাত্মক অপরাধ প্রবণতা থেকে সন্তানদের মুক্ত রাখতে প্রতিটি বাবা ও মায়ের উচিত নিজ সন্তানের প্রতি আরো যত্নবান হওয়া। কুরআন ও হাদিসের আলোকে নিজ সন্তানকে প্রেমের বিধান সম্পর্কে অবহিত করা। সন্তানের সঙ্গে এমন সুসম্পর্ক গড়ে তোলা- যাতে অনায়াসেই সন্তান জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত তার বাবা ও মাকে নির্ভয়ে জানাতে পারে।

ভূলে গেলে চলবে না, আত্মহত্যার মাধ্যমে শুধুই একটি জীবন প্রদীপ নিভে যায় না; বরং অন্তরে লুকিয়ে থাকা হাজারো স্বপ্ন মাটির সঙ্গে মিশে ধুলোয় পরিণত হয়।

পাশাপাশি কোনো কাজে ব্যর্থ হাওয়া মাত্রই আল্লাহর উপর ভরসা না করে অনেকেই হতাশায় ভুগে আত্মহত্যা করেন। অথচ আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বিভিন্ন বিপদ-আপদের সম্মুখীন হলে কর্তব্য কী হবে, সে সম্পর্কেও রয়েছে কুরআনের ঘোষণা। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর; নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলগণের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৩)

সকলের স্মরণে থাকা উচিত, আত্মহত্যার মারাত্মক অপরাধ প্রবণতা থেকে বাঁচতে জীবন পথে চলতে গিয়ে বহু বিপদের সম্মুখীন হতে হবে এবং অর্জিত হবে নানান অভিজ্ঞতা। শত বিপদের মাঝেও সর্বদা হাসিমুখে থাকার চেষ্টা করতে হবে। নিজের মাঝে পরিবর্তনের চেষ্টা ও জীবনকে নতুন করে সাজানোর প্রচেষ্টা করতে হবে।

এই জীবন যুদ্ধে যিনি প্রতিটি মুহূর্ত ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবেলা করবেন, দিন শেষে তিনিই সফলতার মুখ দেখতে পাবেন। বাংলা ভাষাযর সেই প্রবাদ বাক্যই তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত যে- ‘সবুরে মেওয়া ফলে’। আর এ সবর বা ধৈর্যশীলতাই মহান আল্লাহর কাছে একান্ত পছন্দনীয়। তিনি ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন। আল্লাহ বলেন-

‘আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন।

আত্মহত্যার ভয়াবহ পরিণতি

আত্মহত্যার পরিণতি মারাত্মক। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাধিক বর্ণনা পেশ করেছেন। আত্মহত্যাকারীর শাস্তি জাহান্নামে কিভাবে দেওয়া হবে ও এর পরিণাম সম্পর্কে যদি কেউ যথাযথভাবে অবহিত থাকে, তবে আল্লাহর কাছে আত্মহত্যা থেকে অবশ্যই সে পানাহ চাইবে এবং এহেন কর্মের প্রতি নিজের অন্তরে ঘৃণা জন্মাবে। আত্মহত্যার শাস্তির ধরণ সম্পর্কে হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এসেছে-

১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে (অনুরূপভাবে) নিজেকে ফাঁস লাগাতে থাকবে আর যে ব্যক্তি বর্শার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে (অনুরূপভাবে) বর্শা বিদ্ধ হতে থাকবে।’ (বুখারি)

২. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে লোক পাহাড়ের উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে সে জাহান্নামের আগুনে পুড়বে; চিরকাল সে জাহান্নামের ভেতরেৎ এভাবে লাফিয়ে পড়তে থাকবে। যে লোক বিষপানে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে জাহান্নামের মধ্যে তা পান করতে থাকবে। যে লোক লোহার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামের আগুনের ভিতর সে লোহা তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে তা দিয়ে নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে।

৩. এমনকি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে আত্মহত্যাকারীর জানাজাও পড়েননি। হাদিসে এসেছে-

হজরত জাবের ইবনে সামুরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এক ব্যক্তির লাশ উপস্থিত করা হল। সে চেপ্টা তীরের আঘাতে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জানাজা আদায় করেননি।’ (মুসলিম)

কুরআন সুন্নাহর আলোকে এটি প্রমাণিত যে, আত্মহত্যা মারাত্মক অপরাধ ও হারাম কাজ। আর এর পরিণতিও খুবই ভয়াবহ। আত্মহত্যাকারীকে জাহান্নামের আগুনে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে।

সুতরাং কুরআন সুন্নাহর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী হতাশা কিংবা যে কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে নিমিষেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া যাবে না। বরং এক আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতার মাধ্যমে জীবনের প্রতিটি কঠিন মুহূর্তে ধৈর্য ও নিজের মেধা খাঁটিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। কেননা আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়; বরং আবেগতাড়িত হয়ে নিজের ভূলে নিজের জীবনকে চিরতরে নিঃশেষ করে দেওয়া মারাত্মক ভুল ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আল্লাহ তাআলা সবাইকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুক। আত্মহত্যার মতো মারাত্মক অপরাধ ও হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন

জ্ঞান অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলমানের (নারী ও পুরুষ) উপর ফরজ । জ্ঞানের শহর হলেন হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) আর সেই শহরের দরজা হলেন হজরত আলী (রাঃ) । জ্ঞান ব্যতীত কর্ম অর্থহীন আবার কর্ম ব্যতীত জ্ঞান অর্থহীন। জ্ঞানী হও তবে অহংকারী হইও না, ইবাদত কর তবে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে করোনা ।