Daffodil Foundation Forum

Daffodil Institute of Social Sciences- DISS => Common Discussion => Religion => Topic started by: ashraful.diss on May 17, 2023, 04:19:33 AM

Title: পরামর্শ গ্রহণকারীর ত্রুটি
Post by: ashraful.diss on May 17, 2023, 04:19:33 AM
(https://www.kalerkantho.com/_next/image?url=http%3A%2F%2Fcdn.kalerkantho.com%2Fpublic%2Fnews_images%2F2021%2F09%2F22%2F2339502_kalerkantho-2021-22-pic-9.jpg&w=828&q=100)

পরামর্শ গ্রহণকারীর ত্রুটি


পরামর্শ গ্রহণকারীর কিছু ত্রুটি এখন উল্লেখ করব। সাধারণভাবে পরামর্শ গ্রহণকারী নিম্নোক্ত ভুলগুলো করে থাকে :

এক. পরামর্শ গ্রহণের পূর্বেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কেবল নামেমাত্র পরামর্শ করে।

দুই. পরামর্শদাতার সামনে বিষয়টি সঠিকভাবে উপস্থাপন করে না।

তিন. পরামর্শদাতার পরামর্শকে পরামর্শের পরিবর্তে নির্দেশ মনে করে।

চার. পরামর্শের পর কোনো সমস্যা দেখা দিলে পরামর্শদাতার ত্রুটি মনে করে থাকে।

এখন এগুলোর বিস্তারিত বিবরণ পেশ করছি।

 
প্রথম ত্রুটি : পরামর্শের পূর্বেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা

পরামর্শ গ্রহণকারীর প্রথম ত্রুটি হলো, যে বিষয়ে পরামর্শ করতে চায় আগে থেকেই ভেবেচিন্তে সে বিষয়ে মনে মনে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নেয়। এরপর কোনো স্যার বা টিমের পরামর্শ চায়। স্যার বা টিমের পরামর্শ তার সিদ্ধান্তের সঙ্গে মিলে গেলে বলবে, অমুক স্যার বা টিমের সঙ্গে পরামর্শ করে কাজ করেছি। না মিললে স্যার বা টিমের পরামর্শের কোনো তোয়াক্কা না করে নিজের পূর্বসিদ্ধান্তের উপরই অটল থাকে।


দ্বিতীয় ত্রুটি : পরামর্শদাতার কাছে বিষয়টি সঠিকভাবে উপস্থাপন না করা

দ্বিতীয় ত্রুটি হলো, পরামর্শদাতার কাছে বিষয়টি সঠিকভাবে উপস্থাপন করে না। কোনো স্যার বা মুরব্বীর পরামর্শ গ্রহণের সময় বিষয়টির সকল ভালো দিক এক এক করে উল্লেখ করতে থাকে। যেন পরামর্শদাতা তার পক্ষেই পরামর্শ প্রদান করেন। কিন্তু বিষয়টির অপর দিক উপস্থাপনই করে না যে, এতে কী কী ক্ষতি রয়েছে। স্যার থেকে নিজের পক্ষে পরামর্শ নিয়ে মানুষদের বলে বেড়ায়, অমুক স্যার এ পরামর্শ দিয়েছেন। পক্ষান্তরে সে কাজটি না করতে চাইলে স্যারের সামনে বিষয়টির সকল ত্রুটি ও ক্ষতির দিক এক এক করে উল্লেখ করতে থাকে। কিন্তু এর অপরদিক উল্লেখই করে না যে, এতে কী কী ফায়দা রয়েছে।

পরামর্শের এ পদ্ধতি একেবারেই ভুল। সঠিক পদ্ধতি হলো, পরামর্শদাতার সামনে বিষয়টির লাভ—ক্ষতি উভয় দিক সঠিকভাবে উপস্থাপন করবে। তিনি উভয় দিক গভীরভাবে বিবেচনা করে উপযুক্ত পরামর্শ প্রদান করবেন। এখন তো মানুষ সঠিক বিষয় উল্লেখ করে না। শুধু তেল মারতে থাকে। এভাবে পরামর্শের কী ফায়দা?

অনেক সময় কেউ পরামর্শের জন্য এলে তার কথাবার্তায় স্পষ্ট বুঝতে পারি, সে আমার মুখ থেকে এ কথা বের করতে চায়, হ্যাঁ, এটা ঠিক আছে। তার কথা থেকেই পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে যাই এবং বুঝতে পারি, এ কেবল নামমাত্র পরামর্শ করতে এসেছে। যেন সে বলতে পারে, আমি পরামর্শ করেই কাজ করেছি। বিষয়ের লাভ—ক্ষতি উভয় দিক বিস্তারিত উল্লেখ করার পরিবর্তে কেবল একটি দিক উল্লেখ করে পরামর্শ করা আজকাল মানুষের স্বভাবে পরিণত হয়েছে।


তৃতীয় ত্রুটি : পরামর্শকে নির্দেশ মনে করা

পরামর্শ গ্রহণকারী তৃতীয় যে ভুলটি করে তা হলো, পরামর্শদাতা কোনো পরামর্শ দিলে তা পরামর্শের পরিবর্তে নির্দেশ মনে করে। পরামর্শদাতা তো পরিস্থিতির বিবরণ শুনে কেবল এ পরামর্শ  দিয়েছে যে, আপনি যা বর্ণনা করেছেন তা থেকে এ কাজ করাই ভালো মনে হচ্ছে। এটা শুধুই পরামর্শ। পরামর্শদাতা তা পালনে তাকে বাধ্য করে না। তাকে কোনো প্রকার নির্দেশও প্রদান করে না যে, এটাই করুন। কিন্তু সে পরামর্শগ্রহণের পর লোকদের বলতে থাকে, অমুক আমাকে এমনটি করতে বলেছেন। অমুক স্যার আমাকে বলেছেন এ কাজ করতে, তাই করছি।

আরে ভাই, তিনি কখন আপনাকে নির্দেশ করলেন! সিদ্ধান্ত তো আপনি নিজেই গ্রহণ করলেন। ওই স্যার তো আপনাকে শুধু এ কথাই বলেছেন, আপনার বর্ণনা অনুযায়ী অমুক কাজ করাই ভালো মনে হয়। অতএব তা করাই ঠিক হবে। স্যার তো এ কাজটিকে বেশির থেকে বেশি উত্তম বলেছেন। তিনি কেন বলতে যাবেন, এ কাজ করা আপনার উপর ফরয, আপনাকে অবশ্যই এটা করতে হবে! কিন্তু পরামর্শগ্রহীতা মানুষকে বলে বেড়ায়, অমুক স্যার বলার কারণে করছি। এটা অবশ্যই ওই স্যারের প্রতি মিথ্যা অপবাদ।

 
চতুর্থ ত্রুটি : ক্ষতি হলে পরামর্শদাতাকে দোষী সাব্যস্ত করা

চতুর্থ ত্রুটি হলো, পরামর্শমতো কাজ করার পর ফায়দা হলে আর সে স্যার বা টিমের কথা বলে না। তার নাম আলোচনায় আনে না; বরং নিজের বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করতে থাকে। যেমন নাকি কারুন বলত, ‘যা কিছু আমি উপার্জন করেছি তার সবই নিজের জ্ঞান—বুদ্ধির জোরেই করেছি।’ একই অবস্থা আজকালের পরামর্শগ্রহীতাদের। পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করে কোনো ফায়দা হলে ওই স্যারের কথা আর মনে থাকে না, যার পরামর্শ গ্রহণ করেছিল বা যাকে দিয়ে দুআ করিয়েছিল; বরং নিজের যোগ্যতা ও জ্ঞান—বুদ্ধির কথাই বলতে থাকে যে, যত ফায়দা হয়েছে তা আমার নিজের জ্ঞান—বুদ্ধি ও চেষ্টা—প্রচেষ্টার ফসল। পক্ষান্তরে ফায়দার পরিবর্তে (আল্লাহ না করুন) ক্ষতি হয়ে গেলে এর সকল দায়ভার ওই স্যার বা টিমের কাঁধে চাপিয়ে দেয় যে, আমি এ কাজ নিজ সিদ্ধান্তে করিনি; বরং অমুক স্যার বা টিমের পরামর্শে করেছি। শুধু তা—ই নয়; আরেকটু আগ বেড়ে বলে, স্যারেই তো আমাকে এ কাজ করতে বলেছেন। অতএব আমাকে এ জন্যে তিরষ্কার করার কোনো কারণ নেই। আমি তো কেবল স্যারের নির্দেশ পালন করেছি মাত্র। তো সবখানে এ কথাই বলে বেড়ায়, এটা স্যারের নির্দেশ ছিল। তাঁর পরামর্শেই এ কাজ করা হয়েছে।

 
পরামর্শদাতার ত্রুটি

পরামর্শদাতা যে ভুলের শিকার হন :

এক. কিছু লোক পরামর্শ প্রদানে এতটাই আগ্রহী থাকে যে, অযথাই কারও পেছনে লেগে থাকে আর পরামর্শ চাওয়া ব্যতীত নিজ থেকেই পরামর্শ দিতে থাকে। এমন কাউকে পরামর্শ দিতে যাবেন না, যে আপনার কাছে পরামর্শ চায়নি। আবার এমন কাউকেও পরামর্শ দিতে যাবে না, যার কাছে আপনার পরামর্শের কোনো গুরুত্ব নেই।

দুই. পরামর্শ গ্রহণ করতে পীড়াপিড়ি করা এবং পরামর্শ গ্রহণ না করলে অসন্তুষ্ট হওয়া। এটা মারাত্মক ভুল। পরামর্শের মূলকথা নিজের মত প্রকাশ করা মাত্র। কেউ তা গ্রহণ করুক বা না করুক এতে সমস্যার কিছু নেই।

চলবে………………………………