এতিমদের প্রতি দায়িত্ব
(https://crimepatrolbd.com/wp-content/uploads/%E0%A6%8F%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%AE.jpg)
হজরত মোহাম্মদ (সা.) পিতৃহীন অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেন। ছয় বছর বয়সে তার মা দুনিয়া ছেড়ে চলে যান। তিনি তার দাদা ও চাচার অভিভাবকত্ব, ভরণপোষণ ও তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠেন।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তিনি কি আপনাকে এতিমরূপে পাননি? অতঃপর দিয়েছেন আশ্রয়।’ (সুরা দোহা, আয়াত : ৬)
এতিমের প্রতি ভালোবাসা
একবার ঈদের দিন সকালবেলা একটি শিশুকে ছিন্নবস্ত্র পরিহিত ও শরীর কাদায় মাখানো অবস্থায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাঁদতে দেখে রাসুল (সা.) আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। নবীজি (সা.) তাকে সঙ্গে করে বাড়িতে নিয়ে যান এবং উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-কে বলেন, ‘শিশুটিকে ভালোভাবে গোসল করিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দাও।’ আয়েশা (রা.) গোসল করানোর পর তিনি নিজ হাতে তাকে নতুন জামা পরিয়ে ঈদের নামাজ পড়তে নিয়ে যান। আদর করে শিশুটিকে বললেন, ‘আজ থেকে আমি তোমার বাবা আর আয়েশা তোমার মা।’
প্রতিপালনের মর্যাদা
এতিম প্রতিপালন ইসলামে এক অভাবনীয় মর্যাদা ও ফজিলত রয়েছে।
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমি ও এতিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকব’ বলে তিনি তার তর্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলি দিয়ে ইঙ্গিত করেন এবং এ দুটির মধ্যে একটু ফাঁক করেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৩০৪)
এতিমদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে অন্তর কোমল হয়, আত্মার প্রশান্তি লাভ হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে তার কঠিন হৃদয়ের ব্যাপারে অভিযোগ করলে রাসুল (সা.) বলেন, ‘এতিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দাও (ভালোবাসা ও সহমর্মিতায় কাছে টেনে নাও) এবং অভাবীকে আহার দাও।’ (মুসনাদ আহমদ)
অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি প্রেম-মমতায় কোনো এতিমের মাথায় হাত রাখবে, আল্লাহতায়ালা তাকে তার হাতের নিচের চুল পরিমাণ পুণ্য তাকে দান করবেন।’ (মুসনাদ আহমদ)
এতিমের সঙ্গে আচরণ
মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মুসলিমদের ওই বাড়িই সর্বোত্তম, যে বাড়িতে এতিম আছে এবং তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা হয়। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট ওই বাড়ি, যে বাড়িতে এতিম আছে অথচ তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়…।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৬৭৯)
এতিমদের ভালোবাসা, আহার দান করা নেককারদের গুণ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর তারা অভাবগ্রস্ত, এতিম ও বন্দিকে আল্লাহর ভালোবাসায় আহার দান করে।’ (সুরা ইনসান, হাদিস : ০৮)
আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয়, যাবতীয় পুণ্যকাজ সম্পাদন করেও যদি কেউ এতিমদের প্রতি ভালোবাসা ও মমতা পোষণ না করে। কিংবা তাদের কষ্ট দেয় বা সাধ্য থাকা সত্ত্বেও দুঃখ মোচনে সচেষ্ট না হয় তবে সে মহান আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণ সৎকর্মশীল হিসেবে গণ্য হতে পারবে না। এতিমের সঙ্গে অন্যায়, কঠোর আচরণ নিষিদ্ধ এবং এটি জঘন্যতম পাপও বটে। ইসলাম যেভাবে এতিম প্রতিপালন, তার সঙ্গে উত্তম আচরণ, তার সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ, তাকে সঠিকভাবে শিক্ষাদান ও উপযুক্ত বয়সে তার কাছে সম্পদ প্রত্যর্পণ, সব প্রকার ক্ষতি ব্যতিরেকে সার্বিক কল্যাণকামিতার নির্দেশ দিয়েছে। অনুরূপভাবে এতিমের সঙ্গে কঠোর ও রূঢ় আচরণ থেকেও কঠিনভাবে বারণ করে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘সুতরাং আপনি এতিমের প্রতি কঠোর হবেন না।’ (সুরা দোহা, আয়াত : ৯)
ইসলামে এতিমের অধিকার
আমরা কে না জানি- সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিতৃহীন তথা এতিম অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেন। আরও দুঃখের কথা হচ্ছে, তাঁর ছয় বছর বয়সকালে তাঁর পরমপ্রিয় মাতাও দুনিয়া ছেড়ে চলে যান। তিনি তাঁর দাদা ও চাচার অভিভাবকত্ব, ভরণপোষণ ও দেখাশোনায় বেড়ে উঠেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, তিনি কি আপনাকে এতিমরূপে পাননি? অতঃপর দিয়েছেন আশয়।›› (সুরা আদদোহা : ৬)
ইসলাম সাম্য ও ন্যায় পরায়তার ধর্ম। শুধু মানবকূল কেন প্রাণীজগতের প্রতি দয়া ও কোমল আচরণ করাও ইসলামের অন্যতম আদর্শ ও শিক্ষা।
পবিত্র কোরআন-হাদিসে এতিমের অধিকার, এতিমের প্রতি দয়া-অনুগ্রহের মর্যাদা ও পুরস্কারের কথা বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আর তোমার কাছে তারা জিজ্ঞেস করে, এতিম সংক্রান্ত বিধান। বলে দাও, তাদের কাজ-কর্ম সঠিকভাবে গুছিয়ে দেওয়া উত্তম। আর যদি তাদের ব্যয়ভার নিজের সাথে মিশিয়ে নাও, তাহলে মনে করবে তারা তোমাদের ভাই। বস্তুত: অমঙ্গলকামী ও মঙ্গলকামীদেরকে আল্লাহ জানেন। আল্লাহ যদি ইচ্ছা করতেন, তাহলে তোমাদের ওপর জটিলতা আরোপ করতে পারতেন। নিশ্চয়ই তিনি পরাক্রমশালী, মহাপ্রাজ্ঞ।’’ (সুরা আল-বাকারাহ : ২২০)
এতিমের সম্পদ সংরক্ষণ ও প্রত্যার্পণ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, এতিমদেরকে তাদের সম্পদ বুঝিয়ে দাও। মন্দ মালামালের সাথে ভালো মালামালের অদল-বদল করো না। আর তাদের ধন-সম্পদ নিজেদের ধন-সম্পদের সাথে সংমিশ্রিত করে তা গ্রাস করো না। নিশ্চয় এটি বড়ই মন্দ কাজ।›› (সুরা আননিসা : ২)
এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ করেন, আর এতিমদেরকে যাচাই করবে, যে পর্যন্ত না তারা বিয়ের যোগ্য হয়; অতঃপর তাদের মধ্যে ভাল-মন্দ বিচারের জ্ঞান দেখতে পেলে তাদের সম্পদ তাদেরকে ফিরিয়ে দাও। তারা বড় হয়ে যাবে বলে অপচয় করে তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলো না। যে অভাবমুক্ত সে যেন নিবৃত্ত থাকে এবং যে বিত্তহীন সে যেন সংযত পরিমাণে ভোগ করে। অতঃপর তোমরা যখন তাদেরকে তাদের সম্পদ ফিরিয়ে দিবে তখন সাক্ষী রেখো। আর হিসেব গ্রহণে আল্লাহই যথেষ্ট।›› (সুরা আননিসা : ৬)
উপর্যুক্ত প্রথম আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এতিমদের সাথে উত্তম ও সুন্দর আচরণ এবং তাদের কাজকর্ম, অধিকার ও পাওনা সহজভাবে সম্পন্ন করে দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় আয়াতে এতিমের অভিভাবকত্ব গ্রহণের বিধান ও পদ্ধতি, তাদের সম্পদ ব্যবহারের অনুমতি ও সীমাবদ্ধতা এবং তাদের সম্পদ তাদের কাছে হস্তান্তরে প্রক্রিয়া ও সময়কাল অত্যন্ত সুবিন্যস্তভাবে বর্ণনা করেছেন।
এতিমের সম্পদ ভক্ষণের ভয়াবহতা বর্ণনা করে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, যারা এতীমদের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করে এবং সত্ত্বরই তারা অগ্নিতে প্রবেশ করবে।›› (সুরা আননিসা : ১০)
ইসলাম যেভাবে এতিমের সাথে উত্তম আচরণ, এতিমের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ, সঠিক শিক্ষাদান ও উপযুক্ত বয়সে তার কাছে সম্পদ প্রত্যার্পণ, সকল প্রকার ক্ষতি ব্যতিরেকে সার্বিক কল্যাণসাধনের নির্দেশ দেয়। অনুরূপভাবে এতিমের সাথে কঠোর ও রূঢ় আচরণ থেকেও কঠিনভাবে বারণ করে।