বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তির দিশা
রহিম সাহেব, বছর তিরিশের যুবক। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েও গত দুই বছর ধরে তিনি হন্যে হয়ে কাজ খুঁজে চলেছেন। চাঁদপুর জেলার এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান রহিম। বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল ছেলে ভালো চাকরি করে সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু বাস্তবতা বড়ই কঠিন। একের পর এক ইন্টারভিউ দিয়েছেন, কিন্তু কোথাও মেলেনি সুযোগ। বন্ধুদের ভালো চাকরি দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন, রাতের ঘুম হারাম হয়েছে বেকারত্বের চিন্তায়।
রহিমের মতো অসংখ্য শিক্ষিত যুবক আজ বাংলাদেশে বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত। তাদের স্বপ্ন, তাদের সম্ভাবনা যেন অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। একটি স্থিতিশীল জীবনের আকাঙ্ক্ষা, পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর তাড়না – সবকিছুই বেকারত্বের কঠিন বেড়াজালে বন্দি।
ঠিক এই পরিস্থিতিতে, ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশন পরিচালিত “জীবিকা” চাঁদপুর প্রকল্প বেকার যুবকদের জন্য এক নতুন আশার আলো নিয়ে এসেছে। এই প্রকল্পটি শুধু আর্থিক সহায়তা প্রদানই করে না, বরং বেকারত্বের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে তাদের দক্ষতা উন্নয়নে এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
“জীবিকা” প্রকল্পের অধীনে বেকার যুবকদের বিভিন্ন ধরনের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এই প্রশিক্ষণগুলো বাজারের চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করা হয়, যাতে প্রশিক্ষণ শেষে সহজেই কাজের সুযোগ পাওয়া যায়। কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, মোবাইল সার্ভিসিং, ইলেকট্রনিক্স, পোশাক তৈরি, গ্রাফিক্স ডিজাইন – এমন বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ নিয়ে বহু যুবক আজ স্বাবলম্বী হয়েছে।
শুধু প্রশিক্ষণই নয়, “জীবিকা” প্রকল্প তরুণ উদ্যোক্তাদেরও উৎসাহিত করে। যাদের নিজস্ব ব্যবসা শুরু করার আগ্রহ আছে, তাদের জন্য স্বল্প ঋণের ব্যবস্থা করা হয় এবং ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করা হয়। এর ফলে অনেক যুবক আজ সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে, শুধু নিজেদের ভাগ্যই পরিবর্তন করেনি, অন্যদের জন্যও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
রহিম সাহেবও “জীবিকা” প্রকল্পের সন্ধান পান এক বন্ধুর মাধ্যমে। প্রথমে দ্বিধা থাকলেও, কর্মশালার কর্মীদের আন্তরিকতা দেখে তিনি আশ্বস্ত হন এবং গ্রাফিক্স ডিজাইনের কোর্সে ভর্তি হন। প্রশিক্ষকরা ছিলেন দক্ষ এবং বন্ধুভাবাপন্ন। রহিম মনোযোগ দিয়ে কাজ শেখেন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই ভালো দক্ষতা অর্জন করেন।
প্রশিক্ষণ শেষে “জীবিকা” প্রকল্প থেকেই রহিমের একটি ডিজাইন ফার্মে ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে কাজের সুযোগ পেয়ে রহিম নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেন এবং কিছুদিনের মধ্যেই স্থায়ী চাকরি লাভ করেন। আজ রহিম শুধু নিজের পরিবারের আর্থিক সংকটই দূর করেননি, বরং তার ছোট ভাইবোনদের লেখাপড়ার খরচও বহন করছেন। তার বাবা-মায়ের মুখে আজ গর্বের হাসি।
রহিমের মতো আরও অনেক বেকার যুবক “জীবিকা” প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন জীবনের সন্ধান পেয়েছে। এই প্রকল্পটি বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে একটি কার্যকরী পদক্ষেপ। শুধুমাত্র আর্থিক সাহায্য নয়, সঠিক প্রশিক্ষণ, দিকনির্দেশনা এবং আত্মবিশ্বাস যোগানোর মাধ্যমে “জীবিকা” বেকার যুবকদের কর্মজীবনে সফল হতে সাহায্য করে।
বেকারত্ব একটি জাতীয় সমস্যা এবং এর সমাধানে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশনের “জীবিকা” চাঁদপুর প্রকল্পের মতো উদ্যোগগুলো বেকারত্বের হার কমাতে এবং একটি সমৃদ্ধ ও আত্মনির্ভরশীল জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রয়োজন শুধু এই ধরনের উদ্যোগকে আরও সম্প্রসারিত করা এবং সমাজের সকল স্তরের মানুষের সহযোগিতা প্রদান করা। তবেই বেকারত্বের অন্ধকার থেকে মুক্তি পেয়ে আমাদের যুবসমাজ তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা বিকাশের সুযোগ পাবে এবং দেশের উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।