Daffodil Foundation Forum

Jeebika Project => About Jeebika => Topic started by: ashraful.diss on May 30, 2025, 10:03:57 PM

Title: নারীর ক্ষমতায়ন: একটি উন্নত সমাজের ভিত্তি
Post by: ashraful.diss on May 30, 2025, 10:03:57 PM
নারীর ক্ষমতায়ন: একটি উন্নত সমাজের ভিত্তি

নারী ও পুরুষ একটি সমাজের দুটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। একটি পাখির যেমন দুটি ডানা সমানভাবে কাজ না করলে উড়তে পারে না, তেমনি একটি সমাজও নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া পূর্ণাঙ্গরূপে বিকশিত হতে পারে না। নারীর ক্ষমতায়ন কেবল নারীর অধিকারের প্রশ্ন নয়, এটি একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার অপরিহার্য শর্ত।

ইসলামের আগমন মানব ইতিহাসে নারীর মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার এক বিপ্লবী পদক্ষেপ ছিল। জাহেলিয়াতের যুগে নারী ছিল অবহেলিত, ভোগ্যপণ্য ও উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত। ইসলাম নারীকে দিয়েছে সম্মান, মর্যাদা এবং সমাজের প্রতিটি স্তরে পুরুষের সমান অধিকারের স্বীকৃতি।

ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর ক্ষমতায়নের মূল ভিত্তি হলো আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি হিসেবে নারী ও পুরুষের সমমর্যাদা। কুরআন মাজীদে আল্লাহ বলেন:

يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَىٰ وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا ۚ إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ

"হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হও। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অধিক সম্মানিত যে অধিক মুত্তাকী। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।" (সূরা হুজুরাত, ৪৯:১৩)

এই আয়াত স্পষ্ট করে যে নারী ও পুরুষ উভয়ই একই উৎস থেকে সৃষ্ট এবং আল্লাহর কাছে মর্যাদার মাপকাঠি লিঙ্গ নয়, বরং তাকওয়া বা আল্লাহভীতি।

ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশন পরিচালিত “জীবিকা” চাঁদপুর প্রকল্প নারীর ক্ষমতায়নের গুরুত্ব গভীরভাবে উপলব্ধি করে এবং এই লক্ষ্যে বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো চাঁদপুর জেলার প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করে তোলা, যাতে তারা আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাসের সাথে জীবন যাপন করতে পারে এবং সমাজের উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে।

অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন:

“জীবিকা” চাঁদপুর প্রকল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের উপর জোর দেওয়া। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নারীকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দেয় এবং অন্যের উপর নির্ভরশীলতা কমায়। এই লক্ষ্যে প্রকল্পটি নারীদের বিভিন্ন ধরনের আয়-উৎপাদনমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করে। ক্ষুদ্র ঋণ ও অনুদান প্রদানের মাধ্যমে নারীদের ছোট ব্যবসা শুরু করতে উৎসাহিত করা হয়। হস্তশিল্প, সেলাই, পোল্ট্রি পালন, সবজি চাষের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা হয়, যাতে তারা নিজেরাই উপার্জন করতে সক্ষম হন।

সামাজিক ক্ষমতায়ন:

অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি নারীর সামাজিক ক্ষমতায়নও অত্যন্ত জরুরি। “জীবিকা” প্রকল্প নারীদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে। নারী ও শিশু অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মশালা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। বাল্যবিবাহ, নারী নির্যাতন ও যৌতুকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য নারীদের সংগঠিত করা হয় এবং আইনি সহায়তা প্রদান করা হয়। এর মাধ্যমে নারীরা তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হন এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস পান।

“জীবিকা”র প্রভাব:

“জীবিকা” চাঁদপুর প্রকল্পের মাধ্যমে ইতোমধ্যে বহু নারী তাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়েছেন। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে তারা সংসারে নিজেদের মতামত প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে তারা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে আরও বেশি সোচ্চার হয়েছেন এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস অর্জন করেছেন।

নারীর ক্ষমতায়ন একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া এবং এর জন্য সমাজের সকল স্তরের মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশন পরিচালিত “জীবিকা” চাঁদপুর প্রকল্পের মতো উদ্যোগগুলো নারীর ক্ষমতায়নের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আসুন, আমরা সকলে মিলে এই মহৎ উদ্দেশ্যে হাত বাড়াই এবং একটি এমন সমাজ গড়ে তুলি যেখানে নারী ও পুরুষ সমান সুযোগ ও মর্যাদা নিয়ে জীবন যাপন করতে পারে। কারণ নারীর ক্ষমতায়নের মধ্যেই নিহিত রয়েছে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।