Daffodil Foundation Forum

Daffodil Institute of Social Sciences- DISS => Writeup => Article => Topic started by: Farhana Haque on September 12, 2020, 02:57:19 AM

Title: পথশিশুর ঠিকানা পথেই থেকে যাবে?
Post by: Farhana Haque on September 12, 2020, 02:57:19 AM
(https://www.dandc.eu/sites/default/files/styles/article_stage/public/article_stage/sw-atkinson-sheppard-strassenkinder-1.jpg?itok=AO_qykLT)

মানুষের মানবতা এবং মনুষ্যত্ব দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। যার ফলে পথশিশুর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের বিবেক কখনো কি নাড়া দেয় না? আজ যে ছোট ছোট বাচ্চা রাস্তায় পত্রিকা বিক্রি করে, ফুল বিক্রি করে কিংবা কিছু খাবে বলে টাকা চায় তাদের ভবিষ্যৎ কী? যে বয়সে তাদের হাতে থাকা উচিত বই-খাতা আজ তাদের হাতে প্লাস্টিকের বস্তা। রাস্তায় রাস্তায় তারা প্লাস্টিক খোঁজে। কী নির্মম বেদনাময় দৃশ্য। ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশে পথশিশুর সংখ্যা ছিল ১০ লাখ। বর্তমানে পথশিশুর সংখ্যা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো জরিপ পাওয়া যায় নি।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পথশিশুদের ৫১ ভাগ ‘অশ্লীল কথার শিকার’ হয়। শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয় ২০ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি যৌন হয়রানির শিকার হয় মেয়েশিশু। ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ পথশিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। আর মেয়ে পথশিশুদের মধ্যে ৪৬ ভাগ যৌন নির্যাতনের শিকার। সোশ্যাল এন্ড ইকোনমিক অ্যানহান্সমেন্ট প্রোগ্রাম (সিপ) নামের একটি সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পথশিশুদের প্রায় ৪৪ শতাংশ মাদকাসক্ত, ৪১ শতাংশ শিশুর ঘুমানোর কোনো বিছানা নেই, ৪০ শতাংশ শিশু গোসল করতে পারে না, ৩৫ শতাংশ খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে, ৫৪ শতাংশ অসুস্থ হলে দেখার কেউ নেই এবং ৭৫ শতাংশ শিশু অসুস্থ হলে ডাক্তারের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারে না। পথশিশুদের জীবনযাপন অনেক জটিল। ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ থেকে তারা নানা জিনিস সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য। তারা নানা রোগে আক্রান্ত হয়। পথশিশুদের ২৫-৩০ ভাগ মেয়ে। তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, পথশিশুদের ৮২ শতাংশই নানা ধরনের পেটের অসুখে আক্রান্ত। এই অসুখের পেছনে যে অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ দায়ী, তা বলাই বাহুল্য। পাশাপাশি নোংরা পরিবেশে থাকার কারণে এদের মধ্যে চর্মরোগের হারও অনেক বেশি, চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় ভাসমান এই শিশুদের ৬১ শতাংশই কোনো না কোনো চর্মরোগে আক্রান্ত।
 
ঢাকাসহ সারাদেশে পথশিশুদের নিয়ে অনেক বেসরকারি সংগঠন কাজ করে। কেউ খাবার দেয়। কেউ পোশাক দেয়। কেউ দেয় শিক্ষা। কেউ আবার তাদের বিনোদনের ব্যবস্থাও করে। তবে দিনশেষে তাদের পথেই ফিরে যেতে হয়। তাদের পুরোপুরি পুনর্বাসনের জন্য খুব বেশি উদ্যোগ নেই। শহরে অনেক বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগ আছে এই পথশিশুদের জন্য। সরকারি কিছু উদ্যোগও আছে। কিন্তু এর কোনো উদ্যোগই টেকসই নয়। আসলে তাদের দরকার স্থায়ী পুনর্বাসন। ফ্যামিলি অ্যাটাচমেন্ট। সেটা কীভাবে করা যায় তা সরকারকে ভাবতে হবে। তাদের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনাই হলো আসল কাজ। তাদের শিক্ষা, থাকার স্থায়ী জায়গা এবং খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। তারা যদি যেখানে আছে, সেখানেই থাকে, তাহলে কোনো লাভ নেই। পথ থেকে তাদের ঘরে তুলতে হবে। এসব বাচ্চা যদি কোনো গাইডলাইনের ভেতর দিয়ে না যায় তবে তাদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত অন্ধকারে।

এখন দেখা যায় পরিবারের সঙ্গে থেকেও ছেলেমেয়েরা বিপথে চলে যায়। সেখানে রাস্তায় থাকা এসব ছেলেমেয়েকে বিপথে নিয়ে যাওয়া কোনো ব্যাপার বলে মনে হয় না। তাই তাদের সরকারের সহায়তায় হোক আর বেসরকারি সহায়তায় হোক থাকা-খাওয়া এবং পড়াশোনার মাধ্যমে অন্যান্য শিশুর মতো জীবনযাপন করার সুযোগ করে দিতে হবে। তবেই পথশিশু নামক কোনো নাম শিশুর সঙ্গে যুক্ত হবে না। দেশ থেকে মুছে যাবে টোকাই নামক শব্দটি। পথশিশুর ঠিকানা যদি পথেই থেকে যায় তবে এসব শিশুর জন্য লোক দেখানো ভালোবাসায় কিছুই হবে না। আপনি ১০০টা শিশুকে লোক দেখানো সেবা না দিয়ে একটা শিশুর দায়িত্ব নিন। যেন সেই শিশুটা বড় হয়ে কিছু করতে পারে। এভাবে প্রতিটা সংগঠন যদি পথশিশুদের সাময়িক সেবা এবং খাবার না দিয়ে তাদের পুরো দায়িত্ব নেয়, তাহলে অন্তত কিছু শিশু হলেও দেশের সম্পদ হিসেবে রূপান্তরিত হবে।

লেখকঃ আজহার মাহমুদ, খুলশী,