(https://assets.roar.media/assets/XQxZ9OacT2Aa6FOG_hug.JPG?w=412)
শোকার্ত ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দেবো
জাফর ইবনু আবী তালিব (রাঃ) মূতার যুদ্ধে গেলেন। যুদ্ধ শেষে সবাই বাড়ি ফিরে আসছিলেন। জাফরের স্বী আসমা ভাবলেন, তাঁর স্বামীও ফিরে আসবেন যুদ্ধ থেকে। তাই তিনি রুটি বানালেন। ছেলে-মেয়েদের গোসল করিয়ে নতুন জামা পরালেন। তাদের মাথায় তেল দিয়ে চুল আঁচড়ে দিলেন। আর অপেক্ষা করতে লাগলেন জাফরের জন্য।
এমন সময় নবি (সাঃ) এলেন জাফরের বাড়িতে। নবিজিকে দেখে জাফরের ছোট ছেলে-মেয়েগুলো দৌড়ে এল। নবিজি তাদের জড়িয়ে ধরে চুমু খেলেন। কিন্তু আসমা দেখলেন, নবিজির চোখ থেকে অশ্রু ঝরছে! এই দৃশ্য দেখে ভয় পেয়ে গেলেন আসমা। তিনি বললেন, ‘আপনি কাঁদছেন কেন? কোনো দুঃসংবাদ আছে?’ নবিজি বললেন, “হ্যা! জাফর শহীদ হয়েছে!” একথা শুনে আসমা কাঁদতে লাগলেন। মায়ের কান্না দেখে ছোট বাচ্চারা চুপ হয়ে গেল। প্রতিবেশী মহিলারা এসে আসমাকে সান্ত্বনা জানাতে লাগল। নবিজি বাড়ি ফিরে তাঁর স্ত্রীদের বললেন, “তোমরা জাফরের পরিবারের জন্য খাবার বানাও। আজ ওদের দুঃখের দিন।”
বন্ধুরা, মুমিনের দুঃখে সান্ত্বনা দেওয়া অনেক সাওয়াবের কাজ। তাই নবিজি সেদিন জাফর ইবনু আবী তালিবের বাড়িতে গিয়েছিলেন সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য। নবি (সাঃ) বলেন, “যে মুমিন অন্য মুমিনের দুঃখে সান্ত্বনা দেয়, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামাতের দিন তাঁকে জান্নাতের পোশাক পরাবেন।”
কথা বলব সুন্নাহ মেনে
১। হাই বা হ্যালো নয়;
বলবে,
আস-সালামু আলাইকুম
২। ‘থ্যাংক ইউ’ বা ‘ধন্যবাদ’ নয়;
বলবে,
জাযাকাল্লাহ খাইরান!
মানে, আল্লাহ তোমাকে উত্তম বিনিময় দিন!
৩। ‘বাই! ভালো থেকো!’ বলবে না।
বলবে,
ফী আমানিল্লাহ
আল্লাহ হাফেজ
আল্লহর নিরাপত্তায় থাকো!
আল্লাহ তোমাকে হেফাজত করুন!
৪। ‘বাহ, বাহ! ওয়াও!’ বলে কী লাভ?
বরং সুন্দর ও আশ্চর্যজনক কিছু দেখলে বলবে, সুবহানাল্লাহ!
৫। ‘ওকে, ঠিক আছে’ না বলে
বলবে,
ইনশা আল্লাহ!
৬। বেশি বেশি আলহামদুলিল্লাহ বলবে,
তুমি কেমন আছ?
আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি!
রাস্তায় বসারও আদব আছে
একদিন নবি (সাঃ) দেখলেন কয়েকজন সাহাবি রাস্তায় বসে কথাবার্তা বলছেন। তিনি বললেন, “তোমরা রাস্তায় বসা ছেড়ে দাও।” সাহাবিরা বললেন, ‘আল্লাহর রাসূল, এখানে বসা ছাড়া আমাদের আর কোনো ঊপায় নেই। এটাই আমাদের বসার জায়গা। এখানেই আমরা কথাবার্তা বলি।’ নবিজি বললেন, “যদি রাস্তায় বসতেই হয়, তাহলে রাস্তার হক আদায় করবে।” তারা বললেন, ‘রাস্তার হক কী?’ তিনি বললেন,
১। কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়া।
২। দৃষ্টি নামিয়ে রাখা।
৩। সালামের জবাব দেওয়া।
৪। ভালো কাজে আদেশ করা।
৫। মন্দ কাজে নিষেধ করা।
আরেকদিন নবি (সাঃ) বলেন, “আমি এক ব্যক্তিকে জান্নাতে ঘুরে বেড়াতে দেখেছি। লোকটি রাস্তা থেকে একটি কাঁটাওয়ালা ডাল সরিয়ে দিয়েছিল। এই কাজে খুশি হয়ে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং জান্নাত দিয়েছেন।”
সফরের আদব
১। সফরে যাওয়ার আগে বলবে, سُبْحَانَ الَّذِيْ سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَه مُقْرِنِيْنَ
“আল্লাহ এই বাহনকে আমাদের জন্য অনুগত করে দিয়েছেন। তিনি মহাপবিত্র। (তিনি না চাইলে) আমরা একে অনুগত করার ক্ষমতা রাখি না।”
২। সফরে যাওয়ার আগে পরিবার ও বন্ধুদের থেকে বিদায় নেবে। ঋণ পরিশোধ করবে, আমানত ফিরিয়ে দেবে, কারও প্রতি জুলুম করলে মাফ চেয়ে নেবে। কারণ এ সফর থেকে তুমি নাও ফিরতে পারো!
৩। সফর থেকে ফেরার সময় বলবে, اٰيِبُوْنَ تَائِبُونَ عَابِدُونَ لِرَبِّنَا حَامِدُوْنَ
“ফিরে আসছি, তাওবা করছি, ইবাদাত করছি আল্লাহর, প্রশংসাও করছি তার।”
৪। বৃহস্পতিবার সফরে বের হওয়া পছন্দনীয়, ভোরে রওনা দেওয়া উত্তম। দু’আ ও যিকরের সাথে পথ চলবে।
৫। নিরুপায় না হলে জুমু’আর দিনে সফর করা উচিত নয়। কারণ এতে অনেক সময় জুমু’আর সালাত ছুটে যায়।
৬। একসাথে কয়েকজন সফরে গেলে একজনকে আমীর বানিয়ে নেবে। দূরের যাত্রায় একাকী সফর করবে না, কুকুর ও ঘণ্টা নিয়ে সফর করবে না।
৭। অচেনা স্থানে বিশ্রাম নিলে এবং রাতে ঘুমালে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইবে। যে পথে হিংস্র প্রাণী ও বিষাক্ত কীটপতঙ্গ চলে, সেখানে ঘুমাবে না।
৮। সফর শেষে দ্রুত বাড়ি ফিরবে। ফেরার আগে বাড়ির লোককে জানিয়ে আসবে।
৯। মেয়েদের একা সফরে যাওয়া নিষেধ। সাথে মাহরাম-পুরুষ থাকতে হবে।
পথ চলব আদবের সাথে
১। বিনয়ের সাথে পথ চলবে। অহংকার করবে না, জাঁকজমক দেখিয়ে চলবে না। আল্লাহ বলেছেন, “রহমানের বান্দারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে।” তুমিও তা-ই করবে।
২। দৃষ্টি নত করে রাখবে, বেপর্দা নারীদের দিকে তাকাবে না। মেয়েরাও পরপুরুষের দিকে তাকাবে না।
৩। পথে ময়লা-আবর্জনা ফেলবে না। পেশাব-পায়খানা করবে না। মানুষের কষ্ট হয় এমন কাজ করবে না।
৪। পথে কারও সাহায্য লাগলে সাহায্য করবে।যেমনঃ পথিককে পথ চিনিয়ে দেবে, অন্ধকে রাস্তা পার করে দেবে।
৫। মানুষকে সালাম দেবে, সালামের জবাব দেবে। সৎ কাজের আদেশ করবে, মন্দ কাজে বাধা দেবে, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেবে।
৬। নারী-পুরুষ মিলেমিশে পথ চলবে না। মেয়েরা চলবে রাস্তার কিনারা দিয়ে আর পুরুষরা চলবে মাঝখান দিয়ে।
৭। পথ চলবে মধ্যম গতিতে। একেবারে ধীরেও নয় আবার অতি দ্রুতও নয়।
৮। মেয়েরা মাহরাম ছাড়া একাকী পথ চলবে না। পর্দা করে মাহরামের সাথে বের হবে; যেমনঃ তোমার বাবা, আপন ভাই, চাচা, মামা।
৯। মাঝে মাঝে খালি পায়ে হাঁটা সুন্নত।