Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - ashraful.diss

Pages: 1 ... 11 12 [13]
181
গল্প শুনি কুরআন থেকে পর্ব - ০৪

https://www.youtube.com/watch?v=ffX6c_DGAoo

182
গল্প শুনি কুরআন থেকে পর্ব - ০৩

https://www.youtube.com/watch?v=pmmHUfoV20s

183
গল্প শুনি কুরআন থেকে পর্ব - ০২


https://www.youtube.com/watch?v=KjMFgJkAfz4

184
গল্প শুনি কুরআন থেকে পর্ব - ০১

https://www.youtube.com/watch?v=vWzJ--QY3MY

185

কোরবানীর মাহাত্ম্য

تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَ مِنْكُمْ

তাকাব্বালাললাহু মিন্না ওয়া মিনকুম।


আজকের এই দিনে কেউ হাসে কেউ কাঁদে। কেউ আনন্দিত। কেউবা বিমর্ষ। আপনারা এই দিনের মহত্ব সম্পর্কে জানেন তো? আজকের এই দিনে এমন একটি বিশেষ মূহুর্ত রয়েছে যে মুহূর্তে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন বান্দার সমস্ত ভাল এবং মন্দ, আমলগুলো কবুল করেন। যার পরিনাম ভাল কাজের হলে তার পুরস্কার  আল্লাহ্পাক তা দশগুন থেকে সাতশতগুন বৃদ্ধি করে দেবেন। যা আপনি কল্পনাও করেন নি। আর মন্দ হলে সেটার পরিনাম  আপনার জন্য অপরিনামদর্শী মন্দ বয়ে আনবে যা আপনি দুনিয়াতেই অবলোকন করবেন, এবং আলম ই বারযাখ থেকে জাহান্নাম পর্যন্ত যার কোন শেষ নেই। যা অনন্ত। (বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীস)
 
মনের পশুত্ব কোরবানী দেওয়ার নামই প্রকৃতপক্ষে কোরবানী। কোরবানী শব্দের অর্থ হলো ত্যাগ করা। কোরবানী বা ত্যাগ তিন প্রকার। ১. জানের কোরবানী ২. মালের কোরবানী। ৩. মনের কোরবানী। তিন নাম্বারটাই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয়। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন:

لَنۡ يَّنَالَ اللّٰهَ لُحُـوۡمُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلٰـكِنۡ يَّنَالُهُ التَّقۡوٰى مِنۡكُمۡ​ؕ كَذٰلِكَ سَخَّرَهَا لَـكُمۡ لِتُكَبِّرُوا اللّٰهَ عَلٰى مَا هَدٰٮكُمۡ​ؕ وَبَشِّرِ الۡمُحۡسِنِيۡنَ‏-


‘নিশ্চই আমার নিকট কোরবানির পশুর গোশত ও রক্ত কিছুই কবুল হয় না, তবে আমার নিকট পৌঁছে তোমাদের নিয়ত, এখলাস ও একমাত্র তাকওয়া। (সূরা হজ-৩৭)।

আপনার ছোট বড় সকল কোরবানী আল্লাহ্ কবুল করুন। আমীন।

পবিত্র ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা।

ঈদ মোবারক!

186
এতিমদের প্রতি দায়িত্ব


হজরত মোহাম্মদ (সা.) পিতৃহীন অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেন। ছয় বছর বয়সে তার মা দুনিয়া ছেড়ে চলে যান। তিনি তার দাদা ও চাচার অভিভাবকত্ব, ভরণপোষণ ও তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠেন।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তিনি কি আপনাকে এতিমরূপে পাননি? অতঃপর দিয়েছেন আশ্রয়।’ (সুরা দোহা, আয়াত : ৬)

এতিমের প্রতি ভালোবাসা

একবার ঈদের দিন সকালবেলা একটি শিশুকে ছিন্নবস্ত্র পরিহিত ও শরীর কাদায় মাখানো অবস্থায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাঁদতে দেখে রাসুল (সা.) আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। নবীজি (সা.) তাকে সঙ্গে করে বাড়িতে নিয়ে যান এবং উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-কে বলেন, ‘শিশুটিকে ভালোভাবে গোসল করিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দাও।’ আয়েশা (রা.) গোসল করানোর পর তিনি নিজ হাতে তাকে নতুন জামা পরিয়ে ঈদের নামাজ পড়তে নিয়ে যান। আদর করে শিশুটিকে বললেন, ‘আজ থেকে আমি তোমার বাবা আর আয়েশা তোমার মা।’

প্রতিপালনের মর্যাদা

এতিম প্রতিপালন ইসলামে এক অভাবনীয় মর্যাদা ও ফজিলত রয়েছে।

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমি ও এতিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকব’ বলে তিনি তার তর্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলি দিয়ে ইঙ্গিত করেন এবং এ দুটির মধ্যে একটু ফাঁক করেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৩০৪)

এতিমদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে অন্তর কোমল হয়, আত্মার প্রশান্তি লাভ হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে তার কঠিন হৃদয়ের ব্যাপারে অভিযোগ করলে রাসুল (সা.) বলেন, ‘এতিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দাও (ভালোবাসা ও সহমর্মিতায় কাছে টেনে নাও) এবং অভাবীকে আহার দাও।’ (মুসনাদ আহমদ)

অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি প্রেম-মমতায় কোনো এতিমের মাথায় হাত রাখবে, আল্লাহতায়ালা তাকে তার হাতের নিচের চুল পরিমাণ পুণ্য তাকে দান করবেন।’ (মুসনাদ আহমদ)

এতিমের সঙ্গে আচরণ

মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মুসলিমদের ওই বাড়িই সর্বোত্তম, যে বাড়িতে এতিম আছে এবং তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা হয়। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট ওই বাড়ি, যে বাড়িতে এতিম আছে অথচ তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়…।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৬৭৯)

এতিমদের ভালোবাসা, আহার দান করা নেককারদের গুণ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর তারা অভাবগ্রস্ত, এতিম ও বন্দিকে আল্লাহর ভালোবাসায় আহার দান করে।’ (সুরা ইনসান, হাদিস : ০৮)

আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয়, যাবতীয় পুণ্যকাজ সম্পাদন করেও যদি কেউ এতিমদের প্রতি ভালোবাসা ও মমতা পোষণ না করে। কিংবা তাদের কষ্ট দেয় বা সাধ্য থাকা সত্ত্বেও দুঃখ মোচনে সচেষ্ট না হয় তবে সে মহান আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণ সৎকর্মশীল হিসেবে গণ্য হতে পারবে না। এতিমের সঙ্গে অন্যায়, কঠোর আচরণ নিষিদ্ধ এবং এটি জঘন্যতম পাপও বটে। ইসলাম যেভাবে এতিম প্রতিপালন, তার সঙ্গে উত্তম আচরণ, তার সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ, তাকে সঠিকভাবে শিক্ষাদান ও উপযুক্ত বয়সে তার কাছে সম্পদ প্রত্যর্পণ, সব প্রকার ক্ষতি ব্যতিরেকে সার্বিক কল্যাণকামিতার নির্দেশ দিয়েছে। অনুরূপভাবে এতিমের সঙ্গে কঠোর ও রূঢ় আচরণ থেকেও কঠিনভাবে বারণ করে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘সুতরাং আপনি এতিমের প্রতি কঠোর হবেন না।’ (সুরা দোহা, আয়াত : ৯)

ইসলামে এতিমের অধিকার

আমরা কে না জানি- সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিতৃহীন তথা এতিম অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেন। আরও দুঃখের কথা হচ্ছে, তাঁর ছয় বছর বয়সকালে তাঁর পরমপ্রিয় মাতাও দুনিয়া ছেড়ে চলে যান। তিনি তাঁর দাদা ও চাচার অভিভাবকত্ব, ভরণপোষণ ও দেখাশোনায় বেড়ে উঠেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, তিনি কি আপনাকে এতিমরূপে পাননি? অতঃপর দিয়েছেন আশয়।›› (সুরা আদদোহা : ৬)

ইসলাম সাম্য ও ন্যায় পরায়তার ধর্ম। শুধু মানবকূল কেন প্রাণীজগতের প্রতি দয়া ও কোমল আচরণ করাও ইসলামের অন্যতম আদর্শ ও শিক্ষা।

পবিত্র কোরআন-হাদিসে এতিমের অধিকার, এতিমের প্রতি দয়া-অনুগ্রহের মর্যাদা ও পুরস্কারের কথা বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আর তোমার কাছে তারা জিজ্ঞেস করে, এতিম সংক্রান্ত বিধান। বলে দাও, তাদের কাজ-কর্ম সঠিকভাবে গুছিয়ে দেওয়া উত্তম। আর যদি তাদের ব্যয়ভার নিজের সাথে মিশিয়ে নাও, তাহলে মনে করবে তারা তোমাদের ভাই। বস্তুত: অমঙ্গলকামী ও মঙ্গলকামীদেরকে আল্লাহ জানেন। আল্লাহ যদি ইচ্ছা করতেন, তাহলে তোমাদের ওপর জটিলতা আরোপ করতে পারতেন। নিশ্চয়ই তিনি পরাক্রমশালী, মহাপ্রাজ্ঞ।’’ (সুরা আল-বাকারাহ : ২২০)

এতিমের সম্পদ সংরক্ষণ ও প্রত্যার্পণ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, এতিমদেরকে তাদের সম্পদ বুঝিয়ে দাও। মন্দ মালামালের সাথে ভালো মালামালের অদল-বদল করো না। আর তাদের ধন-সম্পদ নিজেদের ধন-সম্পদের সাথে সংমিশ্রিত করে তা গ্রাস করো না। নিশ্চয় এটি বড়ই মন্দ কাজ।›› (সুরা আননিসা : ২)

এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ করেন, আর এতিমদেরকে যাচাই করবে, যে পর্যন্ত না তারা বিয়ের যোগ্য হয়; অতঃপর তাদের মধ্যে ভাল-মন্দ বিচারের জ্ঞান দেখতে পেলে তাদের সম্পদ তাদেরকে ফিরিয়ে দাও। তারা বড় হয়ে যাবে বলে অপচয় করে তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলো না। যে অভাবমুক্ত সে যেন নিবৃত্ত থাকে এবং যে বিত্তহীন সে যেন সংযত পরিমাণে ভোগ করে। অতঃপর তোমরা যখন তাদেরকে তাদের সম্পদ ফিরিয়ে দিবে তখন সাক্ষী রেখো। আর হিসেব গ্রহণে আল্লাহই যথেষ্ট।›› (সুরা আননিসা : ৬)

উপর্যুক্ত প্রথম আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এতিমদের সাথে উত্তম ও সুন্দর আচরণ এবং তাদের কাজকর্ম, অধিকার ও পাওনা সহজভাবে সম্পন্ন করে দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় আয়াতে এতিমের অভিভাবকত্ব গ্রহণের বিধান ও পদ্ধতি, তাদের সম্পদ ব্যবহারের অনুমতি ও সীমাবদ্ধতা এবং তাদের সম্পদ তাদের কাছে হস্তান্তরে প্রক্রিয়া ও সময়কাল অত্যন্ত সুবিন্যস্তভাবে বর্ণনা করেছেন।

এতিমের সম্পদ ভক্ষণের ভয়াবহতা বর্ণনা করে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, যারা এতীমদের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করে এবং সত্ত্বরই তারা অগ্নিতে প্রবেশ করবে।›› (সুরা আননিসা : ১০)

ইসলাম যেভাবে এতিমের সাথে উত্তম আচরণ, এতিমের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ, সঠিক শিক্ষাদান ও উপযুক্ত বয়সে তার কাছে সম্পদ প্রত্যার্পণ, সকল প্রকার ক্ষতি ব্যতিরেকে সার্বিক কল্যাণসাধনের নির্দেশ দেয়। অনুরূপভাবে এতিমের সাথে কঠোর ও রূঢ় আচরণ থেকেও কঠিনভাবে বারণ করে।

187

মাহে রমজানের ফজিলত, গুরুত্ব ও তাৎপর্য (১ ম পর্ব)

সমস্ত প্রশংসা, শোকর, ছানা, হামদ সেই মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার যিনি রমজানকে শ্রেষ্ঠ মাস হিসেবে নির্ধারন করেছেন এবং সে সময় মু'মিন মুসলিমের প্রত্যেক ভাল কাজের প্রতিদান বৃদ্ধি করে দেয়ার সুসংবাদ দিয়েছেন। আহ! আমাদের সময়গুলো কতই না দ্রুত কেটে যাচ্ছে। চলন্ত মেঘমালার ন্যায় দিনগুলো গন্তব্যের দিকে ছুটে যাচ্ছে দূরন্ত গতিতে! বছর কতই না দ্রুত কেটে যাচ্ছে! আর আমরা জীবন চলার পথে বেখবর-অলস সময় কাটাচ্ছি! হায়, আমাদের চেতনা কবে ফিরে আসবে! আমরা কখন জাগব! আমাদের মধ্যে কম সংখ্যক লোক এমন আছেন যারা বাস্তবতা ও পরিণতি নিয়ে চিন্তা করছেন অথবা তার থেকে উপদেশ গ্রহণ করছেন। রমজানুল মোবারক আমাদের দ্বারে উপনীত। স্বাগতম প্রিয় মাহে রমজান!

আলহামদুলিল্লাহ। মানব জীবনের সংক্ষিপ্ত এবং নির্ধারিত বয়স ও অল্প সময়ের মধ্যে আল্লাহ তাআলা তার জন্য অধিক পরিমান সওয়াব লাভের জন্য ভাল কাজের কিছু মৌসুম রেখেছেন। তার জন্য স্থান এবং কালের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন কখনও কখনও। যে কাল ও স্থানের মাধ্যমে সে তার ত্রুটি বিচ্যুতির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে। সেসব বিশেষ মৌসুমের মধ্য থেকে অন্যতম একটি মৌসুম হল পবিত্র রমজান মাস।

আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ﴾ [البقرة:183].

হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।' -সূরা বাকারা, ১৮৩ আয়াত

রমজান মাসের আগমনে মুসলিমগণ আনন্দ প্রকাশ করে থাকেন। আনন্দ প্রকাশ করাই স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ততা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন :—

قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ (يونس: 58)

বল, এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়ায়। সুতরাং, এতে তারা আনন্দিত হোক। তারা যা সঞ্চয় করে এটা তার চেয়ে উত্তম। -সূরা ইউনুস : ৫৮

পার্থিব কোন সম্পদের সাথে আল্লাহর এ অনুগ্রহের তুলনা চলে না। করা হলে, তা হবে এক ধরনের অবাস্তব কল্পনা। যখন রমজানের আগমন হত তখন রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতিশয় আনন্দিত হতেন, তার সাহাবাদের বলতেন :—

أتاكم رمضان شهر مبارك

তোমাদের দ্বারে বরকতময় মাস রমজান এসেছে। এরপর তিনি এ মাসের কিছু ফজিলত বর্ণনা করে বলতেন :—

فرض الله عز وجل عليكم صيامه، تفتح فيه أبواب السماء، وتغلق فيه أبواب الجحيم، وتغل فيه مردة الشياطين، لله فيه ليلة خير من ألف شهر، من حرم خيرها فقد حرم. رواه النسائي

আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য সিয়াম পালন ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। অভিশপ্ত শয়তানকে বন্দি করা হয়। এ মাসে রয়েছে একটি রাত যা হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে মূলত সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল। -নাসায়ী

আমাদের কর্তব্য :

আল্লাহর এ অনুগ্রহের মূল্যায়ন করতে চেষ্টা করা, এ মাসের ফজিলত ও তাৎপর্য অনুধাবনে সচেষ্ট হওয়া ও ইবাদত-বন্দেগিসহ সকল কল্যাণকর কাজে নিয়োজিত থাকা।

রমজান মাসে মুমিন বান্দার উপরে শয়তানি প্রবৃত্তির আক্রমণ কম হয়, রাত দিনে মন নরম থাকে। একজন দেখা যায় তার গুনাহের জন্য ক্ষমা চাইছে, আর একজন আনুগত্যের তাওফীক প্রার্থনা করছে। তৃতীয়জনকে দেখা যায় আল্লাহর শাস্তি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছে, চতুর্থজন ভাল কাজের ফলাফল সুন্দরভাবে পাওয়ার আশা করছে, পঞ্চম জনকে দেখা যায় তার প্রয়োজনের জন্য প্রার্থনা করছে। তিনিই মহান যিনি তাদেরকে তাওফীক দেন। অনেক লোক এমন আছে যারা এ সমস্ত কাজ থেকে দুরে অবস্থান করছে।

রমজান মাসের ফজিলত:

রমজান মাস শক্তি অর্জন ও দানের মাস। এ মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম মক্কা বিজয় করেন। তখন তিনি এবং সমস্ত মুসলমান সিয়াম অবস্থায় ছিলেন। এ রমজানেই ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়ছিল। এ সমস্ত যুদ্ধে ইসলামের পতাকা সমুন্বত হয়েছিল। পক্ষান্তরে বিপথগামী ভ্রান্ত পৌত্তলিকদের পতাকা হয়েছিল অবনমিত। এ মাসে মুসলমানদের অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা এবং কুরবানি সংঘঠিত হয়েছে।

রমজানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম ও তাঁর সাহাবারা অধিক পরিমাণে শক্তি, সজিবতা এবং ইবাদতের জন্য ধৈর্য ধারণ করার উদ্যম অনুভব করতেন, তাইতো রমজান মাসকে সৎকাজ, ধৈর্য্য ও দানের মাস বলা হয়। রমজান দুর্বলতা, অলসতা, ঘুমানোর মাস নয়। ভীরুতা, কাপুরষতা এবং নির্জীবতারও সময় নয়। ইসলামের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, রমজান সত্যের আলোয় জেগে ওঠার শিক্ষা দেয়। কোন কোন সিয়াম পালনকারীকে হাত পা ছেড়ে দিয়ে, দিনের বেলায় ঘুমাতে, কাজ কম করতে দেখা যায়। এমন আচরণ সিয়ামের তাৎপর্য বিরোধী। সিয়ামের উদ্দেশ্যের সাথে এগুলো আদৌ যায় না।

পূর্বেকার মুসলমানগণ রমজান যাপন করতেন তাদের অন্তর এবং অনুভূতি দিয়ে। রমজান এলে তারা কষ্ট করতেন। ধৈর্য্যের সাথে দিন যাপন করতেন। আল্লাহর ভয় এবং পর্যবেক্ষণের কথা তাদের স্মরণ থাকত। সিয়াম নষ্ট হয় অথবা ত্রুটিযুক্ত হয় এমন সব কিছু থেকে তারা দুরে থাকতেন। খারাপ কথা বলতেন না, ভাল না বলতে পারলে নিরবতা পালন করতেন।

তারা রমজানের রাত্রি যপন করতেন সালাত, কুরআন তিলাওয়াত, আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের অনুসরণ করেই।

সিয়ামের উপকার অথবা ফজিলত অনেক। তা গণনা করে শেষ করা যাবে না। তবে খেলাধুলা ও রং তামাশায় মত্তব্যক্তিরা কিংবা অলস শ্রেণির লোকজন, যারা সারাদিন ঘুমিয়ে কাটায় এবং রাত্রে বাজারে ঘুরে বেড়ায় তারা রমজানের এসব ফজিলত থেকে বঞ্চিত থাকবে।

সিয়াম আগুন থেকে রক্ষাকারী ঢাল:

ইমাম আহমাদ রহ. তার কিতাবে জাবের রা. থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

{ إنما الصيام جنة، يستجنّ بها العبد من النار }.

সিয়াম প্রবৃত্তির তাড়না থেকে বাঁচার জন্য ঢাল। এর মাধ্যমে বান্দা আগুন থেকে মুক্তি পায়।

ইবনে মাসউদ রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

{يا معشر الشباب من استطاع الباءة فليتزوج، فإنه أغض للبصر وأحصن للفرج، ومن لم يستطع فعليه بالصوم، فإنه له وجاء } [أخرجه البخاري ومسلم].

হে যুবকেরা! যে সামর্থ রাখে সে যেন বিবাহ করে। কেননা, তা দৃষ্টিকে সংরক্ষণ করে এবং যৌনাঙ্গের হিফাজত করে। যে বিবাহের সামর্থ রাখে না সে যেন সিয়াম পালন করে। কেননা এটি তার জন্য সুরক্ষা। -বুখারী মুসলিম

সিয়াম জান্নাতের পথ:

ইমাম নাসাঈ রহ. আবু উমামা রা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল আমাকে এমন বিষয়ের নির্দেশ দেন যার মাধ্যমে আল্লাহ আমাকে প্রতিদান দেবেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলইহি অসাল্লাম বলেন:

{ عليك بالصيام فإنه لا مثل له }.

তুমি সিয়াম পালন কর। কেননা এর কোন তুলনা নেই।

জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে। সেখান দিয়ে শুধু সিয়াম পালনকারী প্রবেশ করবে। সাহল ইবনে সাআদ রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

{ إن في الجنة باباً يقال له: الريّان، يدخل منه الصائمون يوم القيامة، لا يدخل منه أحد غيرهم، يقال: أين الصائمون، فيقومون، لا يدخل منه أحد غيرهم، فإذا دخلوا أغلق، فلم يدخل منه أحد } [أخرجه البخاري ومسلم].

জান্নাতে একটি দরজা আছে যার নাম রাইয়ান। কিয়ামত দিবসে সেখান দিয়ে সিয়াম পালনকারী প্রবেশ করবে। সে দরজা দিয়ে অন্য কেহ প্রবেশ করবে না। বলা হবে: সিয়াম পলনকারী কোথায়? তারা দাঁড়াবে, তারা ছাড়া আর কেহ প্রবেশ করবে না। তারা প্রবেশ করার পর দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। আর কেহ সে স্থান দিয়ে প্রবেশ করবে না। -বুখারী মুসলিম, ১৮৯৬

সিয়াম পালনকারীর জন্য সিয়াম সুপারিশ করবে:

ইমাম আহমদ রহ. আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেন:

{ الصيام والقرآن يشفعان للعبد يوم القيامة، يقول الصيام: أي رب منعته الطعام والشهوات بالنهار فشفّعني فيه، ويقول القرآن: منعته النوم بالليل فشفّعني فيه، قال: فيشفعان }.

সিয়াম এবং কুরআন বান্দার জন্য কিয়ামত দিবসে সুপারিশকারী হবে, সিয়াম বলবে, হে প্রভু আমি তাকে দিনের বেলায় খাওয়া এবং প্রবৃত্তির তাড়না থেকে নিবৃত্ত রেখেছি, তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাত্রের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি, তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন, আল্লাহ তাআলা বলবেন: তাদের সুপারিশ গ্রহণ করা হল।

সিয়াম গুনাহের ক্ষমা এবং কাফফারা হিসাবে গৃহিত হয়:

কেননা ভাল কাজ অন্যায়কে মুছে দেয়। আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহ তাআ'লা আনহু রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

{ من صام رمضان إيماناً واحتساباً غفر له ما تقدم من ذنبه } [رواه البخاري ومسلم].

যে রমজানে ঈমান এবং এহতেসাবের সাথে সিয়াম পালন করবে, আল্লাহ তার পূর্বের গোনাহ মাফ করে দেবেন। -বুখারী মুসলিম


চলবে......

188

শিশুদের ঈমান পরিচর্যায় কিছু পরামর্শ

অনুভূতি শূণ্য মুসলিম জাতি : উপলব্ধি জাগ্রত হলে মানুষের ভেতর পরিবর্তন আসবে। মুসলিম জাতির মধ্যে এই মুহূর্তে সবচেয়ে অভাব অনুভূতি, উপলব্ধি ও চেতনার। আমরা হতাশার সঙ্গে দেখছি, দৃষ্টি রাখলে খুব সহজে তা চোখে পড়বে। অথচ মুসলিমদের ভেতর তা নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। ফলে তা থেকে উত্তরণেরও পথ খোঁজে না। এর ব্যতিক্রমও যে নেই তা নয়।

শিক্ষায় অগ্রগতি জরুরি : শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই জানি। শিক্ষা ও সুশিক্ষা ছাড়া বর্তমান সময়ে ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব নয় এবং বড় লক্ষ্যও অর্জন করা যাবে না। শিক্ষায় যে জাতি পিছিয়ে সে জাতি জাগতিক জীবনেও পিছিয়ে।

জাগতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার সমন্বয় :  যেহেতু জাগতিক জীবনের প্রয়োজন পূরণে আমাদের জাগতিক শিক্ষারও প্রয়োজন হয়, তাই শিক্ষা কারিকুলামে আধুনিক ও ধর্মীয় শিক্ষার সমন্বয় করতে হবে। যেন তারা পার্থিব প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে না পড়ে এবং তাদের ঈমান ও ধর্মীয় জীবন রক্ষা পায়। নিম্নে শিশুদের ঈমান পরিচর্যায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা উল্লেখ করা হয়েছে।

এক. অভিভাবকের ঈমান শিক্ষা : শিশুরা যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যায় বা তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকে, তখন তাদের ঈমান ও বিশ্বাসের শিক্ষা সম্পন্ন করতে হবে। কেননা শৈশবের শিক্ষা ও বিশ্বাস শিশুর মনে গভীর রেখাপাত করে। সহজে তা দূর হয় না। তাই এ সময় তাকে ঈমান, ইসলামী বিশ্বাস ও মূল্যবোধ, উত্তম চরিত্র শেখানো প্রয়োজন। শৈশবে শিশুকে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে না পারলে পরবর্তী সময়ে শিশুকে দ্বিনের ওপর রাখা কঠিন হবে।

দুই. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইসলামী মৌলিক শিক্ষার ব্যবস্থা : প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে শিশুরা যখন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে যায়, তখন তাদের প্রথমে ফরজ বিধানগুলো এবং ইসলামের অপরিহার্য বিভিন্ন দিক তাদের শেখাতে হবে। এরপর তাদের মুসলিম হিসেবে জীবন যাপনের জন্য যেসব সামাজিক ও আর্থিক (মুআমালাত ও মুআশারাত) বিধি-বিধানের প্রয়োজন হয়, তা শেখাতে হবে। আর তাদের তা শেখাতে পারেন গভীর জ্ঞান ও বোধসম্পন্ন শিক্ষকেরা। ইসলামী শিক্ষার আয়োজন রয়েছে এবং তার প্রয়োজনও রয়েছে। তাই শিশুদের জন্য ইসলামী শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। আর তা হতে পারে স্বতন্ত্র ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।

যেহেতু স্কুলে যাওয়া শিশুদের ফেরানো যাবে না এবং তাদের ফেরানো উচিতও হবে না, তাই তাদের জন্য দ্বিনি বিবেচনায় অনুকূল শিক্ষা দিতে হবে। আর অবশ্যই তাদের মানসম্পন্ন শিক্ষা দিতে হবে এবং জাতীয় পাঠ্যক্রম অনুসরণ করতে হবে, যেন সরকারি স্কুল-কলেজ থেকে শিক্ষার মান কম না হয়।

তিন. দ্বিনি প্রতিষ্ঠানে চাকরির ব্যবস্থা : কর্ম জীবনে গিয়ে শিশুরা যেন প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখে না পড়ে, এমন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে বাধ্য না হয়—যারা দ্বিন পালনের সুযোগ দেবে না তাদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের চিন্তা করতে হবে। তাদের স্বাধীন প্রতিষ্ঠান গড়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। সেটা যেকোনো ধরনের প্রতিষ্ঠান হতে পারে। যেমন তারা ব্যবসা করতে পারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করতে পারে।

চার. পরিবারে ইসলামী জ্ঞান ও সংস্কৃতির চর্চা : অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। দ্বিন পালন, ইসলামী জ্ঞান ও সংস্কৃতির চর্চা করতে হবে। যেন শিশুর মন ও মস্তিষ্কে, চিন্তা ও চেতনায় ইসলামী জীবনধারার সঙ্গে মিশে যায়। ইসলাম পালনে তারা অভ্যস্ত হয়।

পাঁচ. মুসলিম জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্য পাঠ : জাতি হিসেবে মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে শিশুদের জানানো। ইসলামী সভ্যতার সোনালি অধ্যায়গুলো তাদের সামনে তুলে ধরা। যেন তারা ইতিহাস থেকে অনুপ্রাণিত এবং বর্তমান বিপর্যয়কর অবস্থার জন্য হীনম্মন্যতায় না ভোগে।

আল্লাহ কবুল করুন! আমরা যেন আমাদের শিশুদের ইমানী শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারি। আল্লাহুম্মা আমীন!


189

রাগান্বিত অবস্থায় শিশু পেটানো একদম অনুচিত


রাগান্বিত অবস্থায় কখনও শিশুকে প্রহার করবেন না। পিতা ও উস্তাদ উভয়ের জন্যই এই কথা।

রাগ প্রশমিত হওয়ার পর চিন্তা-ভাবনা করে শাস্তি দেবেন। ছাত্রদের জন্য উত্তম শাস্তি হল ছুটি মওকুফ করে দেওয়া।শিশুর উপর এর খুব প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে।

শিক্ষক ছাত্র প্রহারে এজন্য বেপরওয়া হয়ে যান যে, তাকে প্রশ্ন করার কেউ থাকে না। শিশুর তো প্রশ্ন করার যোগ্যতাই নেই আর অভিভাবক শিক্ষককে পূর্ণ স্বাধীন করে দিয়েছেন এই বলে যে, ‘হাড্ডি আমাদের, আর চামড়া মিয়াজীর’!

মনে রাখবেন! যার অধিকার সম্পর্কে প্রশ্ন করার কেউ থাকে না তার সম্পর্কে প্রশ্নকারী স্বয়ং আল্লাহ।

শিশুদেরকে প্রহার করা খুবই ভয়াবহ। অন্যান্য গুনাহ তো তওবার মাধ্যমে মাফ হতে পারে, কিন্তু শিশুদের উপর জুলুম করা হলে এর ক্ষমা পাওয়া খুবই জটিল। কেননা, এটা হচ্ছে বান্দার হক। আর বান্দার হক শুধু তওবার দ্বারা মাফ হয় না, যে পর্যন্ত না যার হক নষ্ট করা হয়েছে সে মাফ করে। এদিকে যার উপর জুলুম করা হয়েছে সে হচ্ছে নাবালেগ। নাবালেগের ক্ষমা শরীয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়।

এমনকি শিশু যদি মুখে বলেও যে, আমি মাফ করলাম তবুও তা গ্রহণযোগ্য নয়। এজন্য এই অপরাধের মাফ পাওয়া খুব জটিল। আর তাই শিশুদেরকে প্রহার করা এবং তাদের সঙ্গে মন্দ ব্যবহার করার ব্যাপারে সাবধান হওয়া উচিত। স্কুল মাদরাসার শিক্ষক সাহেবরা এ অন্যায় করে ফেলেন। আল্লাহ তাআলা তাদের রক্ষা করুন। আমীন!

এটা ঠিক যে, শিশুদেরকে পড়ানো খুবই কঠিন কাজ। তাদেরকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ নয় এবং কখনও কখনও প্রহারের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েই যায়। তো এমন পরিস্থিতিতে অন্য কোনো চিকিৎসা ফলপ্রসূ না হলে এ ক্ষেত্রেও রাগান্বিত অবস্থায় মারবে না। এ সময় চুপ থাকেন। যখন ক্রোধ দূর হয়ে যাবে তখন ভেবে চিন্তে শাস্তি দিবেন। এতে শাস্তির মাত্রা ঠিক থাকবে। যে পরিমাণ প্রয়োজন সে পরিমাণ শাস্তিই দেওয়া হবে। সীমালঙ্ঘন হবে না।

কিন্তু যদি রাগান্বিত অবস্থায় মারতে আরম্ভ করেন তাহলে এক থাপ্পড়ের জায়গায় দশ থাপ্পড় দিয়ে ফেলবেন। এর কারণে একে তো গুনাহ হল। কেননা, প্রয়োজনের অধিক শাস্তি দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত এতে শিশুর ক্ষতি হবে। কেননা সকল বিষয়ই মাত্রা অতিক্রম করলে ক্ষতিকর হয়ে যায়। তৃতীয়ত এর জন্য পরে অনুতাপ করতে হবে। এজন্য ক্রোধের অবস্থায় শাস্তি দিবেন না। ক্রোধ ঠান্ডা হওয়ার পর শাস্তি দিবে।

আল্লাহ আমাদের দরদী শিক্ষক হওয়ার তাওফীক দান করুন আমীন!


190

শিশুশ্রম  নিরসনে


বর্তমান ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় শিশুশ্রম’ একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থসামাজিক সমস্যা। সার্বিক বিশ্লেষণে শিশুশ্রম’ বলতে, শিশুদের শ্রমের সময় প্রত্যক্ষভাবে উৎপাদন কাজে এবং পরােক্ষভাবে গার্হস্থ্য শ্রমে ব্যয় করাকে বােঝায়। দাসত্ব, বন্ধক, যৌননিপীড়ন, সশস্ত্র সংঘাত প্রভৃতি ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়ােজিত শিশুর সংখ্যাও প্রচুর। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শিশু শ্রমিকদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

শিশুদের দিয়ে জোর করে নানা কাজ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। যেমন—ইটভাঙা, ওয়ার্কশপ ও গ্যারেজে কাজ করা, অন্যের বাড়িতে কাজ করা, হােটেল ও চা-স্টলে কাজ করা, শহরের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা, কুলিগিরি, অফিস-আদালতে খাবার পৌছানাে, বাস-টেম্পাের হেলপারি ইত্যাদি। শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে বিরত রাখতে হবে।

১. শিশু অধিকার বাস্তবায়ন;
২. পরিচয় সংরক্ষণ;
৩, মত প্রকাশের স্বাধীনতা;
৪. সামাজিক নিরাপত্তা;
৫. শিশু স্বাস্থ্যের প্রাধান্য;
৬. বৈষম্যহীনতা;
৭. অবৈধ স্থানান্তর রােধ;
৮. অক্ষম ও উদ্বাস্তু শিশু;
৯. সামাজিক পর্যালােচনা;
১০. মাতাপিতার সঙ্গে অবস্থানের অধিকার ইত্যাদি।

সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের কর্তব্য দেশের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ শিশুরা যাতে এই শিশুশ্রম’ নামক অভিশাপ থেকে মুক্তি পায় তার ব্যবস্থা করা।

ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে”—অর্থাৎ শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আজ যারা শিশু আগামী দিনে তাদের উপরই ন্যস্ত হবে দেশ পরিচালনার গুরুদায়িত্ব। কিন্তু নানা কারণে শিশুরা আজ উপযুক্ত পরিচর্যা থেকে বঞ্চিত।

জীবিকার প্রয়ােজনে তারা শ্রমদানে বাধ্য হচ্ছে। বর্তমানে অনেক শিশুর সুন্দর শৈশব ও বিকশিত জীবনের সবচেয়ে বড় বাধা এ শিশুশ্রম। শিশুশ্রমকে শিশুদের জীবনের একটি অমানবিক অধ্যায় বলা যায়। শিশুশ্রমের কারণে শিশুদের স্বাভাবিক মেধার কোনাে বিকাশ ঘটে না।

ফলে শিশুরা অন্ধকারে থেকে যায়। শিশুশ্রম শিশুদের শারীরিকভাবে দুর্বল করে দেয়। স্বাস্থ্য দুর্বল হলে তারা পুষ্টিহীনতায় ভােগে এবং রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা কমে যায়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের শ্রমশক্তির শতকরা প্রায় ১২ ভাগই শিশু। আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির কারণে শিশুদের এক বিরাট অংশ শ্রমদান করতে বাধ্য হয়। এ দেশের শতকরা প্রায় ২০ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। এসব মানুষ বাধ্য হয়ে বাড়তি উপার্জনের জন্য তাদের সন্তানদের ঝুঁকিপূর্ণ নানা কাজে নিয়ােজিত করে।

অভিভাবকদের নৃশংস আচরণ, মাতাপিতার পঙ্গুত্ব ইত্যাদি কারণে শিশুশ্রমের প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিশুশ্রমের কারণে বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও অর্ধেকের বেশি শিশু অকালে ঝরে পড়ে। অর্থাৎ শিশুশিক্ষার সাথে শিশুশ্রমের একটি বিপরীতমুখী সম্পর্ক রয়েছে। আবার শিশুরা কর্মক্ষেত্রে যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে, তা তাদের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। ফলে তারা যেমন তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি জাতি ধীরে ধীরে অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

তাই শিশুশ্রম বন্ধের জন্য যথাযথ আইন প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের পাশাপাশি শিশুবান্ধব সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। শিশুশ্রম ও অধিকার সম্পর্কে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। তাহলেই শিক্ষিত ও সচেতন নতুন প্রজন্ম গড়ে উঠবে, যারা দেশের বােঝা না হয়ে বরং সম্পদ হয়ে দেশ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবে।


191

শ্রেণীকক্ষে পাঠদানে শিক্ষকের করণীয়

ক্লাসে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আনয়ন, পাঠদান আকর্ষণীয় করণ, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়ির কাজ আদায় এবং ভালো মানুষ হওয়ার জন্য তাদের কি কি গুণাবলী থাকা উচিত এ সব বিষয় নিয়ে আলোচনা কর হয়েছে

১. শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করেই কুশল বিনিময় করতে হবে। তারপর ক্লাসে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক প্রয়োজনে ক্লাস ক্যাপ্টেনের সাহায্য নিতে পারেন।

২. শিক্ষার্থীদের ক্লাসে মনোযোগ আনার জন্য শিক্ষক বিশেষ কোনো মজার ঘটনা/সহজ পড়া (পাঠ্য থেকে) বলে বা লিখে মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেন। ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থী অমনোযোগী থাকলে শিক্ষক সতর্ক করে দেবেন। বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অভয় দেবেন যাতে তারা সহজে প্রশ্ন করতে শেখে।

৩. বিগত ক্লাসের পাঠ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সামান্য আলোচনা করতে পারেন। ক্লাস ক্যাপ্টেনের মাধ্যমে বাড়ির কাজের কপি সংগ্রহ করবেন (যদি কাজ দেওয়া থাকে)। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পড়া আদায় করবেন। পড়া আদায় লিখিতভাবে অথবা মৌখিকভাবে হতে পারে। তবে লিখিত হলেই ভালো। প্রয়োজন হলে ডায়েরি মার্ক করবেন। বাড়ির কাজ থাকলে ক্লাস ক্যাপ্টেনের সহায়তায় বাড়ির কাজ সংগ্রহ করতে হবে। প্রথমেই দুর্বল শিক্ষার্থীদের পড়া ধরা উচিত। দুর্বলদের মধ্যে যারা ঠিকমতো পড়া দিতে পারবে না তাদের আগের দিনের পড়া ক্লাসেই শিখতে দিতে হবে। এরপর অন্যদের পড়া ধরতে হবে।

৪. দিনের পাঠের শিরোনাম উপস্থাপন এবং বিশ্লেষণ করতে হবে।

৫. দিনের পাঠের বিষয়বস্তু বিস্তারিত আলোচনা করা।

৬. দিনের পাঠের কোন অংশটি শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারেনি তা খুঁজে বের করা।

৭. না বোঝা বিষয়টুকু আরও পরিচ্ছন্ন ও পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দেওয়া।

৮. পরবর্তী দিনের জন্য শিক্ষার্থীদের যে বাড়ির কাজ দেওয়া হবে সেই পাঠ বা পড়ার ওপর শিক্ষক আলোচনা করবেন।

৯. প্রতিটি অনুশীলনী/ অধ্যায়/ বিষয়ভিত্তিক অংশ পড়ানো শেষে ওই অনুশীলনী/ অধ্যায়/ বিষয় থেকে কি কি সম্ভাব্য প্রশ্ন থাকতে পারে (অনুশীলনীগুলো বাদে) তা শিক্ষার্থীদের প্রদান করা। প্রদত্ত প্রশ্নগুলো তৈরি করার জন্য সাধারণ আলোচনা করা।

১০. পরবর্তী দিনের জন্য বাড়ির কাজ ও পড়া শেখার উৎসাহ দান করে শ্রেণীকক্ষ থেকে বিদায় নেওয়া।

১১. কোনো বিষয় পাঠদানের ক্ষেত্রে নতুন কোনো সমস্যার সম্মখীন হলে তা নিজের উপস্থিত বুদ্ধির মাধ্যমে সমাধান করা। সাথে সাথে সমাধান দিতে না পারলে তা পরবর্তী দিনে বুঝিয়ে দেওয়া হবে, তা বলে দেওয়া। শিক্ষার্থীদের কোনো বিষয় বোঝানোর সময় একাধিক উদাহরণ দিতে হবে। যাতে তারা পরিষ্কারভাবে ওই বিষয়ের ওপর ধারণা পেতে পারে।

১২. পাঠদানের সময় কোথাও কোনো অসামঞ্জস্যতা ধরা পড়লে তা অল্প কথায় সমাধান দেওয়া।

১৩. আলোচনার মাঝে মাঝে শিক্ষার্থীদের পাঠদানরত বিষয়ের ওপর প্রশ্ন করতে হবে। বিশেষ করে দুর্বল শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করলে জানা যাবে তারা ওই বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পেয়েছে কিনা বা বুঝতে পারছে কিনা।

১৪. শিক্ষকরা ক্লাসের মধ্যেই বোর্ড ব্যবহার করবেন। আরবী, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষকরা বেশি করে বোর্ড ব্যবহার করবেন। বিজ্ঞান বিষয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিত্র এঁকে বোঝাবেন। প্রয়োজনে প্রাকটিক্যাল ক্লাস করাবেন।

১৫. দুর্বল শিক্ষার্থীদের হেয় করা যাবে না। তারাও যে ভালো করার ক্ষমতা রাখে এ ব্যাপারে তাদের উৎসাহ প্রদান করতে হবে।

১৬. ডি আই এসএস এর শিশুদের জন্য কম সময়ের মধ্যেও কিভাবে ক্লাসকে অধিকতর ফলপ্রসূ করা যায় সেজন্য শিক্ষকগণের আগে থেকেই পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন।

১৭. শিক্ষার্থীদেরকে পঠিত বিষয়ে প্রশ্ন করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যাতে তারা নির্ভয়ে না বোঝা বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারে।

১৮. যেসব শিক্ষার্থীর বানান বেশি ভুল হয় তাদের কঠিন শব্দগুলো সহজ করে বানান শিখতে দেওয়া যেতে পারে।

১৯. প্রাকটিক্যাল এবং চিত্রাঙ্কনে শিক্ষার্থীদের দলগতভাবে কাজ দেবেন। আবার কোনো বিষয়ে দলগত প্রতিযোগিতা করতে দেওয়া যেতে পারে এবং দলগত প্রতিযোগিতা করাবেন।

২০. শিক্ষার্থীদের মাঝে মধ্যে বোর্ডে লিখতে দিতে হবে।

২১. যেসব শিক্ষার্থীদের হাতের লেখা খারাপ তাদের লেখা উন্নত করার জন্য রোল করা খাতায় নিয়মিত লেখা চেক করতে হবে এবং অক্ষর, শব্দ বা বাক্যগুলো কিভাবে লিখলে সুন্দর হতে পারে এ বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেবেন।

২২. এ ছাড়া ক্লাসে অতিরিক্ত সময় পেলে শিক্ষার্থীদের ভালো মানুষ হওয়ার জন্য উপদেশ দিতে হবে।

ভালো মানুষ হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের যেসব গুণাবলী থাকা প্রয়োজন:

* ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে।

* নিজের আচরণ ও কর্মে যাতে অন্য কেউ মনোকষ্ট না পায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

* কারও আর্থিক বা অন্য কোনো প্রকার ক্ষতি করা যাবে না।

* সম্ভব হলে অন্যের উপকার করতে হবে।

* মিথ্যা বলবে না, সৎ পথে চলবে।

* অন্যায়কে ঘৃণা করবে।

* অহঙ্কারি হবে না।

* গরিব বা ছোট পেশার মানুষকে অবজ্ঞা করবে না, সম্ভব হলে সহযোগিতা করবে।

আল্লাহ আমাদের আদর্শবান শিক্ষক ও শিক্ষার্থী হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন!



192

ইসলাম প্রতিটি শিশুকে সুশিক্ষার তাগিদ দিয়েছে

শিশুদের সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী তা ফুটে উঠেছে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বহুসংখ্যক হাদিসে। যেমন জনৈক ব্যক্তি রসুল (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রসুল! আমার এই ছেলের অধিকার কী? রসুল (সা.) বললেন, তুমি তার সুন্দর একটি নাম রাখবে, তাকে ভদ্রতা শিক্ষা দেবে এবং তাকে উত্তম স্থানে লালনপালনের জন্য হস্তান্তর করবে। (তৎকালীন সময়ে শিশুকে উন্নত ভাষা শিক্ষাদানের লক্ষ্যে শৈশবকালে উত্তম শিষ্টাচার-সমৃদ্ধ গ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হতো)’ আত্তুসি। উপরোক্ত হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিশুদের শিক্ষাদানে উত্তম স্থানে লালনপালনের তাগিদ দিয়েছেন। সেই প্রাচীন যুগে মহানবী (সা.) নিজেও তাঁর শিশুকাল কাটিয়েছেন শুদ্ধ ভাষায় কথা বলে এমন এক সম্প্রদায়ের মাঝে। আজকের যুগে আমরা শিশুদের শিক্ষাঙ্গনে পাঠাই একই উদ্দেশ্যে। অভিভাবকদের ওপর শিশুদের হক সম্পর্কে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,অভিভাবকের ওপর শিশুদের অধিকার হলো তাকে লেখাপড়া শিক্ষা দেওয়া এবং তাকে ভালো ও পবিত্র খাবার খাওয়ানো।’ বায়হাকি।

বড়দের কাছ থেকে অর্থাৎ বাবা-মা, অভিভাবক এবং স্বজনদের কাছ থেকে শিশুরা স্নেহ পাওয়ার অধিকার রাখে। এটি শিশুদের অধিকার। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বড়দের সম্মান করে না, ছোটদের স্নেহ করে না, সৎ কাজের আদেশ করে না এবং অসৎ কাজে নিষেধ করে না সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ ইবনে হিব্বান।

রসুল (সা.)-এর সাহাবিরাও শিশু ও এতিমদের প্রতি স্নেহ প্রদর্শন করতেন, যার বর্ণনা বিভিন্ন হাদিসে এসেছে। হজরত ইমরান ইবনে উতবা জিমারি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা উম্মে দারদা (রা.)-এর কাছে গেলাম এবং আমরা ছোট এতিম শিশু ছিলাম। তিনি আমাদের মাথায় হাত বোলালেন এবং বললেন, হে আমাদের সন্তানেরা! তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর। আমি আশা করি তোমরা তোমার বাবার সুপারিশকৃতদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ ইবনে হিব্বান।

ইসলামে সব মানুষের নিরাপত্তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। শিশুরা এ বিষয়ে অগ্রাধিকার পাওয়ার দাবি রাখে। বিশ্বাসীদের আদি পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর কাছে যে মুনাজাত করেছিলেন সে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে আল কোরআনে। ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ কর যখন ইবরাহিম বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক! এ শহরকে শান্তি ও নিরাপত্তার শহর বানিয়ে দিন এবং এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে মানে তাদের সব ধরনের রিজিক দান করুন। উত্তরে তাঁর প্রভু বললেন, আর যে মানবে না, কয়েক দিনের এ জৈব-জীবনের সামগ্রী তাকেও আমি দেব। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে জাহান্নামের আগুনে বলপূর্বক নিয়ে যাব এবং তা নিকৃষ্টতম স্থান।’ সুরা বাকারা, আয়াত ১২৬।


মানববসতি স্থাপনের জন্য হজরত ইবরাহিম (আ.) তিনটি বিষয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন

১. সব ধরনের নিরাপত্তা
২. ফলমূল থেকে পুষ্টিকর আহার
৩. ধর্মকর্ম সমন্বয়ে সুশিক্ষার মাধ্যমে আদর্শ মানব হিসেবে গড়ে তোলা।

শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠা ও আদর্শ সমাজ নির্মাণের অনুপ্রেরণার বীজ এখানেই লুক্কায়িত। আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য শিশুর শিক্ষাদীক্ষা ও অঙ্গীকারের প্রতি যত্নশীল হওয়া প্রত্যেক মোমিনের কর্তব্য হওয়া উচিত। সুরা বাকারার নির্দেশনা অনুসারে প্রতিটি শিশুকে এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে হবে যেখানে শিশুর শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, আমাদের দেশের স্কুল হোক আর মাদরাসা প্রচলিত বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে শিশুদের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। অনেক ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের সঙ্গে নির্দয় আচরণ করা হয়। যা তাদের মানসিকভাবে অসুস্থ করে তোলে। যে কারণে শিশুকে এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে হবে যেখানে ইসলামের নৈতিক শিক্ষায় শিশুকে যেমন দীক্ষা দেওয়া হবে তেমন তার জন্য স্নেহশীল পরিবেশ থাকবে। শিশুর খেলাধুলার প্রতিও গুরুত্ব দেওয়া হবে। শিক্ষকদের সে দেখবে ভয় নয় শ্রদ্ধার চোখে। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান আয়ত্তে আনার সুযোগ থাকবে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। সুস্থ-সবল মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য থাকবে খেলাধুলা এবং শরীরচর্চার সুযোগ। ইসলামী শরিয়তে সুস্বাস্থ্যকে মহান আল্লাহর নিয়ামত হিসেবে বিশ্বাস করা হয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমার শরীরের প্রতি তোমার কর্তব্য ও অধিকার রয়েছে।’ (মুসলিম)।

কেন এ অধিকার বা হক? এর জবাবে বলা যায়, শরীর সুস্থ থাকলে একজন মুসলমান ভালোভাবে আল্লাহর ইবাদত করতে পারে। অসুস্থ শরীরে ইবাদতের বিঘ্ন ঘটে। শিশুরা যাতে পড়াশোনায় উৎসাহী হয়, এটিকে যাতে বোঝা হিসেবে না ভাবে তেমন পরিবেশ তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, আমাদের দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুরা নির্যাতনের শিকার হয়। যা কোনোভাবেই হওয়া উচিত নয়। রসুল (সা.) শিশুদের স্নেহ করতেন। শিশুদের প্রতি যারা নির্যাতন চালায় তারা কোনোভাবেই নিজেদের রসুল (সা.)-এর অনুসারী বলে দাবি করতে পারেন না। শিশুদের ওপর নির্যাতন চালানোর আগে সবাইকে এ বিষয়টি ভাবতে হবে। এ ধরনের অপরাধে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনাও জরুরি।


193

সন্তান কিভাবে ভালো মানুষ হবে, সেক্ষেত্রে পিতা-মাতার দায়িত্ব

যতদিন পর্যন্ত সন্তানের জ্ঞান বুদ্ধি পরিপক্ক না হয়, ততদিন পর্যন্ত তাদেরকে শাসন করা এবং কঠোরতার মধ্যে রাখার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু যখন সন্তান জ্ঞান বুদ্ধিতে পরিপক্ক হয় এবং ভালো মন্দ বুঝতে পারে, যুক্তি ও জ্ঞানবুদ্ধি দিয়ে কাজকর্ম করতে পারে তখন যদি কোন বাবা মা কঠোরতা করতে যায় তবে সেই সন্তান নিজের সম্মান নিজেই নষ্ট করবে এবং পিতা-মাতার সাথেও তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। যা বর্তমান সময়ে অহরহ আমাদের সামনে ঘটেই চলছে। এই জন্যে সন্তান ছোট থাকতেই তাকে যতদূর সম্ভব কঠোরতা আর শাসন করা প্রয়োজন।

খুবই দুঃখ লাগে যখন এমন অনেক পিতা-মাতাকে দেখি যারা দুনিয়ার কাজ-কর্ম নিয়ে ব্যস্ত কিন্তু সন্তানের ব্যাপারে অত্যন্ত বেখেয়াল। এটা ভাবতে থাকে যে, সন্তান যখন বড় হবে তখন হয়তো সব শিখে যাবে। কিন্তু না। সন্তানকে শেখানোর দায়িত্ব পিতা-মাতার। আর সেটা ছোট বেলা থেকেই। কারণ পিতা-মাতাই তার শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়। আবার অনেকে আছে তারা অন্যের কাছে অনেক উত্তম চরিত্র পেশ করে এবং মানুষকে ভালো পরামর্শ দেয়। কিন্তু নিজের পরিবারের ক্ষেত্রে তারা এই সকল জিনিস ভুলে যায়। কিভাবে নিজের সন্তানদেরকে ভালো উপদেশ দিতে হবে, কিভাবে তাদেরকে সঠিক পথে আনতে হবে, তাদের সাথে কেমন আচরণ করতে হবে আর কিভাবে সন্তানের আবদার পূরণ করতে হয় সেটা পর্যন্ত ভুলে যায়। যা কিনা অত্যন্ত মর্মন্তুদ ব্যাপার। ইসলাম ধর্মে সন্তান আর স্ত্রীর ব্যাপাওে অত্যন্ত কঠোর পরিস্থিতির কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে- পরিবার-পরিজনের হক আদায়ের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। অথচ এসব চিন্তা-ভাবনা আমাদের মাথা থেকেই উধাও হয়ে যায়।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার পিতা-মাতারা নিজেরা বা নিজেদের জন্যে যা ভালো মনে করেন সেটাই নিজেদের সন্তানদের উপর প্রয়োগ করতে চান। তারা নিজের সন্তানের পরিস্থিতি একটুও বুঝবার চেষ্টা করেন না। তারা এটা জানার চেষ্টা করেন না যে, পৃথিবী এখন কতটা এগিয়ে গিয়েছে। বর্তমানে পুরো পৃথিবী যেই দিক থেকে এগিয়ে গিয়েছে এবং সকল মিডিয়াতেও এর প্রচারণা হচ্ছে, তা হচ্ছে ‘ব্যক্তি স্বাধীনতা’। আল্লাহ্ তা’আলাও মানুষকে নিজের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দিয়েছেন। পিতা-মাতা যদি পরিবারের ক্ষেত্রে দ্বীন দুনিয়ার খবর না রেখে নিজের ইচ্ছাকে সন্তানের উপর চাপিয়ে দিতে চান তাহলে এর পরিণাম হয় খুবই খারাপ। এতে সেই সন্তানের জীবনটাই নষ্ট হয় শুধুমাত্র এই পিতা-মাতার কারণে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলছেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে নিজের পরিবারের কাছে ভালো। (তিরমিজি, হাঃ ৩৮৯৫)

আল্লাহর রাসুল (সা.) এর এই কথাটি সবসময় মনে রেখে চলবেন- সবার আগে নিজের পরিবারের বিশেষ করে সন্তানের মানসিক পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করবেন এবং সেই অনুযায়ী আহবান জানাবেন। আপনার উচিৎ ভালো কাজের আহবান পৌঁছে দেওয়া, জোর জবরদস্তি করা নয়। যদি আপনার কথা সঠিক হয় তবে আপনার সন্তানকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলুন। কিন্তু জোর করার অধিকার আপনার নেই। কারণ জোর করা যায় পশুর সাথে, মানুষের সাথে নয়।

প্রিয় ভায়েরা এবং বোনেরা, এবার আসি একটু গোড়ার কথায়। সন্তান গর্ভে যাওয়ার সাথে সাথে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করুন। আব্দুল কাদির জিলানীর ঘটনা পড়ুন। কেন আব্দুল কাদির জিলানীর পিতা-মাতার মধ্যে শিক্ষা রয়েছে তা জানুন। অনেক শিক্ষা রয়েছে। ইসলাম-ই শান্তি। বাকি সব অশান্তি। সন্তান যখন গর্ভে পিতা এবং মাতা দুজনেই সকল অন্যায় কাজ করা ছেড়ে দিন। বেশি বেশি আল্লাহকে ডাকতে থাকুন। মনে রাখবেন ওই সন্তান-ই আপনার সাদকায়ে যারিয়া। আবার ওই সন্তান-ই আপনার জাহান্নামে যাওয়ার হাতিয়ার। সন্তান জন্মের সাথে সাথে কিছু হক রয়েছে। সেগুলো যথাযথ ভাবে পালন করুন। বড় হতে হতে আল্লাহর বিধান সমূহ পালনের ব্যাপারে তাকে জানান। এই ক্ষেত্রে ইবরাহীম (আঃ) ও ইসমাঈল (আঃ) এর কথোপকথন বার বার মনে রাখুন। সন্তানকে একবার ভালো কথা বলেই মনে করবেন না যে, আপনি সব কাজ সেরে ফেলেছেন। আসলে আপনার কাজ তো শুরু মাত্র। আপনি পিতা, আপনি মাতা, আপনি অভিভাবক। আল্লাহর সাহায্য বার বার প্রত্যাশা করুন। মেয়ে সন্তান হলে ছোট থেকেই পর্দা করার ব্যবস্থা করুন। সন্তান আপনার, আর আপনি যদি বলেন, ওরে এত বলি তা শোনে না। এই কথার মাধ্যমে আপনার মাতৃত্ব ও পিতৃত্ব এর দায় আপনি কখনোই এড়াতে পারবেন না। কারণ ছোট বেলাতেই যদি সে আপনার কথা না শোনে নিশ্চিতভাবে বড় হলে আর শুনবেই না বরং বিগড়ে যাবে। বার বার বলছি, আপনার সন্তানকে আদব-কায়দা শেখাতে কখনোই আজ থাক, কাল ঠিক হয়ে যাবে- এমন প্রত্যাশা কখনোই করবেন না।

আপনার পরিবারকে আপনি নিজের কাছে টেনে নিন। সে তো আপনার সন্তান। আপনার কথা তারা যদি না শুনতে চায় তবে কার কথা শুনবে.?? তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা নিজেরা অর্থাৎ পিতা-মাতারা ভালো হওয়ার চেয়ে সন্তানদেরকে ভালো বানানোর বেশি চেষ্টা করি। যা কি না আদৌ সম্ভব নয়। কারণ আপনার সন্তান আপনাকে ২৪ ঘন্টা চোখে চোখে রাখে। আপনি কি করেন, কিভাবে অন্যের সাথে কথা বলেন, আপনি কিভাবে রাগকে হজম করেন, কিভাবে আপনি মানুষকে আপন করে নেন, মানুষের সাথে কিভাবে ব্যবহার করেন- সব, সবকিছু। তাহলে আপনি কতটুকু সিরিয়াস হবেন আপনার আচরণের ক্ষেত্রে, এবার সেটা নিশ্চই আপনাকে আর বোঝানো লাগবে না।

একটি কথা শুনুন, সন্তান কথা না শুনতে পারে। তাকে বার বার বিভিন্ন পদ্ধতিতে বোঝানোর চেষ্টা করুন। তবে হ্যাঁ, অবশ্যই, অবশ্যই, তাকে দূরে সরিয়ে দিবেন না। এটা সত্যি খুবই দুঃখজনক যে কিছু পুরুষ-মহিলা সমাজের মানুষের সাথে খুব ভালো আচরণ দেখায় আর খুব সুন্দর চরিত্র ফুটিয়ে রাখে কিন্তু নিজের পরিবারের সাথে জঘন্য-নোংরা আচরণ করেন। তাদের মুখের কথায় কথায় গালি বের হয় আর কিছু থেকে কিছু হলেই তারা স্ত্রী সন্তানের গায়ে হাত তুলতেও পিছু হটেন না। তারা মনে করেন আল্লাহ তাদেরকে দারোগা করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। আর তারা মনে করে এইভাবে শাসন করে সে ভালো কাজ করছে। কিন্তু, না প্রিয় ভাই এবং বোনেরা। আপনার কাজ ভালো কথাগুলো আপনার পরিবারের মধ্যে বলা আর আপনার নিজেকেও সেই মতাদর্শ অনুযায়ী গড়ে তোলা। জুলুম করা আপনার কাজ নয়।

মনে রাখবেন আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের রাসূল মুহাম্মাদ (সা.) কে পর্যন্ত একথা বলেছেন যে, ‘হে রাসূল! আপনি তাদেরকে উপদেশ দিন, আপনি কেবল উপদেশদাতা, আপনাকে দারোগা বানিয়ে পাঠানো হয়নি যে আপনি তাদের বাধ্য করবেন।’ (সূরা আল-গাশিয়াহ, আয়াত: ২১-২২)

খুব খেয়াল করে শুনে রাখুন প্রিয় ভাই এবং বোনেরা, যদি আপনার পরিবার আপনার নম্রতা আর ভালো আচরণের সাক্ষী না দেয় তাহলে আপনার নামায, যাকাত, হজ্জ, রোজা, দান-সাদকাহ সবই বাতিল হয়ে যাবে। এই ব্যাপারে রাসুল (সা.) এর কাছে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো এক মহিলার ব্যপারে, যে কিনা খুব ইবাদাত করতো কিন্তু প্রতিবেশীর সাথে মন্দ আচরণ করতো। তার ফলাফল রাসুল (সা.) বলেছেন- সে জাহান্নামে যাবে।

তাই বলছি প্রিয় ভায়েরা আর বোনেরা, আপনার সন্তানকে যদি সবচেয়ে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চান তবে প্রথমেই সবচাইতে বড় পরীক্ষা হচ্ছে আপনার চরিত্র সুন্দর রাখা। আর আপনার চরিত্রের সুন্দর আচরণ সবার আগে আপনার পরিবারের সাথে ফুটে উঠবে। আপনার পরিবারের স্ত্রী-সন্তান যদি আপনার চরিত্রের সাক্ষী হয়ে উঠতে পারে তবেই আপনার সন্তান আপনার শাসন ছাড়াই ভালো সন্তানে পরিণত হবে। নতুবা এই সন্তানের জন্যেই পরকালে আপনার কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

সুতরাং শেষ কথা হচ্ছে, আল্লাহকে ভয় করুন। সন্তানের জন্যে রাতে জেগে উঠুন, দোআ করুন। পরিবারের জন্যে বেশি বেশি দোআ করুন। আর হক কথা আর হক কাজ নিজেও মেনে চলুন, সন্তানকেও সুন্দর আচরণের মাধ্যমে বুঝিয়ে বলুন। নিজের বিরুদ্ধে গেলেও সত্য কিন্তু সবসময় সত্য। আল্লাহ বান্দাকে যেই হক দিয়েছেন সেটা আপনি ছিনিয়ে নেওয়ার কোন অধিকার রাখেন না। সেটা আপনার লাভ হোক আর লোকসান হোক, আপনাকে মেনে নিতেই হবে। আল্লাহ আমাদের বুঝার তৌফিক দান করুন। আমিন। আর হক কথা আর হক কাজ নিজেও মেনে চলুন, সন্তানকেও সুন্দর আচরণের মাধ্যমে বুঝিয়ে বলুন। নিজের বিরুদ্ধে গেলেও সত্য কিন্তু সবসময় সত্য।

প্রিয় ভাই এবং বোনেরা, পরিশেষে আপনাকে একটা পরামর্শ দেই, আল্লাহর সাথে এমনভাবে কথা বলুন যেন তিনি আপনার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। আপনি যখন আশ্চর্যজনক কিছু দেখেন, যদিও আল্লাহ তা জানেন তবুও তা চুপচাপ আল্লাহর কাছে উল্লেখ করুন। আপনি যখন কাজ থেকে বাড়ি ফিরছেন, বিশ্রাম নিতে নিতে তাকে আপনার সারা দিনের কথা বলুন। আপনি যখন বিছানায় শুয়ে থাকবেন তখন পরের দিনের জন্য আপনার পরিকল্পনা সম্পর্কে আল্লাহকে বলুন। আপনি যে স্বপ্ন দেখেছেন তা সম্পর্কে আল্লাহকে বলুন। যখন আপনি ক্লান্ত তখন আপনার ক্লান্তির কথা আল্লাহকে বলুন। শুধু আল্লাহর সাথে কথা বলুন। ফলে আপনি তার নিকটবর্তী হবেন এবং দোআ করা সহজ হবে। তবে একটি কথা সর্বদাই মনে রাখবেন- সুখ-দুঃখ উভয় ক্ষেত্রেই আল্লাহকে স্মরণ করুন। দেখবেন আল্লাহ আপনাকে আরো কাছে টেনে নিবেন। আল্লাহ আমাদের সব্বাইকে কবুল করুন। আমীন!

194

সুসন্তান গড়ে তোলার উপায়

শিশুরা আল্লাহপ্রদত্ত শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। পবিত্র কোরআনে তাদের জীবনের ঐশ্বর্য বলা হয়েছে। তাদের সুশিক্ষা দিয়ে ছোটবেলা থেকে গড়ে তোলা গেলে মৃত্যুর পরও এর সুফল পাওয়া যায়।

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো মানুষ মারা যায়, তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিন ধরনের আমল জারি থাকে।

এক. সদকায়ে জারিয়া (চলমান পুণ্য। দুই. ওই জ্ঞান, যার মাধ্যমে মানুষ উপকৃত হয়। তিন. সুসন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে। ’ (নাসায়ি, হাদিস: ৩৬৫১)

শিশুদেরকে সৎ ও নিষ্ঠাবান শিশু  হিসেবে গড়ে তুলতে প্রথম থেকেই আমাদের যা যা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। নিম্নে এ ধরনের কিছু পদক্ষেপ তুলে ধলা হলো—

গুনাহ মুক্ত পরিবেশ

শিশুদের নেক সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে ছোটবেলা থেকেই তার প্রতি যত্নবান হতে হবে। তার মানসিক বিকাশে গুরুত্ব দিতে হবে। তার জন্য গুনাহমুক্ত পবিত্র পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। একটি শিশু যখন বড় হয়, তখন চারদিকের পরিবেশ তাকে অনেক বেশি প্রভাবিত করে এবং এর প্রতিফলন ঘটে তার বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে। শিশুর সামগ্রিক বিকাশের সঙ্গে পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা নিবিড়ভাবে জড়িত। তাই তাদের সামনে কোনো ধরনের অসৌজন্যমূলক কথা ও কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

পরিচ্ছন্নতা শেখানো

ছোটবেলা থেকেই শিশুদের পরিচ্ছন্নতার প্রতি সচেতন করে তুলতে হবে। মানুষের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য পরিচ্ছন্নতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাসুল (সা.) পরিচ্ছন্নতাকে ঈমানের অঙ্গ বলেছেন।

পাশাপাশি শিশুদের পরিপাটি রাখার চেষ্টা করতে হবে। ছোট মানুষ বলে তাদের যেনতেনভাবে লালন-পালন করা উচিত নয়। কারণ এটিও ব্যক্তিত্ব গঠনে জোরালো ভূমিকা পালন করে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) দিনের এক অংশে বের হন, তিনি আমার সঙ্গে কথা বলেননি এবং আমিও তাঁর সঙ্গে কথা বলিনি। অবশেষে তিনি বনু কাইনুকা বাজারে এলেন (সেখান থেকে ফিরে এসে) ফাতেমা (রা.)-এর ঘরের আঙিনায় বসলেন। অতঃপর বলেন, এখানে খোকা [হাসান (রা.)] আছে কি? এখানে খোকা আছে কি? ফাতেমা (রা.) তাঁকে কিছুক্ষণ সময় দিলেন। আমার ধারণা হলো, তিনি তাঁকে পুঁতির মালা, সোনা-রুপা ছাড়া যা বাচ্চাদের পরানো হতো, পরাচ্ছিলেন (সাজিয়ে দিচ্ছিলেন)। তারপর তিনি দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং চুমু খেলেন। তখন তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি তাকে (হাসানকে) ভালোবাসো এবং তাকে যে ভালোবাসে তাকেও ভালোবাসো। ’ (বুখারি, হাদিস : ২১২২)

সৃজনশীল খেলনা

শিশুর খেলনা হতে হবে আবিষ্কারধর্মী ও সৃজনশীল। বয়সভেদে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ উপযোগী খেলনা নির্বাচন করতে হবে গুরুত্বের সঙ্গে। ঘরে ও বাইরে দুই জায়গায়ই খেলা যায়, এমন খেলনা শিশুর মানসিক বিকাশে বেশি সহায়ক। শিশুকে এমন ধরনের খেলনা দিতে হবে, যা তার বুদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ খেলনা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

ভিডিও গেম ও কার্টুন থেকে দূরে রাখা

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিনিয়ত ভিডিও গেম খেললে শরীরে একধরনের হরমোন নিঃসরণ হয়। এতে শিশু সব কিছু নিয়েই উত্তেজিত হয়ে পড়ে। অভিভাবকের অবাধ্য হয়ে যায়। মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গেমিংয়ে আসক্ত ব্যক্তি মূলত অন্য সব কিছুর প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে। এ ছাড়া কারো সঙ্গে মিশতে না পারা, ঘুম, খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম তো রয়েছেই। তাই আমাদের উচিত শিশুদের এ ধরনের খেলা থেকে যত দূর সম্ভব দূরে রাখা।

অনেক শিশু কার্টুন দেখা ছাড়া খাবার খেতে চায় না। অথচ এই কার্টুন তাদের মানসিক গঠনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই আমাদের উচিত তাদের আনন্দ দেওয়ার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা। যেমন—পোষা কবুতর, পাখি, মুরগি ইত্যাদি দেখিয়েও খাওয়ানোর চেষ্টা করা যেতে পারে।

দ্বীনি ইলম শিক্ষা দেওয়া

দ্বিনি ইলম শিক্ষা করা সব মুসলমানের ওপর ফরজ। তাই সন্তানকে তার দৈনন্দিন ইবাদতের জন্য যতটুকু ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা দরকার, কমপক্ষে ততটুকু ইলম শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতেই হবে। তাকে পবিত্রতা শিক্ষা দিতে হবে, কোরআন শিক্ষা দিতে হবে, প্রয়োজনীয় মাসআলা-মাসায়েল শিক্ষা দিতে হবে। পাশাপাশি তাকে আস্তে আস্তে বিভিন্ন গুনাহ সম্পর্কে সতর্ক করাও  অভিভাবকের দায়িত্ব।

নামাজে অভ্যস্ত করা

শৈশব থেকে সন্তানকে নামাজে অভ্যস্ত করে না তুললে ভবিষ্যতে সে নামাজের প্রতি যত্নবান হতে পারবে না। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘তোমরা সন্তানদের নামাজের প্রতি যত্নবান হও এবং তাদের ভালো কাজে অভ্যস্ত করো। কেননা কল্যাণ লাভ অভ্যাসের ব্যাপার। ’ (সুনানে বায়হাকি, হাদিস : ৫০৯৪)

বই পড়ায় উৎসাহী করা

বই শিশু মনের সুপ্ত ভাবনার বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করে। শিশুরা গল্প শুনতে বেশ পছন্দ করে। তাদের বিভিন্ন নবীর গল্প শোনানো যায়। শিশুদের জন্য অনেক সুন্দর সুন্দর ইসলামি বই পাওয়া যায়। গল্পের বই পড়ার মাধ্যমে শিশুর মানসিক বিকাশ সাধন হয় এবং মনের ভাব প্রকাশের ক্ষমতা বাড়ে। এর ফলে শিশুরা জটিল শব্দ ও বাক্য সহজে বুঝতে পারে। এতে তার পড়ার আগ্রহ বৃদ্ধি পায়, সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পায় শিশুর বুদ্ধিমত্তা।

প্রতিটি শিশু সোনার মানুষে পরিণত হোক—এ প্রত্যাশাই আমাদের।

Pages: 1 ... 11 12 [13]