Recent Posts

Pages: 1 ... 5 6 [7] 8 9 10
61
General Discussion / Night games. No obligations. One night only.
« Last post by Mahbub Alam on May 11, 2024, 11:15:56 AM »
Connect casually with like-minded individuals on the ultimate dating platform.
Free connections: no strings attached dating
Genuine Ladies
Exemplary casual Dating
62

যে পর্যন্ত পরিশ্রম করে করে জীবিকা অর্জন করা যায়, সে পর্যন্ত সওয়াল করতে নেই :

وَعَنِ الزُّبَيْرِ بْنِ الْعَوَّامِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَأَنْ يَأْخُذَ أَحَدُكُمْ حَبْلَهُ فَيَأْتِيَ بِحُزْمَةِ حَطَبٍ عَلَى ظَهْرِهِ فَيَبِيعَهَا فَيَكُفَّ اللَّهُ بِهَا وَجْهَهُ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَسْأَلَ النَّاسَ أَعْطَوْهُ أَوْ مَنَعُوهُ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

হযরত যুবায়ের ইবনুল আওয়াম (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কোনো (অভাবী) মানুষের এ কাজটি যে, সে রশি নিয়ে জঙ্গলে যাবে এবং পিঠে লাকড়ির বোঝা বহন করে এনে বিক্রি করবে। ফলে আল্লাহ তা’আলা এর দ্বারা সওয়ালের লাঞ্ছনা থেকে তাকে রক্ষা করবেন, এটা তার জন্য ওই কাজ অপেক্ষা অনেক ভালো যে, সে মানুষের সামনে ভিক্ষার হাত প্রসারিত করবে। তারপর তারা তাকে কিছু দেবে অথবা না করে দেবে। (বুখারী)

সওয়াল করতে বাধ্য হলে আল্লাহর নেক বান্দাদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা :

عَنِ ابْنِ الْفِرَاسِيِّ أَنَّ الْفِرَاسِيَّ قَالَ: قُلْتُ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَسْأَلُ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا وَإِن كنت لابد فسل الصَّالِحين» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ

তাবেয়ী ইবনুল ফারাসী থেকে বর্ণিত, ফারাসী (রা.) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কি আমার প্রয়োজনে মানুষের কাছে সওয়াল করব? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (যতদূর সম্ভব) সওয়াল করতে যেয়ো না। আর যদি কোনো উপায়ান্তর না থাকে, তাহলে আল্লাহর নেক বান্দাদের কাছে সওয়াল করবে। (আবু দাউদ, নাসায়ী)

দান-খয়রাতের প্রতি উৎসাহ দান ও এর বরকত :

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: أَنْفِقْ يَا ابْن آدم أنْفق عَلَيْك

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি (আমার অভাবী বান্দাদের ওপর) নিজের উপার্জন থেকে খরচ করো, আমি আপন ভাণ্ডার থেকে তোমাকে দিতে থাকব। (বুখারী ও মুসলিম)

وَعَنْ أَسْمَاءَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَنَفِقِي وَلَا تُحْصِي فَيُحْصِيَ اللَّهُ عَلَيْكِ وَلَا تُوعِي فَيُوعِيَ اللَّهُ عَلَيْكِ ارْضَخِي مَا اسْتَطَعْتِ»

হযরত আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে বলেছিলেন, তুমি আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে তাঁর পথে মুক্ত হস্তে খরচ করে যাও, হিসাব করতে যেয়ো না। ( অর্থাৎ এ চিন্তায় পড়ো না যে, আমার কাছে কত আছে আর এখান থেকে আল্লাহর পথে কতটুকু খরচ করব) তুমি যদি এভাবে হিসাব করে আল্লাহর পথে ব্যয় করো, তাহলে আল্লাহও তোমাকে হিসাব করেই দেবেন। সম্পদ আঁকড়ে ধরে ও আবদ্ধ করে রাখবে না। এমন করলে আল্লাহও তোমাদের সাথে এমন আচরণই করবেন। (অর্থাৎ রহমত ও বরকতের দরজা তোমার ওপর বন্ধ করে দেবেন) যতদূর সম্ভব মুক্তস্ত হওয়ার চেষ্টা করো। (বুখারী ও মুসলিম)
63

নিজের প্রয়োজন মানুষের কাছে নয়, আল্লাহর কাছে পেশ করা :

وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رضي الله عنه قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ مَنْ أَصَابَتْهُ فَاقَةٌ فَأَنْزَلَهَا بِالنَّاسِ لَمْ تُسَدَّ فَاقَتُهُ، وَمَنْ أَنْزَلَهَا بِاللهِ أَوْشَكَ اللهُ لَهُ بِالْغِنَى إِمَّا بِمَوْتٍ عَاجِلٍ أَوْ غِنًى عَاجِلٍ ‏"‏ ‏. رواه أَبُو داود والترمذي

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তির কোনো অভাব-অনটন দেখা দিল আর সে এটা মানুষের সামনে পেশ করল (এবং তাদের কাছে সাহায্য চাইল) তার এ অভাব দূর হবে না। আর যে ব্যক্তি এটা আল্লাহর সামনে পেশ করল, খুবই আশা করা যায় যে, আল্লাহ তা’আলা তার এ অভাব দূর করে দেবেন। হয়তো দ্রুত মৃত্যু দিয়ে (যদি তার মৃত্যুর নির্ধারিত সময় এসে গিয়ে থাকে) অথবা কিছু বিলম্বে সচ্ছলতা দান করে। (আবু দাউদ, তিরমিযী)

সওয়ালে সর্বাবস্থায়ই অপমান রয়েছে :

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ وَهُوَ عَلَى الْمِنْبَرِ وَهُوَ يَذْكُرُ الصَّدَقَةَ وَالتَّعَفُّفَ عَنِ الْمَسْأَلَةِ: «الْيَدُ الْعُلْيَا خَيْرٌ مِنَ الْيَدِ السُّفْلَى وَالْيَد الْعليا هِيَ المنفقة وَالْيَد السُّفْلى هِيَ السائلة»

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন দান-খয়রাত করতে এবং সওয়াল থেকে বিরত থাকা প্রসঙ্গ আলোচনা করতে গিয়ে মিম্বরে দাঁড়িয়ে ইরশাদ করলেন, উপরের হাত নিচের হাত থেকে উত্তম। আর উপরের হাত হচ্ছে দানের হাত এবং নিচের হাত হচ্ছে ভিক্ষার হাত। (বুখারী ও মুসলিম)

চলবে...............
64

অজুহাত নয়, সচেতন হোন

আমাদের জযবা ও মেহনত অনুপাতেই আল্লাহ তা’আলা আমাদের সাহায্য করবেন। দুনিয়াতে আমাদের আগমন নেক কাজ করার জন্য। সুতরাং নেক কাজ করাই স্বভাবে পরিণত করতে হবে। এই শ্রমবাজারে বিভিন্ন অজুহাতে শ্রম থেকে বিরত থাকলে পারিশ্রমিক পকেটে আসবে না। দেখুন, একজন শ্রমিক কিন্তু জ্বর, সর্দি ও কাশির অজুহাত দিয়ে কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকে না। কারণ তার জানা আছে, শ্রম দিলেই কিছু আসবে, নয়তো রিক্তহস্তে কালাতিপাত করতে হবে। ফলে সে কাজের ব্যাপারে সচেতন থাকে। খুঁড়া কোনো অজুহাত খুঁজে না, অবহেলাও করে না। মনে রাখবেন, অজুহাত দুনিয়ার বেলায় চলতে পারে, আখেরাতের বেলায় নয়।

ইরশাদ হচ্ছে-

وَ اَنۡ لَّیۡسَ لِلۡاِنۡسَانِ اِلَّا مَا سَعٰی

যা করেছ, তাই পাবে। গন্তব্যে গেলে তাই উসুল হবে। (আন নাজম ৩৯)

পাপমুক্ত থাকা সহজ :

আমরা মনে করি, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা অনেক কঠিন কাজ। অথচ এটা অনেক সহজ। আল্লাহ তা’আলা বান্দাকে কোনো কঠিন বিধান দান করেননি। যা তার সামর্থ্যরে মধ্যে, তা-ই দান করেন। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-

 لَا یُکَلِّفُ اللّٰهُ نَفۡسًا اِلَّا وُسۡعَهَا

আল্লাহ সামর্থ্যরে বাইরে কাউকে বাধ্য করেন না। (বাকারা ২৮৬)

চেষ্টা বান্দার :

যখন অন্তরে আল্লাহর ভয় জমে যাবে তখনই গুনাহ থেকে বাঁচার পথ সুগম হবে। বান্দা হিসেবে চেষ্টা আপনাকেই করতে হবে। তবেই আল্লাহ বাঁচাবেন।চেষ্টা করে দেখুন আল্লাহ এমনভাবে বাঁচাবেন, যা কল্পনাও করতে পারবেন না। গুনাহ থেকে বাঁচার সত্যিকারের ইচ্ছা থাকলে আল্লাহ উপকরণ তৈরি করে দেবেন। আল্লাহ বান্দাকে মাহরুম করতে পারেন না। তিনি তো অতিশয় দয়ালু। মেহনতের পথ ও পন্থা ভুল হলে ভিন্ন কথা।

আয় অনুপাতে ব্যয় :

অনেকে বলেন, চাকরি করি পরিবার চলে না। কিন্তু কেন? আয় অনুপাতে ব্যয় করুন। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন। মনে রাখবেন, দুনিয়া কামানোর জায়গা, খাওয়ার জায়গা নয়। হারাম ছেড়ে হালাল অবলম্বন করুন। হারাম পোলাও-বিরিয়ানি ছেড়ে হালাল জাউ খান। হারাম কোরমা ছেড়ে হালাল ডাল খান দেখবেন খুব চলবে। আবার শান্তিও পাবেন। এটাও না পারলে রোযা রাখেন। তবুও দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করুন, হারাম খাব না, গুনাহ আমাকে ছাড়তেই হবে। শুরুতে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতেও পারেন। কিন্তু অতি শীঘ্রই কেটে যাবে। এমনভাবে রিযিকের দুয়ার খুলে যাবে, যা কল্পনাতীত।

ইরশাদ করেন-

وَمَنْ يَتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا

যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার জন্য সব কিছু সহজ করে দেন।

টুকটাক সমস্যা আসতে পারে তবে পেরেশান হতে নেই। বরং আফিয়াতের দু’আ করুন। ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে। ইরশাদ করেন-

فَاِنَّ مَعَ الۡعُسۡرِ یُسۡرًا ۙ اِنَّ مَعَ الۡعُسۡرِ یُسۡرًا

“নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে, নিশ্চয়, নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে।”

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন-

أَشَدُّ النَّاسِ بَلَاءً الْأَنْبِيَاءُ ثُمَّ الْأَمْثَلُ فَالْأَمْثَلُ

দুনিয়াতে সর্বাধিক পরীক্ষার সম্মূখীন হল নবীগণ এরপর যারা তাঁদের যত বেশি অনুসরণকারী। (মুসনাদে বাযযার- হা.১১৫০)

দুনিয়া সমস্যার জায়গা :

গুনাহ থেকে বাঁচতে চাইলে কিছু ঝড়ঝাপটা ও সমস্যা আসতে পারে। তবুও হিম্মত হারানো যাবে না। কারণ সমস্যাপূর্ণ জায়গার নামই হলো দুনিয়া। শেষ কথা হলো, অন্তর ও স্বভাব অপবিত্র হলে গুনাহের সুযোগ ও স্থান তালাশ করে। আর পবিত্র হলে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে। অতএব, আসুন দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করি যতই ক্ষতি বা কষ্ট হোক না কেন, অবশ্যই গুনাহ থেকে বিরত থাকব। আল্লাহ তা’আলা আমাদের এবং আপনাদেরকে সব ধরনের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন
65

গুনাহমুক্ত জীবন গড়ি

ফুর্তির জায়গা :

আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন খেয়েদেয়ে ফুর্তি করার জন্য নয়। বরং কষ্ট করে কিছু কামাই করার জন্য। মনে রাখবেন, দুনিয়া কামাই করার জয়গা। আর জান্নাত হলো ফুর্তি করার জায়গা। দুনিয়া কষ্টক্লেশের নাম। আর আখেরাত সুখ-শান্তির নাম। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওই সত্তা, যাকে কেন্দ্র করে আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টি জগতের অস্তিত্ব দান করেন। তিনি খন্দক যুদ্ধে নিজে কোদাল হাতে পরিখা খননে ব্যস্ত অথচ যবান মোবারকে উচ্চারিত হচ্ছিল-

اللَّهُمَّ لَا عَيْشَ إِلَّا عَيْشُ الْآخِرَهْ فَاغْفِرْ لِلْمُهَاجِرِيْنَ وَالأَنْصَارِ

হে আল্লাহ! আপনি আনসার ও মুহাজির সাহাবাদেরকে ক্ষমা করুন। আর পরিখা খননে তাদের কষ্টক্লেশ দেখে শুরুতেই শান্তনার বাণী শোনালেন যে, আমোদ-ফুর্তির জায়গা হলো আখেরাত, দুনিয়া নয়।

চাকরির চিন্তা :

ফুর্তির জায়গা কোনটি আর আয়-রুজির জায়গা কোনটি নির্ণয় করতে পারলে শরীয়ত মোতাবেক জীবন পরিচালনা করাও অতি সহজ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

দেখুন, একজন দুষ্ট ছাত্রও কিন্তু একসময় রাত জেগে লেখাপড়া করে। কারণ পরের দিন তার পরীক্ষা। সে এ ব্যাপারে অবগত যে, এখন মেহনত করলে পরীক্ষায় পাস করব। পাস হলে চাকরি পাব। বোঝা গেল, রাতের ঘুম হারাম করার পেছনে চাকরির চিন্তাই মূল কারণ। একজন দুষ্ট ছাত্রও যদি বুঝতে পারে রাত জেগে মেহনত করলে সে কী পাবে, তাহলে আমাদের কেন আখেরাতের বুঝ আসে না। লোকেরা যদি বুঝতে পারে, মেহন করলে কিছু পাওয়া যাবে, আমাদের কেন এই বুঝ আসে না যে, মেহনত করলে আখেরাত পাব। আমাদের আয়ুর পরিধি অনেক কম। জীবন একবারই লাভ হয়, বারবার নয়। অতএব যত পারা যায় আখেরাতের জন্য মেহনত করতে হবে। কারণ আমাদের সম্পর্ক রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে। মনে রাখবেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আগমন কোনো বিশেষ অঞ্চলের জন্য নয়। বরং পুরো দুনিয়ার জন্য।

وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ اِلَّا کَآفَّۃً لِّلنَّا

চলবে.................
.
66

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসিদ্ধ তরুণ প্রফেসরের গল্প

ড. মুহাম্মদ খানী বলছেন - একদিন আমি আমার গাড়িতে বসে ছিলাম, হঠাৎ প্রায় ষোল বছর বয়সী এক কিশোর এসে আমাকে বলল, স্যার আমি কি আপনার গাড়ির সামনের  গ্লাসগুলো পরিস্কার করে দিতে পারি?

আমি বললাম - হ্যাঁ।

সে যত্ন করে গ্লাস পরিষ্কার করে দিলে আমি তার হাতে ২০ ডলার গুঁজে দিলাম।ছেলেটি খানিক অবাক হয়ে বলল, আপনি কি আমেরিকায় থাকেন?আমি বললাম - হ্যাঁ। কেন?

সে বলল, আমি কি এই ২০ ডলারের বদলে সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে কিছু কথা জানতে পারি?

আমি তার বিনয় ও লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে তাকে কাছে ডেকে নিয়ে আলাপ শুরু করে দিলাম।

আলাপের শেষ দিকে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম - তুমি এভাবে রাস্তায় গাড়ি পরিস্কারের কাজ করে বেড়াচ্ছ কেন , তুমি তো একজন মেধাবী ছাত্র?

উত্তরে সে বলল, আমার দু বছর বয়সেই আমার বাবা মারা যান। আমার মা মানুষের বাসায় কাজ করেন। আমি এবং আমার ছোট বোন বাইরে টুকটাক কাজ করে বেড়াই বাড়তি কিছু রোজগারের আশায় যা দিয়ে আমাদের লেখাপড়ার খরচ চলে। আমি শুনেছি আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নাকি মেধাবী ছাত্রদের উচ্চতর লেখাপড়ার জন্য স্কলারশিপ দেয়। আমার খুব ইচ্ছা সেখানে পড়ার।কিন্তু সেখানে আমাকে সাহায্য করার মত তো কেউ নেই।

আমি বললাম - চলো, আগে আমরা একসাথে ডিনার করি।

সে বলল, একটি শর্তে আপনার দাওয়াত কবুল করতে পারি। আর তা হল বিনিময়ে আমি আপনার গাড়ির পেছনের গ্লাসগুলোও পরিষ্কার করে দেব।

আমি কথা না বাড়িয়ে তা মেনে নিয়ে হোটেলে ঢুকলাম।খাবার অর্ডার করলে সে ওয়েটারকে বলল তারগুলো পার্সেল করে দিতে। সে বাসায় গিয়ে তার মা আর বোনকে নিয়ে খাবে। খেয়াল করলাম তার ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অসামান্য।

বিদায় বেলায় সিদ্ধান্ত হল সে তার কাগজপত্রগুলো আমাকে দিবে, আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করব।

এভাবে দীর্ঘ ছয়মাস পর আমি তাকে আমেরিকা এনে ভালো একটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করতে সক্ষম হলাম।

সে তার তার মেধা ও অধ্যবসায়ের জোরে কয়েক বছরের মধ্যেই আধুনিক টেকনোলজির কনিষ্ঠ টেক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। নিউইয়র্ক টাইমসের পাতায় তাকে নিয়ে লিড নিউজ হলে সারা বিশ্বে হইচই পড়ে যায়।

তার ঈর্ষনীয় সফলতায় আমি ও আমার পরিবার যারপরনাই আনন্দিত হই। এদিকে তাকে না জানিয়ে তার মা ও বোনের ভিসা ব্যবস্থা করে আচমকা তার সামনে আমেরিকায় নিয়ে এসে তাকে বড়সড় সারপ্রাইজ দিয়ে চমকে দেই। তাদের দেখে সে বোবা বনে যায়। এমনকি কাঁদতে পর্যন্ত ভুলে যায়।

এখন সে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা শিক্ষকদের একজন।

তারও কিছুদিন পর আমি একদিন বাসা থেকে রাস্তার দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাই। দেখি সে বাইরে দাঁড়িয়ে আমার গাড়ির গ্লাসগুলো পরিষ্কার করছে!চটজলদি দৌড় গিয়ে তাকে বাধা দিয়ে বলি - এগুলো কি করছো?সে অশ্রুসজল চোখে বলল, ছাড়ুন স্যার! আমাকে আমার কাজ করতে দিন। যেন আমি আমার পরিচয় ভুলে না যাই। আমি মনে রাখতে চাই আমি কি ছিলাম আর আজ কি হলাম। এবং আপনি আমার জন্য কী করেছেন!

এই সেই ফিলিস্তিনি যুবক ফরিদ আব্দুল আলী। যিনি বর্তমানে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসিদ্ধ তরুণ প্রফেসর।

সংগৃহীত
67
হাফেজ তৈরি করে কি লাভ? বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা শুনুন। প্রফেসর ড. এম শমসের আলী।

https://www.youtube.com/watch?v=nZZlP2qbHJo
68

জীবনের ভিত্তিমূল তিনটি গুণ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

إِذَا كَانَ أُمَرَاؤُكُمْ خِيَارَكُمْ، وَأَغْنِيَاؤُكُمْ سُمَحَاءَكُمْ، وَأُمُورُكُمْ شُورَى بَيْنَكُمْ فَظَهْرُ الأَرْضِ خَيْرٌ لَكُمْ مِنْ بَطْنِهَا، وَإِذَا كَانَ أُمَرَاؤُكُمْ شِرَارَكُمْ وَأَغْنِيَاؤُكُمْ بُخَلاَءَكُمْ، وَأُمُورُكُمْ إِلَى نِسَائِكُمْ فَبَطْنُ الأَرْضِ خَيْرٌ لَكُمْ مِنْ ظَهْرِهَا.

লিডার বা শাসকশ্রেণি লোকেরা নেককার হওয়া, সম্পদশালীরা দানশীল হওয়া এবং পরস্পর পরামর্শের ভিত্তিতে কাজ করা—এই তিনটি গুণ যতদিন পৃথিবীতে বিদ্যমান থাকবে ততদিন জমিনের পেটের তুলনায় পিঠই তোমাদের জন্য উত্তম। অথার্ৎ মৃত্যুর তুলনায় পৃথিবীতে বেঁচে থাকা ভালো। কারণ, জীবন তো আখেরাত বিনির্মাণের জন্যই। উল্লিখিত পরিস্থিতিতে আখেরাত বিনির্মাণ করা যায়। যখন পৃথিবীতে এ তিনটি দোষ দেখা দেবে যে, লিডার বা শাসকরা মন্দ ও দুষ্ট প্রকৃতির হবে, সম্পদশালীরা কৃপণ হয়ে যাবে এবং পুরুষরা নারীদের পরামর্শে কাজকর্ম করবে তখন তোমাদের জন্য জমিনের পিঠ অপেক্ষা পেটই উত্তম হবে। অর্থাৎ এ পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যুবরণ করাই ভালো। কারণ, সে জীবন জাহান্নামের দিকেই নিয়ে যাবে। এ পরিস্থিতিতে আখেরাত বিনির্মাণ সম্ভব হবে না। তাই এ জীবন থেকে মৃত্যুই শ্রেয়।—জামে তিরমিযী  :২২৬৬

এখন হাদীসে উল্লিখিত গুণ ও দোষ সম্পর্কে কিছুটা বিস্তারিত আলোচনা করছি।

প্রথম গুণ : লিডার বা শাসক নেককার হওয়া

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম গুণ বর্ণনা করেছেন, তোমাদের শাসকগণ নেককার হবে। যতদিন শাসকশ্রেণি ভালো ও নেককার হবে ততদিন জীবন ভালোভাবে কাটবে।


আজকাল এটা মানুষের স্বভাবে পরিণত হয়েছে যে, কোনো সমস্যা দেখলেই মিছিল, মিটিং, হইচই ও দল গঠন শুরু করে দেয়। একবারও এ কথা ভেবে দেখে না যে বিষয়টা কতটুকু সত্য, কুরআন ও হাদীসের দৃষ্টতে কে আহলে হক ও বাতিল। এটা তো আমাদের আমল ও কৃতকর্মেরই বিষফল। আমল যেমন হবে ফলাফলোও তেমন হবে। সংশোধন করতে চাইলে, ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে হাঙ্গামা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে তা সম্ভব নয়। সম্ভব হবে একমাত্র ন্যায় শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। যোগ্যতা বুঝে প্রত্যেকের অধিকার আদায় করা। নিজেদের আমলের প্রতি দৃষ্টি আরোপ করা। নিজেরা ভালো মানুষে পরিণত হতে হবে। আল্লাহ তাআলার সকল নাফরমানী থেকে বিরত থাকবে অন্যদেরও বিরত রাখার চেষ্টা করবে। মোটকথা, পরিপূর্ণ দ্বীনদার হওয়ার বরকতে সুন্দর ও উত্তম শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে।


দ্বিতীয় গুণ : সম্পদশালীদের দানশীল হওয়া

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয় গুণ বর্ণনা করেছেন, তোমাদের সম্পদশালীরা দানশীল হবে। নিজেদের সম্পদ আল্লাহর রাহে ব্যয় করবে। সম্পদশালীরা যখন আল্লাহর রাহে খরচ করতে থাকবে তখন কাফের ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের উপর মুসলমানদের কতৃর্ত্ব প্রতিষ্ঠিত থাকবে। দরিদ্র ও অসহায়ের সহযোগিতাও হবে। দ্বীনের অন্যান্য কাজও অব্যাহত থাকবে।

 
তৃতীয় গুণ : পরস্পর পরামর্শ করা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তৃতীয় গুণ বর্ণনা করেছেন, তোমাদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরস্পর পরামর্শের ভিত্তিতে হবে। পুরুষরা পরস্পর পরামর্শ করবে এতে নারীদের কোনো কতৃর্ত্ব থাকবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

وأمركم شورى بينكم

بينكم শব্দে কয়েকটি বিষয় এসে গেছে।

এক. তোমাদের পরামর্শ হবে তোমাদের পরস্পরে। অর্থাৎ মুসলমান মুসলমানের সঙ্গে পরামর্শ করবে, কাফেরদের সঙ্গে নয়।

দুই. পরামর্শ করবে নেককারদের সঙ্গে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর সম্বোধন ছিল নেককারদের প্রতি। তোমরা নিজেরা পরামর্শ করবে, বে—দ্বীন থেকে পরামর্শ গ্রহণ করবে না।

তিন. كم শব্দ থেকে বোঝা যায়, পুরুষরা পরস্পর পরামর্শ করবে। নারীদের সঙ্গে পরামর্শ করবে না। যতদিন এ আমল অব্যাহত থাকবে ততদিন জমিনের পেট অপেক্ষা পিঠই তোমাদের জন্য উত্তম। জমিনের পিঠে জীবিত থাকাই ভালো হবে মৃত্যুবরণ করার চেয়ে। এমন জীবন হবে বরকতময়। তোমাদের সকল কাজে বরকত হবে।

যখন এ তিনটি বিষয় উল্টে যাবে অর্থাৎ লিডার বা শাসকশ্রেণি বে—দ্বীন ও মন্দ প্রকৃতির হবে, সম্পদশালীরা কৃপণ হয়ে যাবে এবং নারীদের সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতে কাজ করা হবে তখন জমিনের পিঠ অপেক্ষা পেটই তোমাদের জন্যই উত্তম হবে। জীবনের চেয়ে মৃত্যুই তখন উত্তম হবে। এ পরিস্থিতিতে জমিনের উপর জীবিত থাকার চেয়ে জমিনের পেটে চলে যাওয়াই ভালো।

চলবে.......................................
69

পরামর্শ গ্রহণকারীর ত্রুটি


পরামর্শ গ্রহণকারীর কিছু ত্রুটি এখন উল্লেখ করব। সাধারণভাবে পরামর্শ গ্রহণকারী নিম্নোক্ত ভুলগুলো করে থাকে :

এক. পরামর্শ গ্রহণের পূর্বেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কেবল নামেমাত্র পরামর্শ করে।

দুই. পরামর্শদাতার সামনে বিষয়টি সঠিকভাবে উপস্থাপন করে না।

তিন. পরামর্শদাতার পরামর্শকে পরামর্শের পরিবর্তে নির্দেশ মনে করে।

চার. পরামর্শের পর কোনো সমস্যা দেখা দিলে পরামর্শদাতার ত্রুটি মনে করে থাকে।

এখন এগুলোর বিস্তারিত বিবরণ পেশ করছি।

 
প্রথম ত্রুটি : পরামর্শের পূর্বেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা

পরামর্শ গ্রহণকারীর প্রথম ত্রুটি হলো, যে বিষয়ে পরামর্শ করতে চায় আগে থেকেই ভেবেচিন্তে সে বিষয়ে মনে মনে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নেয়। এরপর কোনো স্যার বা টিমের পরামর্শ চায়। স্যার বা টিমের পরামর্শ তার সিদ্ধান্তের সঙ্গে মিলে গেলে বলবে, অমুক স্যার বা টিমের সঙ্গে পরামর্শ করে কাজ করেছি। না মিললে স্যার বা টিমের পরামর্শের কোনো তোয়াক্কা না করে নিজের পূর্বসিদ্ধান্তের উপরই অটল থাকে।


দ্বিতীয় ত্রুটি : পরামর্শদাতার কাছে বিষয়টি সঠিকভাবে উপস্থাপন না করা

দ্বিতীয় ত্রুটি হলো, পরামর্শদাতার কাছে বিষয়টি সঠিকভাবে উপস্থাপন করে না। কোনো স্যার বা মুরব্বীর পরামর্শ গ্রহণের সময় বিষয়টির সকল ভালো দিক এক এক করে উল্লেখ করতে থাকে। যেন পরামর্শদাতা তার পক্ষেই পরামর্শ প্রদান করেন। কিন্তু বিষয়টির অপর দিক উপস্থাপনই করে না যে, এতে কী কী ক্ষতি রয়েছে। স্যার থেকে নিজের পক্ষে পরামর্শ নিয়ে মানুষদের বলে বেড়ায়, অমুক স্যার এ পরামর্শ দিয়েছেন। পক্ষান্তরে সে কাজটি না করতে চাইলে স্যারের সামনে বিষয়টির সকল ত্রুটি ও ক্ষতির দিক এক এক করে উল্লেখ করতে থাকে। কিন্তু এর অপরদিক উল্লেখই করে না যে, এতে কী কী ফায়দা রয়েছে।

পরামর্শের এ পদ্ধতি একেবারেই ভুল। সঠিক পদ্ধতি হলো, পরামর্শদাতার সামনে বিষয়টির লাভ—ক্ষতি উভয় দিক সঠিকভাবে উপস্থাপন করবে। তিনি উভয় দিক গভীরভাবে বিবেচনা করে উপযুক্ত পরামর্শ প্রদান করবেন। এখন তো মানুষ সঠিক বিষয় উল্লেখ করে না। শুধু তেল মারতে থাকে। এভাবে পরামর্শের কী ফায়দা?

অনেক সময় কেউ পরামর্শের জন্য এলে তার কথাবার্তায় স্পষ্ট বুঝতে পারি, সে আমার মুখ থেকে এ কথা বের করতে চায়, হ্যাঁ, এটা ঠিক আছে। তার কথা থেকেই পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে যাই এবং বুঝতে পারি, এ কেবল নামমাত্র পরামর্শ করতে এসেছে। যেন সে বলতে পারে, আমি পরামর্শ করেই কাজ করেছি। বিষয়ের লাভ—ক্ষতি উভয় দিক বিস্তারিত উল্লেখ করার পরিবর্তে কেবল একটি দিক উল্লেখ করে পরামর্শ করা আজকাল মানুষের স্বভাবে পরিণত হয়েছে।


তৃতীয় ত্রুটি : পরামর্শকে নির্দেশ মনে করা

পরামর্শ গ্রহণকারী তৃতীয় যে ভুলটি করে তা হলো, পরামর্শদাতা কোনো পরামর্শ দিলে তা পরামর্শের পরিবর্তে নির্দেশ মনে করে। পরামর্শদাতা তো পরিস্থিতির বিবরণ শুনে কেবল এ পরামর্শ  দিয়েছে যে, আপনি যা বর্ণনা করেছেন তা থেকে এ কাজ করাই ভালো মনে হচ্ছে। এটা শুধুই পরামর্শ। পরামর্শদাতা তা পালনে তাকে বাধ্য করে না। তাকে কোনো প্রকার নির্দেশও প্রদান করে না যে, এটাই করুন। কিন্তু সে পরামর্শগ্রহণের পর লোকদের বলতে থাকে, অমুক আমাকে এমনটি করতে বলেছেন। অমুক স্যার আমাকে বলেছেন এ কাজ করতে, তাই করছি।

আরে ভাই, তিনি কখন আপনাকে নির্দেশ করলেন! সিদ্ধান্ত তো আপনি নিজেই গ্রহণ করলেন। ওই স্যার তো আপনাকে শুধু এ কথাই বলেছেন, আপনার বর্ণনা অনুযায়ী অমুক কাজ করাই ভালো মনে হয়। অতএব তা করাই ঠিক হবে। স্যার তো এ কাজটিকে বেশির থেকে বেশি উত্তম বলেছেন। তিনি কেন বলতে যাবেন, এ কাজ করা আপনার উপর ফরয, আপনাকে অবশ্যই এটা করতে হবে! কিন্তু পরামর্শগ্রহীতা মানুষকে বলে বেড়ায়, অমুক স্যার বলার কারণে করছি। এটা অবশ্যই ওই স্যারের প্রতি মিথ্যা অপবাদ।

 
চতুর্থ ত্রুটি : ক্ষতি হলে পরামর্শদাতাকে দোষী সাব্যস্ত করা

চতুর্থ ত্রুটি হলো, পরামর্শমতো কাজ করার পর ফায়দা হলে আর সে স্যার বা টিমের কথা বলে না। তার নাম আলোচনায় আনে না; বরং নিজের বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করতে থাকে। যেমন নাকি কারুন বলত, ‘যা কিছু আমি উপার্জন করেছি তার সবই নিজের জ্ঞান—বুদ্ধির জোরেই করেছি।’ একই অবস্থা আজকালের পরামর্শগ্রহীতাদের। পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করে কোনো ফায়দা হলে ওই স্যারের কথা আর মনে থাকে না, যার পরামর্শ গ্রহণ করেছিল বা যাকে দিয়ে দুআ করিয়েছিল; বরং নিজের যোগ্যতা ও জ্ঞান—বুদ্ধির কথাই বলতে থাকে যে, যত ফায়দা হয়েছে তা আমার নিজের জ্ঞান—বুদ্ধি ও চেষ্টা—প্রচেষ্টার ফসল। পক্ষান্তরে ফায়দার পরিবর্তে (আল্লাহ না করুন) ক্ষতি হয়ে গেলে এর সকল দায়ভার ওই স্যার বা টিমের কাঁধে চাপিয়ে দেয় যে, আমি এ কাজ নিজ সিদ্ধান্তে করিনি; বরং অমুক স্যার বা টিমের পরামর্শে করেছি। শুধু তা—ই নয়; আরেকটু আগ বেড়ে বলে, স্যারেই তো আমাকে এ কাজ করতে বলেছেন। অতএব আমাকে এ জন্যে তিরষ্কার করার কোনো কারণ নেই। আমি তো কেবল স্যারের নির্দেশ পালন করেছি মাত্র। তো সবখানে এ কথাই বলে বেড়ায়, এটা স্যারের নির্দেশ ছিল। তাঁর পরামর্শেই এ কাজ করা হয়েছে।

 
পরামর্শদাতার ত্রুটি

পরামর্শদাতা যে ভুলের শিকার হন :

এক. কিছু লোক পরামর্শ প্রদানে এতটাই আগ্রহী থাকে যে, অযথাই কারও পেছনে লেগে থাকে আর পরামর্শ চাওয়া ব্যতীত নিজ থেকেই পরামর্শ দিতে থাকে। এমন কাউকে পরামর্শ দিতে যাবেন না, যে আপনার কাছে পরামর্শ চায়নি। আবার এমন কাউকেও পরামর্শ দিতে যাবে না, যার কাছে আপনার পরামর্শের কোনো গুরুত্ব নেই।

দুই. পরামর্শ গ্রহণ করতে পীড়াপিড়ি করা এবং পরামর্শ গ্রহণ না করলে অসন্তুষ্ট হওয়া। এটা মারাত্মক ভুল। পরামর্শের মূলকথা নিজের মত প্রকাশ করা মাত্র। কেউ তা গ্রহণ করুক বা না করুক এতে সমস্যার কিছু নেই।

চলবে………………………………
70

পরামর্শ প্রসঙ্গে কোরআনে কারীমের দুটি আয়াত উল্লেখ করা হয়েছে। এখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস শুনুন

০১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

ما سعد أحد برأيه وما شقي أحد عن مشورة

নিজের একক সিদ্ধান্তে কেউ সফল হয়নি আর পরামর্শ করে কেউ কখনো বিফল হয়নি।—জামে সগীর : ২/৩১

ইমাম বায়হাকী রহ. তাঁর হাদীসগ্রন্থ শুয়াবুল ঈমানে (হাদীস নং : ৭১৩৭) হাদীসটি মুরসাল সনদে উল্লেখ করেছেন।

০২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত মুআয ইবনে জাবাল রাযি.—কে ইয়ামানের বিচারক করে পাঠানোর সময় এ উপদেশ দিয়েছিলেন,

استشر فإن المستشير معان والمستشار مؤتمن

পরামর্শ করে কাজ করবে। কারণ, পরামর্শকারী (আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে) সাহায্যপ্রাপ্ত হয় আর যার পরামর্শ গ্রহণ করা হয় সে এ ব্যাপারে যিম্মাদার।—জামেউল আহাদীস : ৯/২০, হাদীস নং : ৮৮৪০

 
কার সঙ্গে পরামর্শ করব

নেককার ও দ্বীনদার ব্যক্তির সঙ্গে পরামর্শ করা চাই। পাশাপাশি ওই ব্যক্তির সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কিছুটা অভিজ্ঞতা থাকাও জরুরি।

 
নেককার অর্থ

হয়তো আপনারা জানেন, এমন ব্যক্তিকে নেককার বলা হয় যে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে। আল্লাহ তাআলার নাফরমানী থেকে নিজেও বিরত থাকে, অন্যদেরও বিরত রাখার চেষ্টা করে। যে দাড়ি সেভ করে বা ছেঁটে রাখে সে তো প্রথম শ্রেণির ফাসেক, নেককার কখনোই নয়। এমনিভাবে যার ঘরে শরয়ী পর্দা নেই, খালাত, মামাত, ফুফাত, চাচাত ভাই—বোনদের সঙ্গে, দেবর, ভাসুর, বোন জামাই, ননদের জামাইদের সঙ্গে যার ঘরে পর্দা করা হয় না, সে তো দাইয়ুস। এমন ব্যক্তি কখনোই নেককার হতে পারে না, চাই সে দৈনিক হাজার রাকাত নফল নামায পড়ুক, প্রতিবছর হজ করুক। এ ধরনের বেদ্বীন ব্যক্তি কখনোই পরামর্শের উপযুক্ত নয়।

 

বে—দ্বীন থেকে পরামর্শ গ্রহণের ক্ষতি

বে—দ্বীন থেকে পরামর্শ গ্রহণে যেসব ক্ষতি হতে পারে :

এক. বে—দ্বীন ব্যক্তির বিচার—বুদ্ধি ও বিবেচনাশক্তি অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। গোনাহ ও নাফরমানী করতে করতে তাদের বিবেক—বুদ্ধি ও বিবেচনাশক্তি আঁধারে ছেয়ে যায়। তাতে কোনো নূর থাকে না। তার অন্তরও অন্ধকারাচ্ছন্ন, বিবেক—বুদ্ধিও অন্ধকারাচ্ছন্ন। যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলাকেই চিনল না সে আল্লাহ তাআলার বিধি—বিধান ও এর উপযোগিতা ও উপকারিতা কী করে বুঝতে সক্ষম হবে। তাই বে—দ্বীন নাফরমানের পরামর্শ গ্রহণ করবে না। তার পরামর্শে ক্ষতিরই আশঙ্কা রয়েছে, ফায়দার কোনো সম্ভাবনা নেই।

দুই. বে—দ্বীন ব্যক্তি পরামর্শ গ্রহণকারীকে জেনে—বুঝে ভুল পরামর্শ দিতে পারে।

কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, জেনে—বুঝে কাউকে ভুল পরামর্শ দেওয়ার ফায়দা কী? এর উত্তর শুনুন,

 
জেনে—বুঝে ভুল পরামর্শ দেওয়ায় বে—দ্বীনের ফায়দা

জেনে—বুঝে কাউকে ভুল পরামর্শ দেওয়াতে বে—দ্বীনের দুটি ফায়দা রয়েছে,

এক. নিজের স্বার্থ হাসিল করা।

দুই. তাকে পেরেশান করা।

আপনাকে হয়তো সে বলে দিল, এ কাজ করবেন না। এতে আপনার মারাত্মক ক্ষতি হবে। আপনাকে এভাবে কাজ থেকে দূরে রেখে সে নিজে তা করে নেবে। আপনার ফায়দার কথা চিন্তা করে নয়; বরং নিজের স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে ভুল পরামর্শ দেবে। উদাহরণত আপনি অফিসের কোন কাজ বিষয়ে তার কাছে পরামর্শ চাইলেন। তো বিষয়টি তার নিজের কাছেই ভালো লেগে গেল। তখন সে আপনাকে বলবে, ‘এখানে এই কাজটি কখনোই করবেন না। এটা আপনার জন্য ভালো হবে না। এটা করলে আপনাকে আফসোস করতে হবে।’ বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখিন হতে হবে।

এভাবে আপনাকে সরিয়ে দিয়ে সে নিজেই সে কাজটি করে নেবে। তদ্রুপ আপনি কোনো ব্যবসার ব্যাপারে পরামর্শ চাইলেন। তখন সে হাজারো ক্ষতির দিক উল্লেখ করে এর থেকে আপনাকে বিরত রাখবে। উদ্দেশ্য হলো, আপনি যদি জানেন, এতে এই এই ভালো দিক রয়েছে, এতে এত লাভ হবে তা হলে তো আপনি লাভবান হয়ে যাবেন। অতএব আপনাকে বিরত রেখে সে নিজে এ লাভ অর্জনের চেষ্টা করবে।

এমনিভাবে কোনো চাকরির ব্যাপারে পরামর্শ চাইলেও একই কাজ করবে। মোটকথা বে—দ্বীন থেকে যে বিষয়েরই পরামর্শ চাওয়া হবে সে আপনার ফায়দার আগে নিজের ফায়দার কথা চিন্তা করবে। সর্বাবস্থায় তার চেষ্টা থাকবে কীভাবে তার মতলব হাসিল হবে। যদি বিষয়টি এমন হয় যে, এতে তার কোনো ফায়দা হবে না তবুও সে সঠিক পরামর্শ দেবে না। কারণ, বে—দ্বীনের কাছে অন্যের উপকার করতে ভালো লাগে না। তার মাথায় সর্বদা ফাসাদ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চিন্তা ঘুরপাক খায়। নিজের কোনো ফায়দা হোক বা না হোক অন্যের ক্ষতি সাধন করে। অন্যকে পেরেশান দেখে সে আনন্দিত হয়। অন্য কোনো ফায়দা হোক বা না হোক কাউকে পেরেশান করাটাও তার কাছে বড় ফায়দার বিষয়। সে যখন পেরেশান হবে তখন সে তাকে দেখে দেখে হাসবে যে, তাকে কীভাবে বোকা বানিয়ে ফেললাম।

পরামর্শ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে পরামর্শের জন্য নাফরমান ও বে—দ্বীনের ধারে—কাছেও যাবে না। পরামর্শ করতে চাইলে কোনো নেককার ও দ্বীনদার মানুষের সঙ্গে পরামর্শ করবে। দ্বীনদারীর পাশাপাশি যে বিষয়ে পরামর্শ গ্রহণ করবে সে বিষয়ে তার অভিজ্ঞতা আছে কি না তাও দেখে নেবে। কেউ না জেনে কোনো নেককার দ্বীনদার ব্যক্তিকে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ ভেবে পরামর্শ চাইলে ওই নেককার ব্যক্তির উপর ফরয হলো, সে পরিষ্কার জানিয়ে দেবে, এ বিষয়ে আমার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। অতএব আমি পরামর্শ দিতে সক্ষম নই। সে তাকে এ কথা না জানালে বাহ্যিক দৃষ্টিতে নেককার হলেও প্রকৃত অর্থে সে নেককার নয়।

চলবে…………………………

Pages: 1 ... 5 6 [7] 8 9 10