« on: July 21, 2022, 03:28:09 AM »
ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও পাখিগুলো
অনেক দিন আগের কথা।
তখন পৃথিবীতে বাস করতেন আল্লাহর এক প্রিয় মানুষ- ইবরাহিম আলাইহিস সালাম। তিনি আল্লাহর সত্যিকারের বন্ধু ছিলেন। তিনি আল্লাহর একজন মহান নবি ও রাসূল ছিলেন।
একবার ইবরাহিম আলাইহিস সালাম আল্লাহকে বললেন-’ হে আল্লাহ! আপনি মৃতকে কিভাবে পুনরায় জীবিত করেন তা কি আমায় একটু দেখাবেন?’ আল্লাহ তায়ালা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন-’আমি মৃত যেকোনো কিছুকে পুনরায় জীবিত করতে পারি-এটা কি তুমি বিশ্বাস করো না?’
ইবরাহিম আলাইহিস সালাম বললেন-’ হে আল্লাহ! আমি তো তা বিশ্বাস করিই। আমার মনকে বোঝানোর জন্য একটু দেখতে চেয়েছি শুধু। আপনি তো সবকিছুই পারেন, পরওয়ারদিগার।’
আল্লাহ তাঁর এই দুআ কবুল করলেন। দুনিয়ায় দেখাতে চাইলেন আল্লাহর এক অনুপম কুদরত। আল্লাহ তায়ালা ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে চারটি পাখি ধরে নিয়ে আসতে বললেন এবং সেগুলোকে ভালো করে পোষ মানাতে বললেন।
ইবরাহিম আলাইহিস সালাম বন থেকে চারটি পাখি ধরে আনলেন। পাখিগুলো খুব সুন্দর ছিল। ধীরে ধীরে পাখিগুলো পোষ মেনে গেল। পাখিগুলোকে ডাক দিলে সাথে সাথেই চলে আসত। এগুলোকে তিনি আলাদা আলাদাভাবে চিনতেন।
আল্লাহ তায়ালা তাঁর বন্ধুকে এবার বললেন-’ পাখিগুলোকে জবাই করে টুকরো টুকরো করে ফেলো। আর টুকরো অংশগুলো বিভিন্ন পাহাড়ে রেখে এসো।’ কিছুটা শিহরিত হয়ে গেলেন ইবরাহিম আলাইহিস সালাম, কিন্তু আল্লাহর অপার মহিমা দেখার জন্য তিনি তা-ই করলেন।
তিনি পাখিগুলো একেবারে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেললেন। অতঃপর টুকরোগুলোকে একত্রে মেশালেন। এবার তিনি পাখির মেশানো টুকরোগুলো কয়েকটা পাহাড়ে রেখে এলেন। আল্লাহ বললেন-’ এবার পাখিগুলোকে ডাকো। এরা ঠিকই তোমার কাছে ছুটে আসবে।’
ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এক জায়গায় দাঁড়িয়ে পাখিগুলোকে একে একে ডাক দিলেন। কী অবাক ব্যাপার! বিভিন্ন পাহাড়ে বিভিন্ন জায়গায় এক-এক পাখির এক-একটি অংশ ছিল। কোথাও হাড়ের একটি অংশ, কোথাও ডানার, কোথাও গোশতের, কোথাও কলিজার কোনো অংশ হয়তো পড়ে ছিল। কোথাও রক্ত পড়ে ছিল। সবগুলো অংশ ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে এক হয়ে নিমিষেই মিলে গেল। মুহূর্তেই জীবন্ত পাখি হয়ে উড়ে চলে এলো!
আল্লাহর মহিমা দেখে তিনি খুবই অবাক হয়ে গেলেন। জানো, কিয়ামতের পর এ পাখিগুলোর মতোই হবে মানুষের অবস্থা। বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বা মাটিতে মিশে যাওয়া মানুষেরা এভাবে জীবন ফিরে পাবে।
দৌড়াতে দৌড়াতে হাশরের ময়দানে হাজির হবে এ পাখিগুলোর মতোই। অনেকে মনে করে, মানুষ মরে গেলেই সব শেষ! তাই তারা দুনিয়ায় ইচ্ছেমতো খারাপ কাজ করে বেড়ায়। কিন্তু না, এ কথাটা মোটেও ঠিক নয়।
মৃত্যুর পর আল্লাহ তায়ালা এভাবেই আবার সবাইকে জীবিত করবেন; তাদের বিচার করবেন। ভালো কাজের জন্য চিরশান্তির জান্নাত দেবেন। খারাপ কাজের জন্য দেবেন ভয়ংকর জাহান্নাম।
তোমরা কি জানো- এ ঘটনা আল্লাহ তায়ালা কোথায় বলেছেন? পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ২৬০ নম্বর আয়াত পড়লেই আমরা এ ঘটনা জানতে পারব । আল্লাহ তায়ালা সেখানে এ ঘটনার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ أَرِنِي كَيْفَ تُحْيِي الْمَوْتَىٰ ۖ قَالَ أَوَلَمْ تُؤْمِن ۖ قَالَ بَلَىٰ وَلَـٰكِن لِّيَطْمَئِنَّ قَلْبِي ۖ قَالَ فَخُذْ أَرْبَعَةً مِّنَ الطَّيْرِ فَصُرْهُنَّ إِلَيْكَ ثُمَّ اجْعَلْ عَلَىٰ كُلِّ جَبَلٍ مِّنْهُنَّ جُزْءًا ثُمَّ ادْعُهُنَّ يَأْتِينَكَ سَعْيًا ۚ وَاعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
অর্থঃ এবং (সেই সময়ের বিবরণ শোন) যখন ইবরাহীম বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি মৃতকে কিভাবে জীবিত করবেন আমাকে তা দেখান। আল্লাহ বললেন, তুমি কি বিশ্বাস করছ না? বলল, বিশ্বাস কেন করব না? কিন্তু (এ আগ্রহ প্রকাশ করেছি এজন্য যে,) যাতে আমার অন্তর পরিপূর্ণ প্রশান্তি লাভ করে। আল্লাহ বললেন, আচ্ছা, চারটি পাখি ধর এবং সেগুলোকে তোমার পোষ মানিয়ে নাও। তারপর (সেগুলোকে যবাহ করে) তার একেক অংশ একেক পাহাড়ে রেখে দাও। তারপর তাদেরকে ডাক দাও। সবগুলো তোমার কাছে ছুটে চলে আসবে। আর জেনে রেখ, আল্লাহ তাআলা মহাক্ষমতাবান, প্রজ্ঞাময়। (সূরা আল-বাকারা ২৬০ নম্বর আয়াত)
Logged
জ্ঞান অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলমানের (নারী ও পুরুষ) উপর ফরজ । জ্ঞানের শহর হলেন হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) আর সেই শহরের দরজা হলেন হজরত আলী (রাঃ) । জ্ঞান ব্যতীত কর্ম অর্থহীন আবার কর্ম ব্যতীত জ্ঞান অর্থহীন। জ্ঞানী হও তবে অহংকারী হইও না, ইবাদত কর তবে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে করোনা ।