« on: May 29, 2025, 08:46:53 AM »
আলোর পথে যাত্রা শামীমার
শামীমা আক্তার, চল্লিশ পেরোনো এক নারী। চাঁদপুর জেলার এক ছোট্ট গ্রামে তার সংসার। স্বামী দিনমজুর, রোজগার অনিশ্চিত। তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে অভাবের সংসার যেন পিছু ছাড়তে চায় না। ভাঙা কুঁড়েঘর, দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগাড় করাই ছিল তার নিত্যদিনের সংগ্রাম। সন্তানদের স্কুলে পাঠানো দূরের কথা, তাদের মুখের দিকে তাকালেই শামীমার বুকটা হু হু করে উঠত।
একদিন গ্রামে এলেন ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশনের কর্মীরা। তারা “জীবিকা” প্রকল্পের অধীনে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করলেন। শামীমা প্রথমে তেমন আগ্রহ দেখাননি, বহুবার এমন আশ্বাস শুনেছেন কিন্তু বাস্তবে কিছুই বদলায়নি। তবে এবার কর্মীদের আন্তরিকতা আর তাদের প্রস্তাবিত প্রশিক্ষণ ও সহায়তার কথা শুনে তার মনে ক্ষীণ আশা জাগল।
শামীমা সাহস করে নিজের নাম নথিভুক্ত করলেন। তাকে হাঁস-মুরগি পালন এবং প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলো। প্রশিক্ষণ শেষে “জীবিকা” প্রকল্প থেকে তাকে কিছু হাঁস-মুরগি ও তাদের খাবার কেনার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হলো।
প্রথমদিকে শামীমার একটু ভয় লাগছিল। কখনো তিনি হাঁস-মুরগি পালন করেননি। তবে প্রশিক্ষণে শেখা কৌশল আর কর্মীদের নিয়মিত পরামর্শে তিনি ধীরে ধীরে কাজটা রপ্ত করে ফেললেন। অল্প দিনেই তার হাঁস-মুরগি ডিম দিতে শুরু করলো। সেই ডিম বিক্রি করে তার কিছু আয় হতে লাগলো।
এরপর শামীমা আর পিছন ফিরে তাকাননি। ডিম বিক্রির টাকা দিয়ে তিনি আরও কিছু হাঁস-মুরগি কিনলেন। পাশাপাশি, গ্রামের মানুষের ছোটখাটো অসুস্থতায় প্রাথমিক চিকিৎসার জ্ঞান কাজে লাগিয়েও তিনি কিছু রোজগার করতে শুরু করলেন। ধীরে ধীরে তার আর্থিক অবস্থার উন্নতি হতে লাগলো।
তাদের ভাঙা কুঁড়েঘরের চাল মেরামত হলো, ছেলেমেয়েদের জন্য নতুন জামাকাপড় কেনা হলো। সবচেয়ে বড় কথা, শামীমা তার বড় ছেলেকে গ্রামের স্কুলে ভর্তি করতে সক্ষম হলেন। ছেলেটা রোজ আগ্রহ নিয়ে স্কুলে যায়, নতুন নতুন জিনিস শেখে। মায়ের চোখে এখন আর হতাশার ছায়া নেই, সেখানে স্বপ্ন আর আত্মবিশ্বাসের আলো ঝলমল করে।
শুধু শামীমা একা নন, “জীবিকা” প্রকল্পের মাধ্যমে তার গ্রামের আরও অনেক দরিদ্র পরিবার তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পেরেছে। কেউ সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে, কেউবা কুটিরশিল্পের মাধ্যমে নতুন জীবন খুঁজে পেয়েছে।
শামীমা এখন অন্য নারীদেরও উৎসাহিত করেন। তিনি বলেন, “প্রথম দিকে ভয় পেয়েছিলাম, মনে হয়েছিল কিছুই বদলাবে না। কিন্তু ‘জীবিকা’ আমাদের দেখিয়েছে যে চেষ্টা করলে, সঠিক পথে চললে দারিদ্র্যের অন্ধকার ভেদ করে আলোয় আসা যায়।”
শামীমার এই গল্প শুধু একটি পরিবারের উন্নতির কাহিনী নয়, এটি একটি সমাজের পরিবর্তনের চিত্র। ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশনের “জীবিকা” প্রকল্প চাঁদপুর জেলার বহু শামীমার জীবনে এনেছে নতুন আশা, জুগিয়েছে আত্মবিশ্বাস আর দেখিয়েছে এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথ। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে কীভাবে একটি পিছিয়ে পড়া জনপদের জীবন বদলে দেওয়া যায়, শামীমার গল্প তারই এক জলন্ত উদাহরণ।

Logged
জ্ঞান অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলমানের (নারী ও পুরুষ) উপর ফরজ । জ্ঞানের শহর হলেন হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) আর সেই শহরের দরজা হলেন হজরত আলী (রাঃ) । জ্ঞান ব্যতীত কর্ম অর্থহীন আবার কর্ম ব্যতীত জ্ঞান অর্থহীন। জ্ঞানী হও তবে অহংকারী হইও না, ইবাদত কর তবে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে করোনা ।