Author Topic: টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে প্রবীণ জনগোষ্ö  (Read 5235 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

Farhana Haque

  • Administrator
  • Newbie
  • *****
  • Posts: 48
  • Gender: Female
  • You will never have this day again! Make it count!
    • View Profile
    • Email
টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর ভূমিকা।

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এমডিজি বাস্তবায়ন হয়েছে ২০০০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত। এ সময়ে এসডিজির লক্ষ্য ছিল স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ক্ষুধা-দারিদ্র্যের হার অর্ধেক কমিয়ে আনা। বাংলাদেশে দারিদ্র্যদূরীকরণ এবং সামাজিক অগ্রগতি সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে বিস্ময়কর বলে প্রতীয়মান হয়েছে। আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যাপক সফলতা উন্নয়নশীল দেশের মানুষ গভীর আগ্রহ নিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। পর্যবেক্ষকরা অনেকেই অবিশ্বাস্য এ উন্নয়নকে মানতে পারছেন না। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিশেষ করে প্রবৃদ্ধির উচ্চহারের বড় তিনটি কারণ রয়েছে। এক. চার দশক ধরে আমাদের পোশাক শিল্পে লাগাতার সফলতা। পোশাক শিল্পে যুক্ত রয়েছেন ৫০ থেকে লাখ ৬০ লাখ নারী এবং পুরুষ শ্রমিক। দুই. প্রবাসে প্রায় এক কোটি শ্রমিক, যারা কষ্ট করে টাকা-পয়সা রোজগার করে দেশে পাঠান। তিন. কৃষিতে উল্লেখযোগ্য হারে উৎপাদন বৃদ্ধি। প্রায় চার কোটি মানুষ উন্নয়নে অবদান রাখছেন। বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার ক্ষেত্রে সাফল্য দেখিয়েছেন। এমডিজি বাস্তবায়নে পোশাক শিল্প, কৃষি এবং প্রবাসী আয় অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অথচ এ তিন খাতকে আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব ও মর্যাদা নিয়ে দেখি না। পোশাক শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকরা স্বল্প বেতনে কঠিন পরিশ্রম করেন। তাদের কর্মক্ষেত্রে আগের চেয়ে নিরাপত্তা বেড়েছে। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও তুলনা মূলকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পোশাক শ্রমিকদের দিকে তাকালে বোঝা যায়, তারা কতটা ভালো আছেন। তাদের থাকার জায়গা অত্যন্ত নিম্নমানের। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকার কারণে অতি দ্রুত কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। অধিকাংশ পোশাক শ্রমিক সন্তান লালন-পালনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে পারেন না। সন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব পালন করেন মা-বাবা, শ্বশুর-শাশুড়ি। তাদের অনেকেই আবার প্রবীণ। কৃষিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালনকারীদের মধ্যে আমাদের প্রবীণ জনগোষ্ঠী রয়েছে। কৃষিতে অবসর গ্রহণের নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। ফলে একজন মানুষ যতক্ষণ শারীরিকভাবে চলাফেরা করতে সক্ষম, ততক্ষণ তিনি কৃষিতে কাজ করেন। প্রবাসী শ্রমিকদের দেশে স্ত্রী, সন্তান, মা-বাবা থাকেন। অনেকের মা-বাবা প্রবীণ। এ প্রবীণ মা-বাবা সংসারে সন্তান পালনে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করেন। মোট কথা, প্রবীণ জনগোষ্ঠী পোশাক শিল্প, কৃষি এবং প্রবাসী আয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা পালন করছেন। দুর্ভাগ্য এ প্রবীণ জনগোষ্ঠী আমাদের চিন্তক, নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি সীমার বাইরে। বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বা এসডিজির যুগে প্রবেশ করেছে। এসডিজির সময়কাল ধরা হয়েছে ২০১৬ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত। ১৭টি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব লক্ষ্য অর্জনে নানা ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বিশাল এ কর্মযজ্ঞে দেশের প্রবীণ জনগোষ্ঠীকে কীভাবে সম্পৃক্ত করা হয়েছে, সে বিষয়ে আমার পরিষ্কার কোনো ধারণা নেই। এসডিজি অর্জন করা একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এক নম্বর লক্ষ্য হলো, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা। দুই নম্বর লক্ষ্যÑ ক্ষুধা অবসান, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন, পুষ্টি উন্নয়ন, টেকসই কৃষি উন্নয়ন। তিন নম্বর লক্ষ্য হলো, সব বয়সি মানুষের স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিশ্চিত করা। চার নম্বর লক্ষ্যÑ শিক্ষার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করা। সাধারণ পাঠকমাত্রই বুঝতে পারবেন ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রথম চারটি লক্ষ্য বাস্তবায়ন কতটা দুরূহ কাজ। ক্ষুধা-দারিদ্র্য কমিয়ে আনা যায় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দিয়ে; কিন্তু এটি নির্মূল করার বিষয়টি হবে কঠিন। ক্ষুধা-দারিদ্র্য নির্মূল এটি দৃশ্যমান হতে হবে। কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব কিন্তু বিষমুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত খাবার উৎপাদন কঠিন চ্যালেঞ্জ। কৃষির টেকসই উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

স্বাস্থ্য খাত বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। জনসাধারণের সুস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিশ্চিত করতে বড় বড় অনেক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে। শিক্ষার বিস্তার ঘটানো সম্ভব। বাংলাদেশে শিক্ষার বিস্তার ঘটেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। শিক্ষার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করা খুবই দুরূহ একটি বিষয়। শিক্ষার মানোন্নয়ন করতে অবকাঠামোর উন্নয়ন, ভালো শিক্ষক, যুগোপযোগী সিলেবাস, উন্নতমানের পরীক্ষাগার, পর্যাপ্ত বাজেট, জ্ঞান সৃষ্টি এবং বিতরণের মুক্ত পরিবেশসহ আরও অনেক বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। এসডিজির ১৭টি লক্ষ্য অর্জনে সংশ্লিষ্ট সব মহলকে সম্পৃক্ত করা খুবই জরুরি বিষয়। এসডিজির ১৬ নম্বর লক্ষ্য হলো, নিশ্চিত করবে সর্বস্তরে সংবেদনশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিনিধিত্বশীল সিদ্ধান্ত গ্রহণ। নির্যাতন, মানবপাচার শিশু নির্যাতন, সহিংসতা বন্ধ করার ঘোষণা দেয়া আছে। আইনের শাসন এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এসডিজির সব লক্ষ্যের বাস্তবায়নে ১৬ নম্বর লক্ষ্যটি বিশেষ মনোযোগ পাবে।

এসডিজি অর্জন করতে হলে জনসাধারণের প্রয়োজন ও আকাক্সক্ষার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। একই সঙ্গে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশে এসডিজি অর্জন করতে দেশের প্রায় দেড় কোটি প্রবীণের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। প্রায় দেড় কোটি প্রবীণের যোগ্যতা, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার জন্য সক্ষম প্রবীণকে কাজে লাগাতে হবে। সক্ষম প্রবীণকে আয় বৃদ্ধিমূলক কাজে যুক্ত করতে হবে। সহজ শর্তে স্বল্পসুদে ঋণ গ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। যেসব প্রবীণ কৃষিকাজে যুক্ত তাদের উৎপাদনের উপকরণগুলোকে সহজলভ্য করা। উৎপাদিত পণ্যের উচিত মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। এসব কাজে প্রবীণের অংশগ্রহণ, মতামত, পরামর্শ, সিদ্ধান্তকে গুরুত্বসহ বিবেচনা করতে হবে। কৃষি খাতকে সমৃদ্ধ করার জন্য প্রবীণদের অভিজ্ঞতা-মতামতকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা এবং সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে গিয়ে প্রবীণদের বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ প্রবীণরা অসংক্রামক কয়েকটি ব্যাধিতে ভুগতে থাকেন। অধিকাংশ প্রবীণ উচ্চরক্তচাপ ডায়াবেটিস, বাত রোড, হৃদরোগ, কিডনি রোড, ক্যান্সার, হাঁপানি, অ্যালার্জি, হাঁটু-কোমর ব্যথায় ভুগতে থাকেন। আর্থিক সংকটের কারণে প্রবীণদের একটি বড় অংশ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হন। কেউ কেউ সঠিক চিকিৎসা সময়মতো পান না। প্রবীণদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নিতে হবে। প্রবীণ কেন্দ্র, ডেকেয়ার সেন্টার, নার্সিং হোম, প্রবীণ ক্লাব গঠন করার মধ্য দিয়ে প্রবীণদের সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে। প্রবীণরা দলবদ্ধভাবে মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন করার কাজে অংশ নিতে পারেন। মাদক গ্রহণের কুফল, ব্যায়াম করার সুফল, খেলাধুলার উপকারিতা, পুষ্টিকর খাবারের গুরুত্ব, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি বিষয়ে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা যায়। রোগ নিরাময় থেকে রোগপ্রতিরোধের চেষ্টা করা অধিক লাভজনক। প্রবীণদের এসব বিষয়ে ধারণা দিতে হবে। প্রবীণদের তুলনামূলকভাবে আয়-রোজগার কম হলে ব্যয়বহুল চিকিৎসাসেবা গ্রহণ কষ্টদায়ক। প্রবীণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য বীমা চালু করা দরকার। যারা নবীন, তারাও স্বাস্থ্য বীমাতে প্রিমিয়াম দেবেন, যখন প্রবীণ হবেন তখন চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। সমাজের সব মানুষকে স্বাস্থ্যসেবার প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। প্রত্যেক মানুষকেই ‘সেবাকর্মীর’ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। যাতে করে তিনি পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজনীয় সেবা দিতে সক্ষম হন। পরিবারের সদস্যরা অন্যদের প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা দিতে পারেন, প্রবীণ নিবাস, প্রবীণ সামাজিক কেন্দ্র, প্রবীণ ক্লাবে, প্রবীণ ডে-কেয়ার সেন্টার ইত্যাদিতে পয়সার বিনিময়ে অথবা বিনা পয়সায় প্রবীণ সেবা দেয়া যায়, আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় প্রবীণরাই প্রবীণদের সেবা-যতœ, খোঁজখবর বেশি করেন। প্রবীণদের সংগঠিত অবস্থায় প্রবীণদের প্রতি মনোযোগী হতে অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে। দেশে শিক্ষার বিস্তার মোটামুটি হয়েছে বলে আমার ধারণা। শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রবীণদের অনেক বড় ধরনের সুযোগ রয়েছে। নতুন জ্ঞান সৃষ্টি এবং জ্ঞান বিতরণের সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। মানুষে মানুষে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, মারামারি বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্ত করতে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারবে। শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে উন্নত মূল্যবোধের মানুষ তৈরি করা, যারা প্রাণ এবং প্রকৃতি রক্ষায় কাক্সিক্ষত ভূমিকা পালন করতে পারবেন। সমাজে ভিন্ন মত-পথের মানুষের স্বাধীনভাবে নিজেদের মতপ্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। প্রকৃতিকে ধ্বংস না করে কীভাবে মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পারে সে বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

সুশিক্ষাই মানুষকে সহনশীল মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করে। সুশাসন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে বৈষম্য দূর হবে এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। লুটপাট, কাড়াকাড়ি, ক্ষমতার মোহ, নিয়ন্ত্রণকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া অব্যাহত থাকলে সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে, একে অপরকে নির্মূল করার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকবে। শিক্ষার মাধ্যমে পৃথিবীকে বাসযোগ্য, শান্তিময় করে গড়ে তুলতে প্রবীণদের সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে, প্রাকৃতিক ও সামাজিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রবীণের অভিজ্ঞতা-দক্ষতা কাজে লাগাতে হবে। এসডিজির লক্ষ্য, সব মানুষের উন্নয়ন। কোনো মানুষই যেন উন্নত-আরামদায়ক জীবন থেকে বঞ্চিত না হন। স্বল্প খরচে উন্নতমানের দুর্নীতিমুক্ত সেবা মানুষের হাতের মুঠোয় থাকবে। এসডিজি অর্জনে অনেক বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। সেগুলো হলোÑ রাজনৈতিক অস্থিরতা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দুর্বলতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সহিংসতা, আয়বৈষম্য বৃদ্ধি, যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল, দুর্বৃত্তায়ন, দুর্বল প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ইত্যাদি। এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে প্রবীণ জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করলে সুফল পাওয়া যাবে।

লেখক :হাসান আলী ,সভাপতি, এজিং সাপোর্ট ফোরাম
ট্রেজারার, বাংলাদেশ জেরোন্টলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএ)
কারো মত নয় আমরা হবো যার যার মত। প্রতিজন "আমি" হবো এক একটি আদর্শ। জীবন একটিই। সময় অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। নিজেকে প্রমান করার এবং ভালো কাজ করার এখনই সময়।