Author Topic: ইয়াসরিবের অধিবাসীরা  (Read 2480 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

ashraful.diss

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 312
  • জ্ঞানী হও তবে অহংকারী হইও না
    • View Profile
    • Email
ইয়াসরিবের অধিবাসীরা
« on: July 29, 2022, 11:24:30 PM »

ইয়াসরিবের অধিবাসীরা

বুয়াস নামে এক মরুদ্যান ছিল ইয়াসরিবে। ইয়াসরিবের লোকেরা শহরের বাইরে প্রায় এ মরুদ্যানে গিয়ে আরাম করত। মেষপালক আর রাখালেরা তাদের পশুদের এখানে ছেড়ে দিয়ে বিশ্রাম নিত।

কিন্তু এ বুয়াসেই ঘটে যায় এক বিরাট কান্ড! আজ থেকে অনেক অনেক বছর পূর্বের ঘটনা। ৬১৭ সালের ঘটনা। চৌদ্দশত বছরেরও আগের কথা। সে সময় ইয়াসরিবে আওস ও খাজরাজ নামে বড়ো বড়ো দুটি আরব গোত্র ছিল। এ ছাড়া ইহুদিদের তিনটি গোত্রও সেখানে বসবাস করত। গোত্র তিনটি হলো-বনু কুরায়জা, বনু নাজির ও বনু কায়নুকা। এরা ছিল ভীষণ দুষ্ট।

এরা সুদের টাকার ব্যাবসা করত। কিছু টাকা ধার দিয়ে তার বিনিময়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ টাকা আদায় করত। এভাবে দুষ্ট ইহুদিরা ইয়াসরিবের আওস ও খাজরাজ গোত্রের লোকদের বোকা বানিয়ে ফায়দা লুটত।

তিনটি ইহুদি গোত্র বন্ধুত্ব করতে আওস ও খাজরাজ গোত্র দুটিকে ভাগ করে নিয়েছিল। বনু কুরায়জা ও বনু নাজির ছিল আওস গোত্রের বন্ধু, আর বনু কাইনুকা ছিল খাজরাজ গোত্রের বন্ধু।

এই ইহুদিরা সব সময় আওস ও খাজরাজ গোত্রের মধ্যে মারামারি, হানাহানি লাগিয়ে রাখত। কোনো ঠুনকো ঘটনা বছরের পর বছর যুদ্ধ চলত। মারা যেত শত শত লোক। ধন-সম্পদ শেষ হতে থাকত। আরো গরিব হয়ে যেত আওস ও খাজরাজ গোত্রের লোকেরা।

অন্যদিকে, ইহুদিদের ফায়দা হতো অনেক। তারা টাকা ধার দিত যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে। অনেক অনেক টাকা ধার! সে ধারের টাকায় অনেক লাভ নিত।

ইহুদিরা ভালো অস্ত্র বানাত। যুদ্ধ না থাকলে অস্ত্র কিনবে কারা? এসব অস্ত্র দুই পক্ষের কাছেই বিক্রয় করত। এভাবে দুর্বল ইয়াসরিববাসীরা সংখ্যায় অনেক বেশি হয়েও ইহুদিদের অধীনে থাকত সব সময়।

হঠাৎ একদিন শান্ত বুয়াসেই যুদ্ধ লেগে যায়। আওস ও খাজরাজ গোত্র একে অপরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। যুদ্ধ ভয়ংকর রুপ নেয়। খাজরাজ ছিল আওসের চেয়ে বড়ো গোত্র।
তারা তীব্র আক্রমণ চালিয়ে আওস গোত্রকে পরাজিত করে। আওস গোত্রের নেতা হুদাইরকে হত্যা করে।

আওস গোত্রও দমবার পাত্র নয়। তারা তাদের নেতা হত্যার বদলা নিতে উঠেপড়ে লাগে। তারা কয়েকটি বেদুইন গোত্রের সহায়তা নেয়। আবার যুদ্ধ শুরু হয়। এবার আওস গোত্রের প্রচণ্ড আক্রমণে খাজরাজ বাহিনী লন্ডভন্ড হয়ে যায়। তাদের অনেক যোদ্ধা মারা যায়।

যুদ্ধ আর শেষ হতে চায় না। খাজরাজ বাহিনীও পালটা আক্রমণ করে। এভাবে একাধারে পাঁচ বছর যুদ্ধ চলতে থাকে। তারপরও যুদ্ধের কোনো শেষ নেই। আওস ও খাজরাজ গোত্র এভাবে সব সময় যুদ্ধে লেগে থাকত। একই জাতি হয়েও ওরা ছিল চিরশত্রু। যুগের পর যুগ ধরে যুদ্ধ চলত। একবারের যুদ্ধ তো একশত বিশ বছর পর্যন্ত চলেছিল!

এদিকে মক্কায় ইসলামের প্রচার শুরু হয়। একসময় আওস ও খাজরাজ উভয় গোত্রের একদল লোক ইসলাম গ্রহণ করে। তারা নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ইয়াসরিবে আসার জন্য অনুরোধ করে। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর নির্দেশ পেয়ে মক্কা থেকে ইয়াসরিবে হিজরত করেন।

আর তখন থেকেই ইয়াসরিবের নাম হয়ে যায় মদিনাতুন্নবি বা নবির শহর; সংক্ষেপে মদিনা। আল্লাহর নবি মদিনায় এসে তাদের সবার সাথে মিলমিশ করে দেন। তাদের সবাইকে নিয়ে একটা সনদ রচনা করেন। সবাই সেই সনদ মেনে চলে। মারামারি-শত্রুতা ভুলে পরস্পর ভাই-ভাই হয়ে যায়। এ সময় চরম শত্রু আওস ও খাজরাজ গোত্রের লোকেরাও একে অপরের পরম বন্ধু ও ভাই হয়ে যায়। ইসলামের কল্যাণের যুদ্ধবাজ এ জাতিগুলো শান্তির পথে চলে আসে।

এভাবে আল্লাহ তায়ালা তাদের এক করে দিয়ে, শত্রুতা ভুলিয়ে, ভাই-ভাই বানিয়ে কতই না অনুগ্রহ করেছেন! তাদের দুনিয়ায় ও আখিরাতে ধ্বংস হওয়া থেকে তিনিই তো রক্ষা করেছেন! তাদের এ অবস্থার কথাই স্বরণ করে দিয়ে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন-

وَاعْتَصِمُوْا بِحَبْلِ اللّٰهِ جَمِيْعًا وَّلَا تَفَرَّقُوْا ۖوَاذْكُرُوْا نِعْمَتَ اللّٰهِ عَلَيْكُمْ اِذْ كُنْتُمْ اَعْدَاۤءً فَاَلَّفَ بَيْنَ قُلُوْبِكُمْ فَاَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِهٖٓ اِخْوَانًاۚ وَكُنْتُمْ عَلٰى شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَاَنْقَذَكُمْ مِّنْهَا ۗ كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللّٰهُ لَكُمْ اٰيٰتِهٖ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ

‘তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রশ্মিকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরো এবং কখনো পরস্পর আলাদা হয়ে যেয়ো না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর সেই নিয়ামতের কথা স্বরণ করো, যখন তোমরা ছিলে একে অপরের দুশমন। অতঃপর, আল্লাহ তোমাদের মনে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিলেন। ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা একে অপরের ভাই হয়ে গেলে। তোমরা ছিলে অগ্নিকুণ্ডের শেষ সীমানায়, আল্লাহ সেখান থেকে তোমাদের উদ্ধার করেন। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর নিদর্শনসমূহ স্পষ্ট করে বলে দেন, যাতে তোমরা সঠিক পথ পেতে পারো।’ {সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত ১০৩}
জ্ঞান অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলমানের (নারী ও পুরুষ) উপর ফরজ । জ্ঞানের শহর হলেন হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) আর সেই শহরের দরজা হলেন হজরত আলী (রাঃ) । জ্ঞান ব্যতীত কর্ম অর্থহীন আবার কর্ম ব্যতীত জ্ঞান অর্থহীন। জ্ঞানী হও তবে অহংকারী হইও না, ইবাদত কর তবে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে করোনা ।