Author Topic: ইসলামের দৃষ্টিতে একজন আদর্শ শিক্ষকের পরিõ  (Read 6917 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

ashraful.diss

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 387
  • জ্ঞানী হও তবে অহংকারী হইও না
    • View Profile
    • Email

ইসলামের দৃষ্টিতে একজন আদর্শ শিক্ষকের পরিচয়

শিক্ষক হচ্ছেন শিক্ষার্থীর জন্য একজন সংশোধনকারী ও পথপ্রর্দশক। কারো পক্ষে কোনো শিক্ষকের মাধ্যম ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা সম্ভব নয়।

যে ব্যক্তি শিক্ষক ছাড়া শুধু বই পুস্তক পড়ে বিদ্যা অর্জন করে, সে কোনো দিন শিক্ষার পুর্ণতায় পৌঁছতে পারে না। বিজ্ঞ জনেরা বলেছেন, যার কোনো শিক্ষক নেই তার শিক্ষক শয়তান। মনীষীগণ আরো বলেছেন, শিক্ষকের দৃষ্টান্ত একজন মালীর মতো। একটা বাগানের সমৃদ্ধি যেমন মালীর পুর্ণ দৃষ্টির ওপর নির্ভর করে তেমনিভাবে একজন শিক্ষার্থীর জীবনের উন্নতি-অবনতি শিক্ষকদের দৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল।

শিক্ষকের মর্যাদা : ইসলাম শিক্ষককে মহান ব্যক্তিত্ব ও শ্রদ্বার পাত্র হিসেবে স্বীকৃতি দান করেছে। যার বিবরণ কোরআন ও হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন,  الرحمن علم القرأن  করুনাময় শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা নিজেই সর্বপ্রথম শিক্ষক। সুতরাং যে কাজ আল্লাহ তায়ালা করেছেন উক্ত কাজে যে ব্যক্তি আত্মনিয়োগ করবে তার চেয়ে আর কেউ সম্মানের অধিকারী হতে পারে না।

উল্লেখ্য যে, বর্ণিত আয়াতে আল্লাহ তায়ালার  ‘রাহমান’ নামটি উল্লেখ করা হয়েছে। এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, একজন শিক্ষকের মধ্যে সর্বপ্রথম যে গুণটি থাকতে হবে তা হলো দয়া। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, انما بعثت معلما আমি শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। শুধু তাই নয় সব নবী রাসূলরা পৃথিবীতে শিক্ষক হিসেবেই প্রেরিত হয়েছিলেন। অন্য আরো একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষকদের শ্রেষ্ঠত্বের বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, خيركم من تعلم القرأن و علمه  তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি যে নিজে কোরআন মাজীদ শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষকদের শ্রেষ্ঠত্বের বর্ণনাই করেছেন, শুধু এতটুকুই নয় বরং তিনি শিক্ষকদের জন্য দোয়াও করেছেন। যেমন তিনি বলেছেন, نضر الله عبدا سمع مقالتى فحفظها و وعاها و اداها  আল্লাহ তায়ালা সুখি স্বচ্ছল রাখুন ওই ব্যক্তিকে যে আমার কোনো বাণী শোনে তা যথাযথভাবে স্মরণ রাখে এবং সংরক্ষণ করে অন্যের নিকট পৌঁছে দেয়। উপরোল্লেখিত বর্ণনার ভিত্তিতেই হজরত ওমর (রা.) শিক্ষকদেরকে মর্যাদার সর্বোচ্চ আসনে আসীন করেছিলেন।

শিক্ষকতাই শ্রেষ্ঠ কর্ম : সব পেশা হতে শ্রেষ্ঠ ও সম্মান জনক পেশা হচ্ছে শিক্ষকতা। পৃথিবীতে মানুষ যত কর্মে নিয়োজিত আছে, তার মধ্যে শিক্ষকতার শ্রেষ্ঠত্বের সঙ্গে কেউ প্রতিদ্বন্ধিতা করতে পারবে না। তাই সাহাবাদের (রা.) একটা বৃহৎ সংখ্যা শিক্ষক হিসেবে সমাজে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। বড় বড় রাজনীতিবিদ, সমাজনীতিবিদ এবং ধর্মীয় দিক নির্দেশকের ভূমিকায় শিক্ষকরাই ছিলেন অন্যতম। এ জন্যেই ইসলাম শিক্ষককে রূহানী পিতা সাব্যস্ত করেছে।

শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে কয়েকটি পরামর্শ : শুধু শিক্ষা দিলেই মর্যাদার অধিকারী হওয়া যায় না। বরং প্রশংসার আসনে আসীন হতে হলে শিক্ষকের জন্যেও কিছু করণীয় বিষয় রয়েছে, যেগুলো অবলম্বনে শিক্ষকতার দায়িত্ব আঞ্জাম দিলে ইহকালে পদমর্যাদার অধিকারী ও আখেরাতে বিরাট পুরস্কারে পুরস্কৃত হওয়া সম্ভব।

আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্যে শিক্ষা দেয়া এবং তদনুযায়ী আমল করা। ইমাম গায্যালী রহ.  বলেন, যে ব্যক্তি ইলম অর্জন করে এবং মানুষকে শিক্ষা দান করে, আকাশ ও পৃথিবীর রাজত্বে তাকেই মহান বলা হয়। সে সূর্যের মতো অপরকে আলো দান করে এবং নিজেও আলোকময়। সে মেশকের মতো অপরকে সুগন্ধিতে আমোদিত করে এবং নিজেও সুগন্ধি যুক্ত। আর যে ব্যক্তি অপরকে শিক্ষা দান করে কিন্তু নিজে আমল করে না সে শানের মতো লোহাকে ধারালো করে কিন্তু নিজে কাটে না, সে ব্যক্তি সুচের মত যে অন্যের জন্য পোশাক তৈরী করে কিন্তু নিজে উলঙ্গ থাকে।

পাঠ দানের পূর্বে পড়ানোর পদ্ধতি মুতালা‘আর মাধ্যমে অনুশীলন করে শ্রেণী কক্ষে যাওয়া। পড়ানো শেষ হলে শিক্ষার্থীদের চেহারার দিকে তাকানো। যদি তাদের চেহারায় আনন্দের আভা দেখা দেয় , তাহলে বুঝতে হবে যে তারা বিষয় বস্তু হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছে।  আর যদি তাদের চেহারায় নৈরাশ্যের ছাপ থাকে তাহলে বুঝে নিতে হবে তারা সন্তুষ্ট নয়। সুতরাং শিক্ষকের উচিৎ পরবর্তিতে উক্ত বিষয়টি বুঝিয়ে দেয়া।

বর্ণিত আছে, একদা গ্যালেন (হাকিম জালিনুস ) একটি জটিল বিষয়ের ক্লাস নিলেন। পাঠদান সমাপ্ত করে জিজ্ঞেস করলেন তোমরা কি বুঝেছ? শিক্ষার্থীরা হ্যাঁ বুঝেছি বলে উত্তর দিলেও তিনি মন্তব্য করলেন তোমরা বুঝনি। কারণ لو فهمتم لظهر السرورعلي وجوهكم  যদি তোমরা বুঝতে তাহলে তোমাদের চেহারায় আনন্দের আভা ফুটে উঠতো।

শিক্ষার্থীদেরকে সন্তানের মতো স্নেহ করা। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন انما انالكم مثل الوالد لولد সন্তানের জন্য পিতা যেমন, আমিও তোমাদের জন্য তেমন।  হজরত মুআবিয়া ইবনে হাকাম সুলামী (রা.) বর্ণনা করেন, ما رايت معلما قبله ولابعده احسن تعليما منه فوالله ما قهرني ولا ضربني ولاشتمني-   আমি  রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শ্রেষ্ঠ কোনো শিক্ষক পূর্বেও দেখিনি এবং তাঁর পরেও দেখিনি । তিনি আমাকে না ধমক দিলেন, না মারলেন, না কোনো গাল-মন্দ করলেন।

‘শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ হচ্ছে’ মনে না করা। বরং তাদের প্রতি অনুগ্রহভাজন হওয়া। তাদের দ্বারাই আমি গৌরবের অধিকারী হয়েছি মনে করা। শিক্ষার্থীদেরকে আমলের জন্য উৎসাহিত করা। কখনো কখনো সৎ উপদেশ দান করা। যাতে করে তারা কুচরিত্র থেকে বেঁচে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে। সংশোধনের জন্য গঠনমূলক শাস্তি দেয়া। রাগের বশে বেত্রাঘাত না করা। কারণ এর দ্বারা সংশোধনের ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি হতে পারে। শরীরে দাগ পড়ে যায়, হাড্ডিতে আঘাত লাগে, প্রতিষ্ঠানের বদনাম হয়, নিজের সম্মান নষ্ট হয়, এ ধরণের প্রহার থেকে অবশ্যই আত্মরক্ষা করতে হবে। মৌখিক শাসনের বেলায় কুকুর, বিড়াল, শুকর, গাধা, গরু, ছাগল, ইত্যাদি শব্দে কখনো না শাসানো।

শিক্ষকদের নিজের জন্য এ দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করা জরুরি رب اشرح لي صدري ويسرلي امري واحلل عقدة من لساني يفقهو ا قولي  ‘হে আমার পালন কর্তা আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন। এবং আমার কাজ সহজ করে দিন। এবং আমার জিহ্বা থেকে জড়তা দূর করে দিন, যাতে করে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।’ ছাত্রদের জন্যেও দোয়া করা এবং তাদেরকে ইলমও আমলের জন্য দোয়া করতে উৎসাহিত করা।
জ্ঞান অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলমানের (নারী ও পুরুষ) উপর ফরজ । জ্ঞানের শহর হলেন হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) আর সেই শহরের দরজা হলেন হজরত আলী (রাঃ) । জ্ঞান ব্যতীত কর্ম অর্থহীন আবার কর্ম ব্যতীত জ্ঞান অর্থহীন। জ্ঞানী হও তবে অহংকারী হইও না, ইবাদত কর তবে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে করোনা ।