Author Topic: পরামর্শ প্রসঙ্গে রাসূল (সাঃ) এর হাদীস  (Read 3118 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

ashraful.diss

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 312
  • জ্ঞানী হও তবে অহংকারী হইও না
    • View Profile
    • Email

পরামর্শ প্রসঙ্গে কোরআনে কারীমের দুটি আয়াত উল্লেখ করা হয়েছে। এখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস শুনুন

০১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

ما سعد أحد برأيه وما شقي أحد عن مشورة

নিজের একক সিদ্ধান্তে কেউ সফল হয়নি আর পরামর্শ করে কেউ কখনো বিফল হয়নি।—জামে সগীর : ২/৩১

ইমাম বায়হাকী রহ. তাঁর হাদীসগ্রন্থ শুয়াবুল ঈমানে (হাদীস নং : ৭১৩৭) হাদীসটি মুরসাল সনদে উল্লেখ করেছেন।

০২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত মুআয ইবনে জাবাল রাযি.—কে ইয়ামানের বিচারক করে পাঠানোর সময় এ উপদেশ দিয়েছিলেন,

استشر فإن المستشير معان والمستشار مؤتمن

পরামর্শ করে কাজ করবে। কারণ, পরামর্শকারী (আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে) সাহায্যপ্রাপ্ত হয় আর যার পরামর্শ গ্রহণ করা হয় সে এ ব্যাপারে যিম্মাদার।—জামেউল আহাদীস : ৯/২০, হাদীস নং : ৮৮৪০

 
কার সঙ্গে পরামর্শ করব

নেককার ও দ্বীনদার ব্যক্তির সঙ্গে পরামর্শ করা চাই। পাশাপাশি ওই ব্যক্তির সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কিছুটা অভিজ্ঞতা থাকাও জরুরি।

 
নেককার অর্থ

হয়তো আপনারা জানেন, এমন ব্যক্তিকে নেককার বলা হয় যে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে। আল্লাহ তাআলার নাফরমানী থেকে নিজেও বিরত থাকে, অন্যদেরও বিরত রাখার চেষ্টা করে। যে দাড়ি সেভ করে বা ছেঁটে রাখে সে তো প্রথম শ্রেণির ফাসেক, নেককার কখনোই নয়। এমনিভাবে যার ঘরে শরয়ী পর্দা নেই, খালাত, মামাত, ফুফাত, চাচাত ভাই—বোনদের সঙ্গে, দেবর, ভাসুর, বোন জামাই, ননদের জামাইদের সঙ্গে যার ঘরে পর্দা করা হয় না, সে তো দাইয়ুস। এমন ব্যক্তি কখনোই নেককার হতে পারে না, চাই সে দৈনিক হাজার রাকাত নফল নামায পড়ুক, প্রতিবছর হজ করুক। এ ধরনের বেদ্বীন ব্যক্তি কখনোই পরামর্শের উপযুক্ত নয়।

 

বে—দ্বীন থেকে পরামর্শ গ্রহণের ক্ষতি

বে—দ্বীন থেকে পরামর্শ গ্রহণে যেসব ক্ষতি হতে পারে :

এক. বে—দ্বীন ব্যক্তির বিচার—বুদ্ধি ও বিবেচনাশক্তি অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। গোনাহ ও নাফরমানী করতে করতে তাদের বিবেক—বুদ্ধি ও বিবেচনাশক্তি আঁধারে ছেয়ে যায়। তাতে কোনো নূর থাকে না। তার অন্তরও অন্ধকারাচ্ছন্ন, বিবেক—বুদ্ধিও অন্ধকারাচ্ছন্ন। যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলাকেই চিনল না সে আল্লাহ তাআলার বিধি—বিধান ও এর উপযোগিতা ও উপকারিতা কী করে বুঝতে সক্ষম হবে। তাই বে—দ্বীন নাফরমানের পরামর্শ গ্রহণ করবে না। তার পরামর্শে ক্ষতিরই আশঙ্কা রয়েছে, ফায়দার কোনো সম্ভাবনা নেই।

দুই. বে—দ্বীন ব্যক্তি পরামর্শ গ্রহণকারীকে জেনে—বুঝে ভুল পরামর্শ দিতে পারে।

কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, জেনে—বুঝে কাউকে ভুল পরামর্শ দেওয়ার ফায়দা কী? এর উত্তর শুনুন,

 
জেনে—বুঝে ভুল পরামর্শ দেওয়ায় বে—দ্বীনের ফায়দা

জেনে—বুঝে কাউকে ভুল পরামর্শ দেওয়াতে বে—দ্বীনের দুটি ফায়দা রয়েছে,

এক. নিজের স্বার্থ হাসিল করা।

দুই. তাকে পেরেশান করা।

আপনাকে হয়তো সে বলে দিল, এ কাজ করবেন না। এতে আপনার মারাত্মক ক্ষতি হবে। আপনাকে এভাবে কাজ থেকে দূরে রেখে সে নিজে তা করে নেবে। আপনার ফায়দার কথা চিন্তা করে নয়; বরং নিজের স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে ভুল পরামর্শ দেবে। উদাহরণত আপনি অফিসের কোন কাজ বিষয়ে তার কাছে পরামর্শ চাইলেন। তো বিষয়টি তার নিজের কাছেই ভালো লেগে গেল। তখন সে আপনাকে বলবে, ‘এখানে এই কাজটি কখনোই করবেন না। এটা আপনার জন্য ভালো হবে না। এটা করলে আপনাকে আফসোস করতে হবে।’ বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখিন হতে হবে।

এভাবে আপনাকে সরিয়ে দিয়ে সে নিজেই সে কাজটি করে নেবে। তদ্রুপ আপনি কোনো ব্যবসার ব্যাপারে পরামর্শ চাইলেন। তখন সে হাজারো ক্ষতির দিক উল্লেখ করে এর থেকে আপনাকে বিরত রাখবে। উদ্দেশ্য হলো, আপনি যদি জানেন, এতে এই এই ভালো দিক রয়েছে, এতে এত লাভ হবে তা হলে তো আপনি লাভবান হয়ে যাবেন। অতএব আপনাকে বিরত রেখে সে নিজে এ লাভ অর্জনের চেষ্টা করবে।

এমনিভাবে কোনো চাকরির ব্যাপারে পরামর্শ চাইলেও একই কাজ করবে। মোটকথা বে—দ্বীন থেকে যে বিষয়েরই পরামর্শ চাওয়া হবে সে আপনার ফায়দার আগে নিজের ফায়দার কথা চিন্তা করবে। সর্বাবস্থায় তার চেষ্টা থাকবে কীভাবে তার মতলব হাসিল হবে। যদি বিষয়টি এমন হয় যে, এতে তার কোনো ফায়দা হবে না তবুও সে সঠিক পরামর্শ দেবে না। কারণ, বে—দ্বীনের কাছে অন্যের উপকার করতে ভালো লাগে না। তার মাথায় সর্বদা ফাসাদ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চিন্তা ঘুরপাক খায়। নিজের কোনো ফায়দা হোক বা না হোক অন্যের ক্ষতি সাধন করে। অন্যকে পেরেশান দেখে সে আনন্দিত হয়। অন্য কোনো ফায়দা হোক বা না হোক কাউকে পেরেশান করাটাও তার কাছে বড় ফায়দার বিষয়। সে যখন পেরেশান হবে তখন সে তাকে দেখে দেখে হাসবে যে, তাকে কীভাবে বোকা বানিয়ে ফেললাম।

পরামর্শ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে পরামর্শের জন্য নাফরমান ও বে—দ্বীনের ধারে—কাছেও যাবে না। পরামর্শ করতে চাইলে কোনো নেককার ও দ্বীনদার মানুষের সঙ্গে পরামর্শ করবে। দ্বীনদারীর পাশাপাশি যে বিষয়ে পরামর্শ গ্রহণ করবে সে বিষয়ে তার অভিজ্ঞতা আছে কি না তাও দেখে নেবে। কেউ না জেনে কোনো নেককার দ্বীনদার ব্যক্তিকে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ ভেবে পরামর্শ চাইলে ওই নেককার ব্যক্তির উপর ফরয হলো, সে পরিষ্কার জানিয়ে দেবে, এ বিষয়ে আমার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। অতএব আমি পরামর্শ দিতে সক্ষম নই। সে তাকে এ কথা না জানালে বাহ্যিক দৃষ্টিতে নেককার হলেও প্রকৃত অর্থে সে নেককার নয়।

চলবে…………………………

জ্ঞান অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলমানের (নারী ও পুরুষ) উপর ফরজ । জ্ঞানের শহর হলেন হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) আর সেই শহরের দরজা হলেন হজরত আলী (রাঃ) । জ্ঞান ব্যতীত কর্ম অর্থহীন আবার কর্ম ব্যতীত জ্ঞান অর্থহীন। জ্ঞানী হও তবে অহংকারী হইও না, ইবাদত কর তবে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে করোনা ।