• Welcome to Daffodil Foundation Forum.
 

News:

Daffodil Foundation is a non-profit organization in Bangladesh that aims to improve the quality of life for current and future generations.

Main Menu

নৈতিক শিক্ষা কাউন্সিলিং সেশন

Started by ashraful.diss, October 08, 2025, 09:43:47 AM

Previous topic - Next topic

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

ashraful.diss

ডিআইএসএস চাইল্ড হোমের শিশুদের জন্য চুরি রোধে কুরআন ও হাদিসের আলোকে নৈতিক শিক্ষা কাউন্সিলিং সেশন

সেশনের শিরোনাম: চুরি: একটি জঘন্য অপরাধ - কুরআন ও হাদিসের আলোকে এর পরিণতি এবং পরিত্রাণের উপায়

সেশনের উদ্দেশ্য:

ডিআইএসএস চাইল্ড হোমের শিশুদের চুরি করার খারাপ অভ্যাস সম্পর্কে সচেতন করা।
কুরআন ও হাদিসের আলোকে চুরির ভয়াবহতা ও এর কুফল সম্পর্কে জ্ঞান দান করা।
তাদের মধ্যে অনুশোচনা ও অনুশোচনার অনুভূতি জাগানো এবং এই খারাপ কাজ থেকে ফিরে আসার অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করা।
চুরি না করার গুরুত্ব এবং সৎ পথে জীবন যাপনের ফজিলত সম্পর্কে অবগত করা।
চুরি রোধে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণে তাদের উৎসাহিত করা।

সময়: প্রায় ৬০-৭০ মিনিট

উপকরণ:

কুরআনের আয়াত ও হাদিসের কিছু নির্বাচিত অংশ (প্রয়োজনে পোস্টার বা স্লাইডে লিখে আনা)।
কিছু শিক্ষামূলক গল্প বা উদাহরণ।
আলোচনার জন্য সহজ ও বোধগম্য ভাষা।

সেশনের ধাপ:

১. ভূমিকা ও পারস্পরিক পরিচিতি (৫ মিনিট):

কাউন্সিলর শিশুদের সাথে আন্তরিকভাবে সালাম ও শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
তাদের নাম ও ব্যক্তিগত বিষয়ে কুশল জিজ্ঞাসা করবেন, যাতে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়।
আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে সংক্ষেপে ধারণা দেবেন: "আজ আমরা চুরি নামক একটি খারাপ অভ্যাস নিয়ে কথা বলবো। কুরআন ও হাদিসে এই বিষয়ে কী বলা হয়েছে এবং কেন আমাদের এই কাজ থেকে দূরে থাকা উচিত, তা আমরা জানার চেষ্টা করবো।"

২. চুরির ভয়াবহতা - কুরআনের আলোকে (১৫ মিনিট):

কাউন্সিলর কুরআনের কিছু আয়াত তেলাওয়াত করবেন এবং শিশুদের উপযোগী করে এর অর্থ ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করবেন। যেমন:

সূরা আল-মায়েদার ৩৮ নম্বর আয়াত: وَ السَّارِقُ وَ السَّارِقَۃُ فَاقۡطَعُوۡۤا اَیۡدِیَهُمَا جَزَآءًۢ بِمَا كَسَبَا نَكَالًا مِّنَ اللّٰهِ ؕ وَ اللّٰهُ عَزِیۡزٌ حَكِیۡمٌ {"পুরুষ চোর ও নারী চোর তাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ তাদের হাত কেটে দাও। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত শাস্তি। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।"}
কাউন্সিলর এই আয়াতের মাধ্যমে বোঝাবেন যে ইসলামে চুরির শাস্তি অত্যন্ত কঠোর। যদিও এই শাস্তি বাস্তবায়নের নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া ও শর্ত রয়েছে, তবে এর মাধ্যমে চুরির জঘন্যতা ও সমাজে এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
সূরা আল-বাকারা'র ১৮৮ নম্বর আয়াত: وَ لَا تَاۡكُلُوۡۤا اَمۡوَالَكُمۡ بَیۡنَكُمۡ بِالۡبَاطِلِ وَ تُدۡلُوۡا بِهَاۤ اِلَی الۡحُكَّامِ لِتَاۡكُلُوۡا فَرِیۡقًا مِّنۡ اَمۡوَالِ النَّاسِ بِالۡاِثۡمِ وَ اَنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ {"আর তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভক্ষণ করো না এবং মানুষের কাছে ধন-সম্পদ দিয়ে বিচারকদেরকে ঘুষ দিও না, যাতে তোমরা জেনেশুনে কারো সম্পদের কিছু অংশ অন্যায়ভাবে গ্রাস করতে পারো।"}

এই আয়াতের মাধ্যমে বোঝানো হবে যে আল্লাহ তাআলা যেকোনো উপায়ে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন, চুরিও এর অন্তর্ভুক্ত।

৩. চুরির কুফল - হাদিসের আলোকে (২০ মিনিট):

কাউন্সিলর কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিস উল্লেখ করবেন এবং সহজ ভাষায় এর ব্যাখ্যা দেবেন। যেমন:

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: لاَ يَسْرِقُ السَّارِقُ حِينَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ {"চোর যখন চুরি করে, তখন সে মুমিন থাকে না।"} (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ২৪৭৫; সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৭)
এই হাদিসের মাধ্যমে বোঝানো হবে যে চুরি ঈমানের দুর্বলতা ও আল্লাহর প্রতি আস্থার অভাবের পরিচায়ক। একজন মুমিন কখনো এমন কাজ করতে পারে না।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: «اتَّقُوا الْكَذِبَ، فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الْفُجُورِ، وَإِنَّ الْفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ، وَاتَّقُوا السَّرِقَةَ، فَإِنَّ السَّرِقَةَ تَهْدِي إِلَى الْفُجُورِ، وَإِنَّ الْفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ» {"তোমরা মিথ্যা বলা থেকে বেঁচে থাকো, কেননা মিথ্যা পাপাচারের দিকে ধাবিত করে আর পাপ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। আর তোমরা চুরি করা থেকে বেঁচে থাকো, কেননা চুরি কলুষতার দিকে ধাবিত করে আর কলুষতা জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়।"} (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ৫৩০০)

এই হাদিসের মাধ্যমে চুরিকে মিথ্যা বলার মতোই একটি জঘন্য কাজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এর ভয়াবহ পরিণতির কথা বলা হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন: «مَا آمَنَ بِي مَنْ بَاتَ شَبْعَانَ، وَجَارُهُ جَائِعٌ إِلَى جَنْبِهِ وَهُوَ يَعْلَمُ {"সে ব্যক্তি মুমিন নয় যে পেট পুরে খায় আর তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে।"}  (আল-আদাব আল-মুফরাদ, হাদিস নং ১১২)
যদিও সরাসরি চুরির কথা বলা হয়নি, তবে এই হাদিস অন্যের কষ্টের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা দেখানোর গুরুত্ব তুলে ধরে। চুরি অন্যের হক নষ্ট করে এবং তাদের কষ্ট দেয়।

৪. চুরির কারণ ও তার সমাধান (১৫ মিনিট):

কাউন্সিলর শিশুদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণভাবে চুরির পেছনের কারণগুলো নিয়ে আলোচনা করবেন। যেমন:

অভাব বা প্রয়োজন।
লোভ বা অন্যের জিনিসের প্রতি আকর্ষণ।
খারাপ সঙ্গ।
আবেগের বশে বা না বুঝে করা।
অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা।

এরপর কুরআন ও হাদিসের আলোকে এই কারণগুলোর সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনা করবেন:

অভাব ও প্রয়োজন: ধৈর্য ধারণ করা, আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া এবং সাধ্যমতো হালাল উপায়ে উপার্জনের চেষ্টা করা। অন্যের কাছে সাহায্য চাওয়ার মানসিকতা তৈরি করা (যদি প্রয়োজন হয়)।
লোভ ও অন্যের জিনিসের প্রতি আকর্ষণ: নিজের যা আছে তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকা এবং অন্যের জিনিসের প্রতি লোভ না করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি দোয়া: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى {"আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা আল-হুদা ওয়াত-তুকা ওয়াল-আফাফা ওয়াল-গিনা।"} (অর্থ: "হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে হেদায়েত, তাকওয়া (আল্লাহভীতি), পবিত্রতা ও প্রাচুর্য কামনা করি।") - এই দোয়া বেশি বেশি পাঠ করার অভ্যাস করা।
খারাপ সঙ্গ: খারাপ সঙ্গ ত্যাগ করা এবং ভালো ও ধার্মিক বন্ধুদের সাথে মেশা।
আবেগের বশে বা না বুঝে করা: নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শেখা এবং যেকোনো কাজ করার আগে তার পরিণতি সম্পর্কে চিন্তা করা।
অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা: ভালো কাজের মাধ্যমে অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করা। নিজেদের প্রতিভা ও সক্ষমতা বিকাশের মাধ্যমে সম্মান অর্জন করা।

৫. অনুশোচনা ও সৎ পথে ফিরে আসার গুরুত্ব (৫ মিনিট):

কাউন্সিলর শিশুদের বোঝাবেন যে ভুল করা স্বাভাবিক, কিন্তু সেই ভুলের জন্য অনুতপ্ত হওয়া এবং তা শুধরানোর চেষ্টা করা জরুরি।
তাওবার গুরুত্ব সম্পর্কে বলবেন এবং আল্লাহ তাআলার ক্ষমাশীলতার কথা উল্লেখ করবেন।
চুরি করা জিনিসের মালিকের কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং সম্ভব হলে তার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলবেন।
ভবিষ্যতে আর কখনো চুরি না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করার জন্য উৎসাহিত করবেন।

৬. দোয়া ও শুভকামনা (৫ মিনিট):

কাউন্সিলর শিশুদের সৎ পথে জীবন যাপন করার এবং চুরি করার মতো খারাপ অভ্যাস থেকে দূরে থাকার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন।
তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনা করবেন এবং যেকোনো প্রয়োজনে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেবেন।
সবশেষে, কাউন্সিলর শিশুদের ধন্যবাদ জানাবেন এবং তাদের কাছ থেকে বিদায় নেবেন।

কাউন্সিলরের জন্য কিছু টিপস:

শিশুদের সাথে সহানুভূতিশীল ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করুন। তাদের তিরস্কার না করে বুঝিয়ে বলুন।
তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করুন এবং তাদের বিশ্বাস অর্জন করুন।
তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবং তাদের সমস্যাগুলো বোঝার চেষ্টা করুন।
কুরআন ও হাদিসের উদাহরণ দেওয়ার সময় সহজ ও বোধগম্য ভাষা ব্যবহার করুন।
বাস্তব জীবনের উদাহরণ ও শিক্ষামূলক গল্প ব্যবহার করে আলোচনাকে আকর্ষণীয় করে তুলুন।
তাদের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য ধৈর্য ধরুন এবং নিয়মিত ফলো-আপ করুন।
প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা অভিজ্ঞ কারো সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না।

এই কাঠামোটি অনুসরণ করে আপনি ডিআইএসএস চাইল্ড হোমের শিশুদের চুরি রোধে কুরআন ও হাদিসের আলোকে একটি কার্যকর নৈতিক শিক্ষা কাউন্সিলিং সেশন পরিচালনা করতে পারেন। আল্লাহ আপনাদের প্রচেষ্টা কবুল করুন।

প্রস্তুতকারক:
......................................
জনাব মোঃ আশ্রাফুল ইসলাম
সিনিয়র ইথিক্স এডুকেশন টিচার
ডিআইএসএস চাইল্ড হোম

জ্ঞান অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলমানের (নারী ও পুরুষ) উপর ফরজ । জ্ঞানের শহর হলেন হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) আর সেই শহরের দরজা হলেন হজরত আলী (রাঃ) । জ্ঞান ব্যতীত কর্ম অর্থহীন আবার কর্ম ব্যতীত জ্ঞান অর্থহীন। জ্ঞানী হও তবে অহংকারী হইও না, ইবাদত কর তবে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে করোনা ।