Author Topic: সেই কঠোর হাতের স্নেহ  (Read 39 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

ashraful.diss

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 467
  • জ্ঞানী হও তবে অহংকারী হইও না
    • View Profile
    • Email
সেই কঠোর হাতের স্নেহ
« on: August 25, 2025, 11:21:16 PM »
সেই কঠোর হাতের স্নেহ

বারিধারা মাদ্রাসার সবুজ চত্বরে পা রাখতেই আমার স্মৃতিরা ভিড় করে আসে। নাহুমীর ক্লাসের সেই দিনগুলো, কঠিন সবক আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টির এক শিক্ষকের মুখ – হোসাইন আহমেদ। নামটা মনে পড়তেই একটা চাপা অস্বস্তি যেন বুকের ভেতর মোচড় দেয়। তিনি ছিলেন রাশভারী, ক্লাসে ঢুকলেই পিনপতন নীরবতা নেমে আসত। আমাদের পড়াতেন সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া।

একদিন ক্লাসে এসেই হুকুম দিলেন, "সিরাত শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মুখস্থ শুনাও।" বুক ধুকপুক করছিল, তবুও সাহস করে দাঁড়ালাম। গড়গড় করে অনেকটা অংশ শুনিয়ে গেলাম। কিন্তু এক কঠিন অধ্যায়ে এসে তালগোল পাকিয়ে গেল। একটি শব্দও আর মনে পড়ছে না।

সাথে সাথেই গর্জে উঠলেন হোসাইন আহমেদ, "বের হও ক্লাস থেকে!" মুহূর্তের মধ্যে যেন আকাশ ভেঙে পড়ল আমার মাথায়। শুধু বের করেই দিলেন না, দু'কানে হাত দিয়ে সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকার শাস্তিও দিলেন। তীব্র রোদ্দুরে দাঁড়িয়ে কান দুটো টনটন করছিল, চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, এই বুঝি আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন শাস্তি।

অথচ আজ, সেই হোসাইন আহমেদ আর নেই। কিন্তু যতবার বারিধারা মাদ্রাসায় যাই, আমার পা যেন আপনাআপনি তার পুরোনো ঘরের দিকে চলে যায়। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ নীরবে থাকি। ভেতরে উনার স্মৃতিগুলো আজও জীবন্ত।

আশ্চর্য লাগে, এত শাসনের পরেও কেন আমি সেই শিক্ষককে এত ভালোবাসি? কেন প্রতিবার মাদ্রাসায় গিয়ে উনার সাথে দেখা করার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে? কেন উনার জন্য আজও আমার অন্তর থেকে দোয়া বের হয়?

এর উত্তর আমি বহুবার খুঁজেছি। ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছি, সেই কঠিন হাতের আড়ালে লুকিয়ে ছিল এক স্নেহপূর্ণ হৃদয়। হোসাইন আহমেদ কখনো নিজের স্বার্থে আমাদের শাসন করতেন না। তার প্রতিটি ধমক, প্রতিটি শাস্তি ছিল আমাদের ভালোর জন্য। তিনি চাইতেন আমরা জ্ঞান অর্জন করি, সত্যের পথে অবিচল থাকি। সেই দিনের কান ধরে সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকার শাস্তি হয়তো আমার স্মৃতিতে গভীর দাগ কেটেছিল, কিন্তু একইসাথে বুঝিয়েছিল, শিক্ষকের শাসন কতটা কঠোর হতে পারে।

উনার সেই কঠিন নিয়মনিষ্ঠা, জ্ঞানের প্রতি গভীর অনুরাগ, ছাত্রদের ভবিষ্যতের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম – এই সবকিছুই ধীরে ধীরে আমার হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিল। আমি বুঝতে পেরেছিলাম, আপাতদৃষ্টিতে রাগী মনে হলেও, আমার সেই শিক্ষক আসলে ছিলেন একজন নিবেদিত প্রাণ। তিনি চেয়েছিলেন তাঁর ছাত্ররা যেন সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে।

তাই আজ যখন সেই পুরোনো ক্লাসরুমের সামনে দাঁড়াই, আমার চোখে পানি আসে। সেই কান্নার কারণ ভয় নয়, বরং গভীর ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার। হোসাইন আহমেদ হয়তো আর ইহলোকে নেই, কিন্তু তাঁর Ensenanzas, তাঁর কঠোর স্নেহ আমার জীবনে আজও এক অমূল্য সম্পদ। আমি বিশ্বাস করি, আমার মতো আরও অনেক ছাত্রের হৃদয়ে তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন – একজন কঠোর, কিন্তু পরম হিতাকাঙ্ক্ষী শিক্ষক হিসেবে।

জ্ঞান অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলমানের (নারী ও পুরুষ) উপর ফরজ । জ্ঞানের শহর হলেন হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) আর সেই শহরের দরজা হলেন হজরত আলী (রাঃ) । জ্ঞান ব্যতীত কর্ম অর্থহীন আবার কর্ম ব্যতীত জ্ঞান অর্থহীন। জ্ঞানী হও তবে অহংকারী হইও না, ইবাদত কর তবে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে করোনা ।