Author Topic: সুবিধাবঞ্চিত শিশুর অধিকার  (Read 4285 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

Farhana Haque

  • Administrator
  • Newbie
  • *****
  • Posts: 48
  • Gender: Female
  • You will never have this day again! Make it count!
    • View Profile
    • Email

ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা, সব শিশুরই অন্তরে। তার মানে, আজকের শিশুই আগামী দিনের পিতা। আগামী দিনের, জাতির নেতা। প্রত্যেক জাতির নেতারা যেমন, তাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে নিজেদের দেশ এবং জাতিকে সম্মানের সঙ্গে তুলে ধরে। ভবিষ্যতে আমাদের দেশ এবং জাতিকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার দায়িত্ব আজকের শিশুদের ওপর।

শিশুর মধ্যে রয়েছে, সুপ্ত সম্ভাবনা যা সমাজ ও দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। যারা আগামীতে, বিশ্ব দরবারে আমাদের দেশকে মর্যাদার স্থানে নিয়ে যাবে, তারাই যদি খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থান, শিক্ষার অধিকারসহ প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে আমাদের দেশকে মর্যাদাসম্পন্ন অবস্থানে তুলে ধরবে কে বা কারা?

জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী ০-১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সকল মানবসন্তানই শিশু। বাংলাদেশ সরকারের শিশুনীতি অনুযায়ী ০-১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সকল মানবসন্তানকে শিশু বলা হয়েছে। এদেশের মোট জনসংখ্যার ৪৫ ভাগ শিশু, তন্মধ্যে ১৫ শতাংশ হচ্ছে সুবিধাবঞ্চিত শিশু। সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের সংখ্যার সঠিক কোন জরিপ না থাকলেও, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দশ লাখের অধিক পথশিশু আছ। যারা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। পরিপূর্ণ শিশু বিকাশ ও শিশু উন্নয়ন ব্যাহত হলে জাতি মেধাশূন্য নেতৃত্ব পাবে। থেমে যাবে জাতির অগ্রগতি। তাই সকল শিশুর সঠিক পরিচর্যা হওয়া জরুরি।

২০০৫ সালে সমাজসেবা অধিদফতরের এক গবেষণায় ৪১ শতাংশ শিশুর ঘুমানোর কোনো বিছানা নেই; ৪০ শতাংশ প্রতিদিন গোসল করতে পারে না; ৩৫ শতাংশ খোলা জায়গায় পায়খানা করে; ৮৪ শতাংশ শিশুর কোনো শীতবস্ত্র নেই; ৫৪ শতাংশ শিশুর অসুস্থতায় দেখার কেউ নেই; ৭৫ শতাংশ শিশু অসুস্থতায় ডাক্তার দেখাতে পারে না। মাদকাসক্তির চিত্র ভয়াবহ। শিশু অধিকার ফোরামের এক প্রতিবেদনে দেখা যায় ৮৫ ভাগ পথশিশু মাদকাসক্ত। ১৯ শতাংশ হেরোইন, ৪৪ শতাংশ শিশু ধূমপানে, ২৮ শতাংশ ট্যাবলেট, ৮ শতাংশ ইঞ্জেকশনে আসক্ত, ৮০ শতাংশ শিশু কাজ করে জীবন টিকিয়ে রাখতে; ২০ শতাংশ শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়; ৪৬ শতাংশ মেয়ে শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়; ১৪.৫ শতাংশ শিশু সার্বিকভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।

যারা জ্ঞানগরিমায় বড় হয়ে দেশকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার দায়িত্ব নেবে তাদের অনেকেরই নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই, তারা পাচ্ছে না তাদের মৌলিক অধিকার। অভিভাবকহীন পথশিশুদের রাত কাটাতে হয় লঞ্চ, ফেরিঘাট, ফুটপাত, রেলস্টেশন, ওভারব্রিজ অথবা খোলা আকাশের নিচে।

এ সকল শিশু দু’বেলা খাবারের টাকা জোগাতে, কেউ ফেরি করে ফুল বিক্রি করছে, কেউ চা বিক্রি করছে, কেউবা কুলি, শ্রমিক, রিকশাচালক বা কলকারখানায় নানা রকম কঠোর এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজ বেছে নিয়েছে। আবার অনেক শিশুকেই রাস্তাঘাটে দু’মুঠো খাবারের জন্য ভিক্ষা করতে দেখা যায়। অভিভাবকহীন এ শিশুদের দিয়ে অনেকেই করাচ্ছে ভয়ংকর অপরাধ কর্মকাণ্ড। সামান্য কিছু টাকা বা দু’বেলা খাবারের জন্য চুরি, ছিনতাই, গাড়িতে আগুন, বোমা মারা, মাদক চোরাচালানসহ নানা রকম অপরাধকর্মে জড়িয়ে যাচ্ছে শিশুরা।

শিক্ষা লাভের অধিকার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকার হলেও তাদের বইয়ের বদলে হাতে নিতে হচ্ছে ইট ভাঙার হাতুড়ি।

বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলায় রূপ দিতে হলে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার রক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশ শিশু আইন ’১৩-এর ৮৯ অনুচ্ছেদে ১৬টি ক্যাটাগরিতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুর কথা বলেছে। বিশ্ব শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০১৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে পথশিশু পুনর্বাসনের বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের শিশুরা কেন রাস্তায় ঘুরবে? একটা শিশুও রাস্তায় ঘুরবে না। একটা শিশুও এভাবে মানবেতর জীবনযাপন করবে না।’

এ লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সবাইকে একযোগে পথশিশুদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করার জন্য পরামর্শ দেন। ২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছাতে যাচ্ছে, একই সালে জাতিসংঘে শিশু অধিকার বাস্তবায়নবিষয়ক প্রতিবেদন জমা দেবে বাংলাদেশ।

শুধু অর্থনৈতিক দিক দিয়ে নয় বরং শিশু অধিকার রক্ষায় ও বাংলাদেশ উঁচু অবস্থানে অবস্থান সৃষ্টি করুক, আর তার জন্য প্রয়োজন সরকারের পাশাপাশি সকল দায়িত্বশীল নাগরিকের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। শিশুরা ফুলের মত, একটি ফুলও যেন পরিপূর্ণ বিকশিত হওয়ার পূর্বে ঝরে না যায় এবং তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়, সেই লক্ষ্যে সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে। অভিভাবকহীন পথশিশুদের সরকারিভাবে লালনপালন, সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য সম্পূর্ণ আবাসিক কিছু প্রতিষ্ঠান সকল শহরেই গড়ে তুলতে হবে।

সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি দাতা প্রতিষ্ঠান, এনজিও, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনসহ সকল স্তরের নাগরিককে এগিয়ে আসতে হবে। পথশিশু হয়ে জন্মানোর কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে এবং আর যেন কোনো শিশুকে পথশিশু হিসাবে পরিচয় বহন করতে না হয়, সে লক্ষ্যে সরকারিভাবে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও, দেশে এখনো অনেক পরিবার আছে যারা তাদের সন্তানের মৌলিক চাহিদা মেটাতে অক্ষম। গরিব এ সকল শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা বেতনে অধ্যয়ন এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জামা কাপড়, জুতা, স্কুল-ব্যাগ, ফ্রি টিফিনসহ অন্যান্য খরচ বাবদ অতিরিক্ত বরাদ্দ দিতে হবে।

শুধু সরকার নয় বরং প্রতিটি নাগরিককেই নিজ নিজ জায়গা থেকে গরিব অসহায় এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার রক্ষায়, করুণা হিসাবে নয় বরং কর্তব্য ভেবে এগিয়ে আসতে হবে। আজকের অবহেলিত শিশুদের পাশে সমাজের সকল স্তরের মানুষ এগিয়ে আসুন, এদের হাতটা শক্ত করে ধরুন, দেখবেন এই শিশুরাই একদিন স্টিভ জবস হয়ে উঠবে। এরাই একদিন বাংলাদেশকে বিশ্বের উঁচু মর্যাদায় নিয়ে যাবে। আজকের পথকলিরাই উপহার দেবে সোনার বাংলা।
কারো মত নয় আমরা হবো যার যার মত। প্রতিজন "আমি" হবো এক একটি আদর্শ। জীবন একটিই। সময় অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। নিজেকে প্রমান করার এবং ভালো কাজ করার এখনই সময়।