Author Topic: মাহে রমজানের ফজিলত, গুরুত্ব ও তাৎপর্য (১ ম পর  (Read 3079 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

ashraful.diss

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 386
  • জ্ঞানী হও তবে অহংকারী হইও না
    • View Profile
    • Email

মাহে রমজানের ফজিলত, গুরুত্ব ও তাৎপর্য (১ ম পর্ব)

সমস্ত প্রশংসা, শোকর, ছানা, হামদ সেই মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার যিনি রমজানকে শ্রেষ্ঠ মাস হিসেবে নির্ধারন করেছেন এবং সে সময় মু'মিন মুসলিমের প্রত্যেক ভাল কাজের প্রতিদান বৃদ্ধি করে দেয়ার সুসংবাদ দিয়েছেন। আহ! আমাদের সময়গুলো কতই না দ্রুত কেটে যাচ্ছে। চলন্ত মেঘমালার ন্যায় দিনগুলো গন্তব্যের দিকে ছুটে যাচ্ছে দূরন্ত গতিতে! বছর কতই না দ্রুত কেটে যাচ্ছে! আর আমরা জীবন চলার পথে বেখবর-অলস সময় কাটাচ্ছি! হায়, আমাদের চেতনা কবে ফিরে আসবে! আমরা কখন জাগব! আমাদের মধ্যে কম সংখ্যক লোক এমন আছেন যারা বাস্তবতা ও পরিণতি নিয়ে চিন্তা করছেন অথবা তার থেকে উপদেশ গ্রহণ করছেন। রমজানুল মোবারক আমাদের দ্বারে উপনীত। স্বাগতম প্রিয় মাহে রমজান!

আলহামদুলিল্লাহ। মানব জীবনের সংক্ষিপ্ত এবং নির্ধারিত বয়স ও অল্প সময়ের মধ্যে আল্লাহ তাআলা তার জন্য অধিক পরিমান সওয়াব লাভের জন্য ভাল কাজের কিছু মৌসুম রেখেছেন। তার জন্য স্থান এবং কালের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন কখনও কখনও। যে কাল ও স্থানের মাধ্যমে সে তার ত্রুটি বিচ্যুতির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে। সেসব বিশেষ মৌসুমের মধ্য থেকে অন্যতম একটি মৌসুম হল পবিত্র রমজান মাস।

আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ﴾ [البقرة:183].

হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।' -সূরা বাকারা, ১৮৩ আয়াত

রমজান মাসের আগমনে মুসলিমগণ আনন্দ প্রকাশ করে থাকেন। আনন্দ প্রকাশ করাই স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ততা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন :—

قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ (يونس: 58)

বল, এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়ায়। সুতরাং, এতে তারা আনন্দিত হোক। তারা যা সঞ্চয় করে এটা তার চেয়ে উত্তম। -সূরা ইউনুস : ৫৮

পার্থিব কোন সম্পদের সাথে আল্লাহর এ অনুগ্রহের তুলনা চলে না। করা হলে, তা হবে এক ধরনের অবাস্তব কল্পনা। যখন রমজানের আগমন হত তখন রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতিশয় আনন্দিত হতেন, তার সাহাবাদের বলতেন :—

أتاكم رمضان شهر مبارك

তোমাদের দ্বারে বরকতময় মাস রমজান এসেছে। এরপর তিনি এ মাসের কিছু ফজিলত বর্ণনা করে বলতেন :—

فرض الله عز وجل عليكم صيامه، تفتح فيه أبواب السماء، وتغلق فيه أبواب الجحيم، وتغل فيه مردة الشياطين، لله فيه ليلة خير من ألف شهر، من حرم خيرها فقد حرم. رواه النسائي

আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য সিয়াম পালন ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। অভিশপ্ত শয়তানকে বন্দি করা হয়। এ মাসে রয়েছে একটি রাত যা হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে মূলত সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল। -নাসায়ী

আমাদের কর্তব্য :

আল্লাহর এ অনুগ্রহের মূল্যায়ন করতে চেষ্টা করা, এ মাসের ফজিলত ও তাৎপর্য অনুধাবনে সচেষ্ট হওয়া ও ইবাদত-বন্দেগিসহ সকল কল্যাণকর কাজে নিয়োজিত থাকা।

রমজান মাসে মুমিন বান্দার উপরে শয়তানি প্রবৃত্তির আক্রমণ কম হয়, রাত দিনে মন নরম থাকে। একজন দেখা যায় তার গুনাহের জন্য ক্ষমা চাইছে, আর একজন আনুগত্যের তাওফীক প্রার্থনা করছে। তৃতীয়জনকে দেখা যায় আল্লাহর শাস্তি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছে, চতুর্থজন ভাল কাজের ফলাফল সুন্দরভাবে পাওয়ার আশা করছে, পঞ্চম জনকে দেখা যায় তার প্রয়োজনের জন্য প্রার্থনা করছে। তিনিই মহান যিনি তাদেরকে তাওফীক দেন। অনেক লোক এমন আছে যারা এ সমস্ত কাজ থেকে দুরে অবস্থান করছে।

রমজান মাসের ফজিলত:

রমজান মাস শক্তি অর্জন ও দানের মাস। এ মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম মক্কা বিজয় করেন। তখন তিনি এবং সমস্ত মুসলমান সিয়াম অবস্থায় ছিলেন। এ রমজানেই ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়ছিল। এ সমস্ত যুদ্ধে ইসলামের পতাকা সমুন্বত হয়েছিল। পক্ষান্তরে বিপথগামী ভ্রান্ত পৌত্তলিকদের পতাকা হয়েছিল অবনমিত। এ মাসে মুসলমানদের অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা এবং কুরবানি সংঘঠিত হয়েছে।

রমজানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম ও তাঁর সাহাবারা অধিক পরিমাণে শক্তি, সজিবতা এবং ইবাদতের জন্য ধৈর্য ধারণ করার উদ্যম অনুভব করতেন, তাইতো রমজান মাসকে সৎকাজ, ধৈর্য্য ও দানের মাস বলা হয়। রমজান দুর্বলতা, অলসতা, ঘুমানোর মাস নয়। ভীরুতা, কাপুরষতা এবং নির্জীবতারও সময় নয়। ইসলামের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, রমজান সত্যের আলোয় জেগে ওঠার শিক্ষা দেয়। কোন কোন সিয়াম পালনকারীকে হাত পা ছেড়ে দিয়ে, দিনের বেলায় ঘুমাতে, কাজ কম করতে দেখা যায়। এমন আচরণ সিয়ামের তাৎপর্য বিরোধী। সিয়ামের উদ্দেশ্যের সাথে এগুলো আদৌ যায় না।

পূর্বেকার মুসলমানগণ রমজান যাপন করতেন তাদের অন্তর এবং অনুভূতি দিয়ে। রমজান এলে তারা কষ্ট করতেন। ধৈর্য্যের সাথে দিন যাপন করতেন। আল্লাহর ভয় এবং পর্যবেক্ষণের কথা তাদের স্মরণ থাকত। সিয়াম নষ্ট হয় অথবা ত্রুটিযুক্ত হয় এমন সব কিছু থেকে তারা দুরে থাকতেন। খারাপ কথা বলতেন না, ভাল না বলতে পারলে নিরবতা পালন করতেন।

তারা রমজানের রাত্রি যপন করতেন সালাত, কুরআন তিলাওয়াত, আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের অনুসরণ করেই।

সিয়ামের উপকার অথবা ফজিলত অনেক। তা গণনা করে শেষ করা যাবে না। তবে খেলাধুলা ও রং তামাশায় মত্তব্যক্তিরা কিংবা অলস শ্রেণির লোকজন, যারা সারাদিন ঘুমিয়ে কাটায় এবং রাত্রে বাজারে ঘুরে বেড়ায় তারা রমজানের এসব ফজিলত থেকে বঞ্চিত থাকবে।

সিয়াম আগুন থেকে রক্ষাকারী ঢাল:

ইমাম আহমাদ রহ. তার কিতাবে জাবের রা. থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

{ إنما الصيام جنة، يستجنّ بها العبد من النار }.

সিয়াম প্রবৃত্তির তাড়না থেকে বাঁচার জন্য ঢাল। এর মাধ্যমে বান্দা আগুন থেকে মুক্তি পায়।

ইবনে মাসউদ রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

{يا معشر الشباب من استطاع الباءة فليتزوج، فإنه أغض للبصر وأحصن للفرج، ومن لم يستطع فعليه بالصوم، فإنه له وجاء } [أخرجه البخاري ومسلم].

হে যুবকেরা! যে সামর্থ রাখে সে যেন বিবাহ করে। কেননা, তা দৃষ্টিকে সংরক্ষণ করে এবং যৌনাঙ্গের হিফাজত করে। যে বিবাহের সামর্থ রাখে না সে যেন সিয়াম পালন করে। কেননা এটি তার জন্য সুরক্ষা। -বুখারী মুসলিম

সিয়াম জান্নাতের পথ:

ইমাম নাসাঈ রহ. আবু উমামা রা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল আমাকে এমন বিষয়ের নির্দেশ দেন যার মাধ্যমে আল্লাহ আমাকে প্রতিদান দেবেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলইহি অসাল্লাম বলেন:

{ عليك بالصيام فإنه لا مثل له }.

তুমি সিয়াম পালন কর। কেননা এর কোন তুলনা নেই।

জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে। সেখান দিয়ে শুধু সিয়াম পালনকারী প্রবেশ করবে। সাহল ইবনে সাআদ রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

{ إن في الجنة باباً يقال له: الريّان، يدخل منه الصائمون يوم القيامة، لا يدخل منه أحد غيرهم، يقال: أين الصائمون، فيقومون، لا يدخل منه أحد غيرهم، فإذا دخلوا أغلق، فلم يدخل منه أحد } [أخرجه البخاري ومسلم].

জান্নাতে একটি দরজা আছে যার নাম রাইয়ান। কিয়ামত দিবসে সেখান দিয়ে সিয়াম পালনকারী প্রবেশ করবে। সে দরজা দিয়ে অন্য কেহ প্রবেশ করবে না। বলা হবে: সিয়াম পলনকারী কোথায়? তারা দাঁড়াবে, তারা ছাড়া আর কেহ প্রবেশ করবে না। তারা প্রবেশ করার পর দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। আর কেহ সে স্থান দিয়ে প্রবেশ করবে না। -বুখারী মুসলিম, ১৮৯৬

সিয়াম পালনকারীর জন্য সিয়াম সুপারিশ করবে:

ইমাম আহমদ রহ. আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেন:

{ الصيام والقرآن يشفعان للعبد يوم القيامة، يقول الصيام: أي رب منعته الطعام والشهوات بالنهار فشفّعني فيه، ويقول القرآن: منعته النوم بالليل فشفّعني فيه، قال: فيشفعان }.

সিয়াম এবং কুরআন বান্দার জন্য কিয়ামত দিবসে সুপারিশকারী হবে, সিয়াম বলবে, হে প্রভু আমি তাকে দিনের বেলায় খাওয়া এবং প্রবৃত্তির তাড়না থেকে নিবৃত্ত রেখেছি, তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাত্রের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি, তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন, আল্লাহ তাআলা বলবেন: তাদের সুপারিশ গ্রহণ করা হল।

সিয়াম গুনাহের ক্ষমা এবং কাফফারা হিসাবে গৃহিত হয়:

কেননা ভাল কাজ অন্যায়কে মুছে দেয়। আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহ তাআ'লা আনহু রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

{ من صام رمضان إيماناً واحتساباً غفر له ما تقدم من ذنبه } [رواه البخاري ومسلم].

যে রমজানে ঈমান এবং এহতেসাবের সাথে সিয়াম পালন করবে, আল্লাহ তার পূর্বের গোনাহ মাফ করে দেবেন। -বুখারী মুসলিম


চলবে......
জ্ঞান অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলমানের (নারী ও পুরুষ) উপর ফরজ । জ্ঞানের শহর হলেন হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) আর সেই শহরের দরজা হলেন হজরত আলী (রাঃ) । জ্ঞান ব্যতীত কর্ম অর্থহীন আবার কর্ম ব্যতীত জ্ঞান অর্থহীন। জ্ঞানী হও তবে অহংকারী হইও না, ইবাদত কর তবে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে করোনা ।