Author Topic: সবকাজে ইখলাস ও নিয়তের পরিশুদ্ধতা  (Read 4705 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

ashraful.diss

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 386
  • জ্ঞানী হও তবে অহংকারী হইও না
    • View Profile
    • Email

সব কাজের প্রতিদান নিয়তের ওপর নির্ভরশীল

ইখলাস ও নিয়তের গুরুত্ব ইসলামে অপরিহার্য। নিয়ত ছাড়া কোনো আমলই মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

বিশুদ্ধ নিয়ত ইখলাস সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের হাদীসে সতর্ক করা হয়েছে। হাদীসের পাতা থেকে ইখলাসের কতোগুলো হাদীস তুলে ধরা হলো।

সবকাজে ইখলাস ও নিয়তের পরিশুদ্ধতা

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

عمر بن الخطاب رضي الله عنه على المنبر قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : ( إنما الأعمال بالنيات وإنما لكل امرىء ما نوى فمن كانت هجرته إلى دنيا يصيبها أو إلى امرأة ينكحها فهجرته إلى ما هاجر إليه) رواه البخاري والمسلم
 
অর্থ : ‘নিশ্চয় সমস্ত আমলের ফলাফল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং প্রত্যেক মানুষ (পরকালে) তাই পাবে যা সে নিয়ত করবে। যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তার রাসূলের উদ্দেশ্যে হিজরত করে, তার হিরজত আল্লাহ এবং তার রাসূলের উদ্দেশেই হবে। আর যে ব্যক্তি দুনিয়া হাসিলের কিংবা কোনো নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে হিজরত করে, তার হিজরত সেই উদ্দেশ্যেই গণ্য হবে যে উদ্দেশ্যে সে হিজরত করেছে।’ (বুখারি হাদিস নং ৫২)

এই হাদিসের সঙ্গে একটি ঘটনাও উল্লেখ করা হয় যে, যখন মুসলমানরা মক্কার কাফের সম্প্রদায়ের দেওয়া জুলুম নির্যাতন আর কষ্ট সহ্য করতে পারছিলো না, তখন মহান আল্লাহ তায়ালার হুকুমে হিজরত করে। সবার উদ্দেশ্য ছিল মদীনায় সহজভাবে মহান আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.) আনুগত্য করা যাবে তাই হিজরত করে মদীনায় গমন করেন। কিন্তু তাদের মাঝে একজন লোক এই কারণে হিজরত করে যে, হিজরতকারীদের মাঝে একজন মহিলা ছিল ওই মহিলাকে বিয়ে করার জন্য সকলের সঙ্গে হিজরত করে। এই কথা রাসূল (সা.) জানার পর তিনি বলেন- যে আল্লাহ ও তার রাসূলের উদ্দেশ্যে হিজরত করেছে তার হিজরত সেই হিসাবেই গন্য হবে, অর্থাৎ তার উত্তম বিনিময় পাবে। আর যে দুনিয়া লাভ বা কোনো নারীকে বিয়ে করা হিজরত করেছে, তার হিজরতও সেই ভাবেই গ্রহণ করা হবে; পরকালে তার কোনো উত্তম বিনিময় থাকবেনা।

ইখলাস ব্যতীত কোনো কিছুই কবুল হয় না

হজরত আবু উমামা রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

عن أبي أمامة رضي الله عنه قال، قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إن الله لا يقبل من العمل إلا ما كان له خالصا وابتغي به وجهه، رواه النسائي

অর্থ : ‘আল্লাহ তায়ালা সমস্ত আমলের মধ্যে শুধু সেই আমলটুকুই কবুল করেন, যা ইখলাসের সঙ্গে শুধুমাত্র তাঁর সন্তুষ্টির জন্য-ই করা হয়।’ (নাসাই শরীফ হাদীস নং ৩১৪২।)

এখানে আরবি ব্যাকরণিক যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে তা ওই সমস্ত স্থানে ব্যবহার করা হয়, সেখানে সীমাবদ্ধতার প্রয়োজন। একমাত্র তার আমলই কবুল হবে যে ‘ইখলাস’ এর সঙ্গে করেছে। আমল কবুল হওয়ার বিষয়টি ইখলাসের সঙ্গে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

মানুষ প্রচুর আমল করতে পারে, কিন্তু কবুলের প্রশ্ন আসবে ওই সমস্ত আমলে যেখানে ইখলাস আছে। যে আমলে ইখলাস নেই তাতে কবুলেই প্রশ্নই আসবে না। কারণ কবুল শুধুমাত্র ওই আমলের সঙ্গে খাস করে দেওয়া হয়েছে যেখানে ইখলাসের ভারি উপস্থিতি আছে।

বুখারির এক হাদিসে আছে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কাল কিয়ামতের ময়দানে একজন শহীদ দাতা ও আলেমকে তাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাস করবেন। তখন এদের সবাই নিজ নিজ আমল দান-সদকা আল্লাহর রাস্তায় কোরবানসহ যতপ্রকার আমল আছে সব উল্লেখ করবে, আর বলবে হে পরওয়াদেগার এই আমলগুলো করেছি। তখন মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত বলবেন তোমরা মিথ্যা বলছো। তোমরা ওই সব আমল করেছিল দুনিয়ায় খ্যতি অর্জন করার জন্য, সুনাম আর প্রসিদ্ধির জন্য, লোক মুখে তোমাদের নাম প্রচার হওয়ার জন্য। তোমরা তা দুনিয়ায় পেয়েছো। এরপর আল্লাহ তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষিপ করার জন্য ফেরেস্তাদের ডাকবেন। ফেরেস্তারা তাদেরকে পায়ে শিকল পয়ে টেনে হেঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে।

মহান আল্লাহ শুধু মানুষের অন্তর দেখেন অন্য কিছু নয়

একজন মানুষ জানে না অপর মানুষের আমলগুলোর কি উদ্দেশ্য। কারণ আমলগুলোর উদ্দেশ্য অন্তরে লুক্কায়িত থাকে। মহান আল্লাহ সেই অন্তরই দেখেন। সেই কথা রাসূল (সা.) তার এক হাদিসে বলছেন। হজরত আবু হুরায়রা রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

عن أبي هريرة رضي الله عنه قال، قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إن الله لا ينظر إلي صوركم وأموالكم ولكن ينظر إلى قلوبكم وأعمالكم رواه المسلم

 অর্থ : ‘আল্লাহ তোমাদের বাহ্যিক আকার আকৃতি এবং ধন-সম্পত্তির দিকে দৃষ্টিপাত করেন না, বরং তিনি দৃষ্টিপাত করেন শুধু তোমাদের অন্তর আমলের দিকে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৫৪৩)

এই হাদিস দ্বারা বুঝা গেল কোন হুজুর কোন আমল করলো, কোন ইমামসাব কোন আমল করলো, কোন রিক্সা চালক কোন আমল করলো কিভাবে করলো, তা ধর্তব্য নয়, ধর্তব্য হলো কার অন্তরের অবস্থা কি? কার আমলের নিয়ত রয়েছে মহান আল্লাহর জন্য, কার আমলের নিয়ত রয়েছে অন্য কারো জন্য।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকেই আরো একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

عن أبي هريرة رضي الله عنه قال، قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إنما يبعث الناس على نياتهم، رواه ابن ماجة

অর্থ : ‘নিশ্চয়ই (কিয়ামত দিবসে) মানুষেদেরকে উঠানো হবে তাদের ইখলাসের ওপর।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস  নং ৪২২৯)

অন্যকে দেখানো উদ্দেশ্যে আমল করা শিরক

হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

عن عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال، قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إن يسير الرياء شرك، رواه ابن ماجة

অর্থ : ‘রিয়া (লোক দেখানো উদ্দেশ্যে আমল করা)- এর সামান্য পরিমাণও ‘শিরক’। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪৫৫)

আমলের মাঝে যদি মহান আল্লাহ ব্যতীত কারো নিয়ত থাকে তাহলে তা হবে শিরক ও কুফরির নামান্তর। শিরক কাকে বলে? শিরক বলে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক মনে করা, বা আল্লাহর গুণে কাউকে গুনান্বিত করা। যে অন্যকে দেখানোর জন্য আমল করলো সে শিরক করলো অর্থ সে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করলো। কত বড় হুমকির কথা। আর শিরকের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘শিরক আল্লাহ কখনো মাফ করেন না।’ (সূরা: নিসা)

শুধু আমল নয় লোক দেখানো উদ্দেশ্যে দান করাও শিরক। হজরত শাদ্দাদ ইবনে আউস রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

عن شداد بن أوس رضي الله عنه قال، قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : من تصدق يرائي فقد أشرك، رواه أحمد

অর্থ : ‘যে ব্যক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে দান খায়রাত করলো সে শিরক করলো।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ৪৫৫)।

শুধু দান করাও নয়, লোক দেখানো উদ্দেশ্যে কাপড় পরিধান করাও শিরকের অন্তর্ভুক্ত, যার কারণে মহান আল্লাহ তাতে কিয়ামতের দিন আগুন ধরিয়ে দিবেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

عن عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال، قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : من لبس ثوب شهرة في الدنيا، ألبسه الله ثوب مذلة يوم القيامة ثم ألهب فيه نارا، رواه ابن ماجة

অর্থ: ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে রিয়া ও শাহওয়াতের পোশাক পরিধান করবে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তাকে অপমানের পোশাক পরিধান করাবেন, অতপর তাতে আগুন ধরিয়ে দিবেন।’ (সুনানে ইবনে মাযাহ, হাদিস নং ৩৬০৭)।

ইখলাসের সঙ্গে আমল করার ফজিলত

হজরত আবু হুরায়রা রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

عن أبي هريرة رضي الله عنه قال، قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ( مَا قَالَ عَبْدٌ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ قَطُّ مُخْلِصًا إِلاَّ فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ السَّمَاءِ

অর্থ : ‘কোনো ব্যক্তি যদি ইখলাসের সঙ্গে কালিমা لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ পড়ে তবে তার জন্য আকাশের দরোজাসমূহ খুলে দেয়া হয়।’ (তিরমিযি, হাদিস: ৬৮)

হজরত সাওবান রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

عن ثوبان رضي الله عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم : طوبى للمخلصين اولئك مصابيح الدجى، تتجلى عنهم كل فتنة ظلماء

অর্থ : ‘তোমরা মুখলিসদেরকে (ইখলাসের সঙ্গে আমলকারীদেরকে) সুসংবাদ দাও। কেননা তারা অন্ধকারে প্রদীপস্বরূপ। তাদের দ্বারা সকল ফেৎনার অন্ধকার দূর হযে যায়।’ (বায়হাকী, হাদিস নং ৩৪৩)

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ যেন আমাদেরকে আমাদের সব কাজ ইখলাসের সঙ্গে করার তৌফিক দান করেন। আল্লাহুম্মা আমিন।
জ্ঞান অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলমানের (নারী ও পুরুষ) উপর ফরজ । জ্ঞানের শহর হলেন হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) আর সেই শহরের দরজা হলেন হজরত আলী (রাঃ) । জ্ঞান ব্যতীত কর্ম অর্থহীন আবার কর্ম ব্যতীত জ্ঞান অর্থহীন। জ্ঞানী হও তবে অহংকারী হইও না, ইবাদত কর তবে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে করোনা ।