বাংলাদেশে করোনায় সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে পথশিশুরা৷ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বা মাস্ক ব্যবহারের সঙ্গতি তাদের নেই৷ খাদ্য ও কাজের সংকটেও আছে তারা৷
ঢাকায় পথশিশুদের মাত্র দুটি সরকারি শেল্টার হোম আছে৷ তাতে সব মিলিয়ে তিনশ' শিশু থাকতে পারে৷ আর বেসরকারি উদ্যোগে কিছু শেল্টার হোম আছে, যেখানে পথশিশুরা রাতে থাকতে পারে৷ কোনো খাবার দেয়া হয় না৷ এর বাইরে আহসানিয়া মিশনের উদ্যোগে পঞ্চগড়ে ‘আহসানিয়া মিশন শিশু নগরী' পথ শিশুদের জন্য সবচেয়ে বড় আশ্রয় কেন্দ্র৷ সেখানে ২৫০ জন শিশু থাকে৷ তাদের খাবার, শিক্ষা, চিকিৎসা সব কিছুই দেয়া হয় বলে জানায় আহসানিয়া মিশন৷ এটি জার্মানির কিন্ডারনটহিল্ফে'র সহায়তায় পরিচালিত হয়৷
কিন্তু সব মিলিয়ে কয়েকশ' শিশুর জন্য কয়েকটি শেল্টার হোম থাকলেও বাংলাদেশে পথশিশু আছে ১৩ লাখ৷ ঢাকায়ই আছে সাড়ে চার লাখ৷ এই শিশুরা করোনার মধ্যেও পথেই থাকছে৷ দলবদ্ধভাবে থাকছে৷ খোলা রাস্তা, বাসস্ট্যান্ড, রেলওয়ে স্টেশন বা খোলা জায়গায় ঘুমাচ্ছে৷ কেউ করোনায় আক্রান্ত হলেও বুঝতে পারছে না৷ চিকিৎসা তো অনেক পরের কথা৷
স্ট্রিট চিলড্রেন অ্যাক্টিভিস্টস নেটওয়ার্ক (স্ক্যান) করোনার শুরুর দিকে ৪৫২ জন পথশিশুর মধ্যে একটি জরিপ করে৷ ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বেছে নেয়া এই শিশুদের জরিপ থেকে জানা যায়, তাদের কেউই মাস্ক ব্যবহার করে না৷ তারা মনে করে, করোনা ধনীদের রোগ, এটা গরিবদের হয় না৷ করোনা সম্পর্কে অসচেতন এই শিশুরা নিয়মিত খাবারও পায় না৷ অনেকে খাবার বিতরণ করলেও পথ শিশুরা তা সবসময় পায় না৷ তাদের কাজ নেই৷ তাদের কেউ কোভিড আক্রান্ত কিনা তা-ও তারা বুঝতে পারে না৷ তারা মনে করে, সর্দি হয়েছে৷
বাংলাদেশে পথশিশুদের জন্য আলাদা কোনো চিকিৎসার উদ্যোগও নেই৷ তাদের পক্ষে সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা নেয়াও ভীষণ কঠিন৷ অন্যদিকে সরকারি বা বেসরকারি কোনো পর্যায়েই পথ শিশুদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য রাখা হয়নি৷ নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় বলছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে কোনো পথ শিশু মারা গেছে এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই৷
আহসানিয়া মিশনের সহকারী পরিচালক ও স্ট্রিট চিলড্রেন অ্যাক্টিভিস্টস নেটওয়ার্ক-এর সভাপতি জাহাঙ্গীর নাকির বলেন, ‘‘আমরা সরকারের কাছে করোনার সময় এই পথশিশুদের খাদ্য, চিকিৎসা এবং আশ্রয়ের একটি প্রস্তাব দিয়েছিলাম৷ আমরা বলেছিলাম, সরকার চাইলে আমরা এটা সমন্বয় করতে পারি৷ সরকার খাদ্য দিক৷ আমরা যে শিশুদের পরিবার আছে তাদের পরিবারে ফিরিয়ে দেয়ার উদ্যোগের কথাও বলেছিলাম৷ কিন্তু সরকারের এ নিয়ে কোনো প্রজেক্ট না থাকায় সেটা করা যায়নি৷’’
তিনি বলেন, ‘‘এখন পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এই করোনায় পথ শিশুদের, কাজ নেই, খাবার নেই, থাকার জায়গা নেই৷ তারা চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে৷’’
নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পথ শিশুদের নিয়ে আলাদা একটি প্রকল্প আছে৷ প্রকল্প পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, ‘‘করোনায় সমস্যা হয়েছে, আমরা আমাদের শেল্টার হোমে বাইরের শিশুদের নিতে পারিনি৷ আর ভেতরের শিশুদের বাইরে যেতে দিতে পারিনি৷ তবে এখন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে বাইরের শিশুদের নেয়া শুরু হয়েছে৷ শেল্টারে থাকা শিশুদের চিকিৎসার ব্যবস্থাও আছে৷’’
তবে এই সময়ে আরো অনেক শিশু রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে৷ যাদের বাবা-মায়ের এখন কাজ নেই, তারা ঘর থেকে খাবারের জন্য বের হচ্ছে৷ আবার যে শিশুরা আগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করত তাদেরও কাজ নেই৷ তারাও এখন পথশিশু৷ আবুল হোসেন দাবি করেন, সরকার চেষ্টা করছে, অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে যাতে কোনো শিশুই নজরের বাইরে না থাকে৷ করোনায় সময় এসব শিশুর অন্তত এক বেলা খাবার দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলেও দাবি তার৷
তিনি মনে করেন, ‘‘১০ লাখেরও বেশি পথশিশুর কথা বলা হলেও এখন তাদের সংখ্যা কমছে৷ আর স্কুল খুলে গেলে আরো কমে যাবে৷ কারণ, স্কুলে এখন খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়৷’’
এদিকে করোনায় পথশিশুদের এই খারাপ অবস্থা নিয়ে এই পর্যায়ে ভাবতে শুরু করেছে সরকার৷ নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় পথশিশুদের নিয়ে কাজ করে এরকম সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এই মাসেই একটি বৈঠক করেছে৷
https://www.dw.com/…/%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8B…/a-54730381