« on: May 24, 2025, 03:46:47 AM »
দারিদ্র্য বিমোচনে "জীবিকা" চাঁদপুর: একটি আশার আলো
আজ আমি আপনাদের সাথে ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশন পরিচালিত চাঁদপুর জেলার একটি অলাভজনক সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প “জীবিকা” নিয়ে আলোচনা করতে এসেছি। এই প্রকল্পের মূল ভিত্তি হলো একটি মহৎ উদ্দেশ্য – দারিদ্র্য বিমোচন। আসুন, আমরা জেনে নিই কীভাবে “জীবিকা” চাঁদপুর এই গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জীবনে আশার আলো দেখাচ্ছে।
দারিদ্র্য একটি জটিল সমস্যা যা কেবল একটি পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থাকেই নয়, বরং তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আত্মমর্যাদা এবং সামগ্রিক জীবনযাত্রার মানকেও প্রভাবিত করে। চাঁদপুর জেলার বহু মানুষ এই কঠিন বাস্তবতার শিকার। ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশন এই অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে “জীবিকা” চাঁদপুর প্রকল্পের মাধ্যমে।
“জীবিকা” শুধুমাত্র ত্রাণ বিতরণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর মূল দর্শন হলো দরিদ্র পরিবারগুলোকে দীর্ঘমেয়াদী স্বনির্ভরতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রকল্পটি বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে:
অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন: “জীবিকা” দরিদ্র পরিবারগুলোকে ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করার জন্য সহজ শর্তে ঋণ এবং ক্ষেত্রবিশেষে অনুদান প্রদান করে। এই আর্থিক সহায়তা তাদের নিজস্ব উদ্যোগে আয় রোজগারের সুযোগ তৈরি করে, যা দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র ভাঙতে সহায়ক।
দক্ষতা উন্নয়ন: কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি এবং আয় উপার্জনের নতুন পথ উন্মোচনের জন্য “জীবিকা” স্থানীয় যুবসমাজ ও নারীদের বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করে। সেলাই, হস্তশিল্প, কৃষিভিত্তিক আধুনিক কৌশল, কম্পিউটার জ্ঞান – এমন বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা দক্ষ workforce হিসেবে গড়ে ওঠে এবং নিজেদের জীবিকা নির্বাহের সক্ষমতা অর্জন করে।
স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সহায়তা: দারিদ্র্যের কারণে অনেক পরিবার মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। “জীবিকা” নিয়মিত স্বাস্থ্য ক্যাম্প আয়োজনের মাধ্যমে দরিদ্রদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি, দরিদ্র পরিবারের শিশুদের শিক্ষাগ্রহণে উৎসাহিত করা হয় এবং তাদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। শিক্ষা দারিদ্র্যের শেকল ভাঙার অন্যতম শক্তিশালী হাতিয়ার – এই বিশ্বাস নিয়ে “জীবিকা” কাজ করে।
সচেতনতা বৃদ্ধি: দারিদ্র্যের মূল কারণ এবং এর প্রভাব সম্পর্কে স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করাও “জীবিকা”র একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বাল্যবিবাহ, নারী নির্যাতন এবং অন্যান্য সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে একটি সুস্থ ও প্রগতিশীল সমাজ গঠনে প্রকল্পটি ভূমিকা রাখে।
“জীবিকা” চাঁদপুর প্রকল্পের প্রতিটি কার্যক্রম দরিদ্র মানুষের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে এবং তাদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। যখন একটি পরিবার অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়, তখন তাদের সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখার সাহস জন্মায়। যখন একজন নারী দক্ষতা অর্জন করে নিজের পায়ে দাঁড়ায়, তখন সমাজে তার অবস্থান আরও দৃঢ় হয়। “জীবিকা” ঠিক এই পরিবর্তনগুলোই চাঁদপুর জেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনে নিয়ে আসছে।
আমরা যারা তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে আছি, তাদের সকলেরই উচিত “জীবিকা”র মতো মহতী উদ্যোগের পাশে দাঁড়ানো। আপনার সামান্য সহযোগিতা একটি দরিদ্র পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে এবং তাদের দারিদ্র্যের অন্ধকার থেকে আলোর পথে আনতে সহায়ক হতে পারে।
আসুন, আমরা সকলে মিলে “জীবিকা” চাঁদপুর প্রকল্পের সাফল্য কামনা করি এবং দারিদ্র্যমুক্ত একটি সমাজ গঠনে যার যার স্থান থেকে অবদান রাখি।

Logged
জ্ঞান অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলমানের (নারী ও পুরুষ) উপর ফরজ । জ্ঞানের শহর হলেন হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) আর সেই শহরের দরজা হলেন হজরত আলী (রাঃ) । জ্ঞান ব্যতীত কর্ম অর্থহীন আবার কর্ম ব্যতীত জ্ঞান অর্থহীন। জ্ঞানী হও তবে অহংকারী হইও না, ইবাদত কর তবে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে করোনা ।